দীর্ঘ সাত ছয় মাস বন্ধ থাকার পর বহুল আলোচিত রাষ্ট্রায়ত্ত চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) মাত্র ১২ ঘণ্টা উৎপাদন চালু রাখতে পারল না।
শনিবার (১ নভেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে বহু প্রতীক্ষার পর কারখানার উৎপাদন শুরু হলেও, রবিবার (১ নভেম্বর) বিকেল সোয়া ৩টার মধ্যেই সেটি আবারও বন্ধ হয়ে যায়।
সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, “যান্ত্রিক সমস্যার কারণে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। আমি বর্তমানে প্ল্যান্টে আছি, পরে বিস্তারিত জানাব।”
কারখানাটি পূর্ণমাত্রায় চালু থাকলে দৈনিক ১ হাজার ১০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন সম্ভব, যা বর্তমান বাজারদরে দৈনিক প্রায় ৪ কোটি ১৮ লাখ টাকার সমান। সাড়ে ছয় মাসের উৎপাদন বন্ধ থাকার ফলে প্রায় সাড়ে ৮০০ কোটি টাকার সার উৎপাদন হয়নি।
কারখানার সূত্রে জানা গেছে, সিইউএফএল চালু হওয়ার আগে গ্যাস ও যান্ত্রিক সমস্যার কারণে দীর্ঘ সময় বন্ধ থেকেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কারখানাটি মাত্র পাঁচ দিন চালু ছিল। এ ছাড়া যান্ত্রিক ত্রুটি ও গ্যাস সংকটের কারণে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত উৎপাদন বন্ধ থাকলেও মাঝে মাঝে সীমিত উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। তবে এ বছরের ৩ জানুয়ারি আবারও যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে দীর্ঘ সময় লাগে কারখানাটি চালু করতে। এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত আড়াইটার সময় কারখানা চালু হলেও ১১ এপ্রিল গ্যাসসংকটে আবারও উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ১৯ অক্টোবর থেকে আবার গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে কারখানাটিতে। এরপর কারখানাটি চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়।
১৯৮৭ সালের ২৯ অক্টোবর জাপানের কারিগরি সহায়তায় কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে আনোয়ারা উপজেলার রাঙ্গাদিয়ায় সার কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করে সরকার। কারখানা চালু হওয়ার সময় দৈনিক ১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন এবং বার্ষিক ৫ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদনক্ষমতা ছিল। তবে বর্তমানে দৈনিক ১ হাজার ১০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন করতে সক্ষম কারখানাটি। পাশাপাশি দৈনিক ৮০০ মেট্রিক টন এবং বার্ষিক ৩ লাখ ১০ মেট্রিক টন অ্যামোনিয়া উৎপাদন করতে পারে সিইউএফএল।
সিইউএফএল সূত্র আরও জানায়, পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনের জন্য সম্পূর্ণ গ্যাসনির্ভর এ কারখানায় দৈনিক ৪৮ থেকে ৫২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন। গ্যাসসংকট ও যান্ত্রিক নানা সমস্যা থাকায় গত অর্থবছর কারখানাটিতে প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদিত হয়েছে। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা বছরে প্রায় ২৬ লাখ মেট্রিক টন। তার মধ্যে সিইউএফএলসহ বিসিআইসির অন্যান্য কারখানা প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন করে। অবশিষ্ট ১৬ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া উচ্চমূল্যে আমদানি করতে হয়।
কেজিডিসিএলের ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী শফিউল আজম খান বলেন, “আমরা গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে কোনো বাধা দিইনি। সরকারিভাবে কারখানা চালু বা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়, যা চাহিদার ওপর নির্ভর করে।”
দেশের কৃষিনির্ভর অর্থনীতির জন্য এই কারখানার পুনরায় বন্ধ হয়ে পড়া এখন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বলে মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর