বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় টানা দুদিনের বৃষ্টিতে কৃষি আবাদে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এর মধ্যে বিশেষ করে গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাতে মাত্র চার ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতে কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। ভুট্টা, ধান, আলুসহ শীতকালীন রবি শস্যের খেত জলমগ্ন হয়ে পড়ায় চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন কৃষকরা।
টানা বৃষ্টিতে এমন অপ্রত্যাশিত ক্ষতি হওয়ায় প্রান্তিক কৃষকরা চরম হতাশায় ভুগছেন। শনিবার সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায়, টানা বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলার কুসুম্বি, খানপুর, গাড়িদহ ও মির্জাপুর ইউনিয়নের নিচু এলাকার কৃষিজমি। নিবিড় চাষাবাদের জন্য পরিচিত এই অঞ্চলগুলোতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই উপজেলায় সব মিলিয়ে প্রায় ৩১ হাজার কৃষি আবাদ হয়। চলতি মৌসুমে শেরপুর উপজেলা মোট ২২ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত শুধু শেরপুর উপজেলাতেই ২৫০ হেক্টর জমির ধান নুয়ে পড়েছে।
ফসলের ক্ষতির হিসাব নিরূপণের কাজ চলছে। খানপুর, মির্জাপুর ও সুঘাট এলাকার ভুট্টা চাষি সোলাইমান, বাদশা, জানিয়েছেন, জমিতে ভুট্টা গাছ পরিপুষ্ট হওয়ার পথে ছিল, কিন্তু আকস্মিক বৃষ্টিতে গাছগুলো গোড়া নরম হয়ে মাটিতে নুয়ে পড়েছে। এতে ফলন আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাবে এবং অনেক ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
আব্দুল হালিম খোকন, মামুন ও ফরিদুল ইসলাম জানান, ধান চাষে এমনিতেই লোকশান, তারপর ধান পুক্ত হয়েছে এর মধ্যে পড়ে গেলো। ফলন ১০০% কমে যাবে। এতে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি। আগাম শীতকালীন সবজির খেতও পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কুসুম্বি ইউনিয়নের কৃষক ওমর ফারুক ও শফিকুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, টানা বৃষ্টির পর শুক্রবার রাতে যে বৃষ্টি হলো, আগাম আলুর খেতগুলো বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। তাতে আর কিছু বাকি রইল না। আমার সবজি আর আলুর খেত এখন পুকুর। রোপণ করা আলুবীজ নষ্ট হবে।
এছাড়াও মরিচ গাছগুলোর ক্ষতি হয়েছে। সরকারি সাহায্য ছাড়া ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নিম্নচাপের কারণে সৃষ্ট এই টানা বৃষ্টিতে উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার (ভারপ্রাপ্ত) জানান, বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপের প্রভাবে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে, তাতে নিচু জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত ধান, ভুট্টা, আলু ও সবজি খেতের ক্ষতি হয়েছে।
আমরা কৃষকদের দ্রুত জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের পরামর্শ দিচ্ছি এবং ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি সহায়তার আওতায় আনার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর