বাংলাদেশের স্বনামখ্যাত ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও গণস্বাস্থ্য হোমিওর প্রতিষ্ঠাতা ডা. এস এম সারওয়ার আলম চান নির্বাচনের আগে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে। দেশব্যাপী কর্মসূচির আংশিক ঘোষণা উপলক্ষে বৃহত্তর সুন্নি জোটের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদেরকে ডা: এস এম সারওয়ার বলেন নির্বাচনের আগে সরকারকে অবশ্যই লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সময়ে নির্বাচন আয়োজন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাথে একই দিনে গণভোট এর আয়োজন এবং রাষ্ট্রীয় যে কোন বৈঠকে সকল নিবন্ধিত দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্য আজ ৩ নভেম্বর, ২০২৫ইং জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকার জহুর হোসেন চৌধুরী হল ২য় তলায় বৃহত্তর সুন্নী জোটের কর্মসূচি ঘোষনা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, অধ্যক্ষ স উ ম আবদুস সামাদ, মহাসচিব বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। অধ্যক্ষ আল্লামা জয়নুল আবেদীন জুবাইর, মহাসচিব ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ। মোহাম্মদ আসলাম হোসাইন, অতিরিক্ত মহাসচিব বাংলাদেশ সুপ্রিম পাটি। এবং স্বনামখ্যাত ক্যান্সার গবেষক ডা: এস এম সারওয়ার আলম।
সূন্নী মতাদর্শী ৩ টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর সুন্নী জোট এর উদ্যোগে আগত আজকের এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা লিখিত বক্তব্য বলেন, ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আগামী ফেব্রুয়ারি ‘২৬ এর প্রথমার্ধে নির্বাচন সম্পন্ন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তবে এখনো নির্বাচনের চুড়ান্ত তারিখ ঘোষণা না করাতে জনমনে বিবিধ প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। উল্লেখ্য যে, বিগত সরকারের নির্বাচনগুলো বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য ছিল। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে যে তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, এর সবকটিই ছিল বিতর্কিত। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের ঘোষনা জনমনে ব্যাপক আগ্রহ ও প্রত্যাশা তৈরি করেছে। এ ঘোষণার মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে মর্মে মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখছে। সুতরাং আসন্ন এ নির্বাচনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাকে কোনভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। এতদসত্ত্বেও রাজনৈতিক অঙ্গনে নির্বাচন নিয়ে একপ্রকার ধোঁয়াশা দৃশ্যমান। কেননা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অদ্যাবধি পারস্পরিক কোনরূপ ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি, বরং নির্বাচন নিয়ে স্পষ্টতঃ বিভাজন পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেমন- কেউ পি আর পদ্ধতি, কেউ বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী এবং কেউ নভেম্বরে গণভোট চাই, আবার কেউ নির্বাচনের দিন একই সাথে গণভোটের পক্ষে । সর্বোপরি গত ১৫ বছরের এক দলীয় শাসক গোষ্ঠী ও তাদের অংশীদারদের বাদ দিলেও অন্য সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে সরকার নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ঐক্যবদ্ধ করতে পারে নি। জাতির মধ্যে বিভাজন রেখে একটি সর্বজন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না।
জুলাই হত্যার বিচার, প্রশাসনিক সংস্কার, দুর্নীতি দমন কমিশন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, পুলিশ বাহিনীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে মৌলিক সংস্কার এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজনের অঙ্গিকারাবদ্ধ হয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করলেও এক্ষেত্রে কার্যত বাস্তব কোন সফলতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বরঞ্চ ক্রমাগত রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ইতোমধ্যেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১৫ মাস পূর্ণ হয়েছে। এ দীর্ঘ সময়ে সারাদেশে ‘মব' সৃষ্টি করে অসংখ্য মানুষ পিটিয়ে হত্যা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মব সৃষ্টি করে কয়েক হাজার শিক্ষককে হেনস্থা পূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা, শতাধিক মাজারে হামলা, অগ্নিসংযোগ, মসজিদ- মাদরাসায় হামলার মতো ইত্যাকার গর্হিত কর্মকাণ্ডের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে অবলী- লায়।
এহেন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বৃহত্তর সুন্নী জোট এর নিম্নোক্ত দাবীসমূহ উপস্থাপন করছে।
১। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সময়ে নির্বাচন আয়োজন করা।
২। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাথে একই দিনে গণভোট এর আয়োজন করা।
৩। রাষ্ট্রীয় যে কোন বৈঠকে সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
৪। নির্বাচন এর পূর্বে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে কম্বিং অপারেশন পরিচালনা করা।
৫। দুর্নীতিবাজ, কালো টাকার মালিক, অর্থ পাচারকারী ও আদালতে দণ্ডিতদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা ।
৬। জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার সুনিশ্চিত করা ।
৭। দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে পার্বত্য জেলাগুলোকে বিদেশি মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ।
৮। চট্টগ্রাম বন্দরের লাভজনক টার্মিনালগুলোকে ৩০ বছরের জন্য বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়া এবং দেশীয় লুটেরাদের হাত থেকে রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ।
৯ । জাতির সার্বভৌমত্বের স্বার্থে সন্ত্রাসী আরকান আর্মির প্রয়োজনে কোনপ্রকার করিডোর না দেয়া।
১০। মাজার, খানকা, দরবার শরীফ ও ধর্মীয় নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা ।
১১। মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা রক্ষা ও মহান স্বাধীনতার ইতিহাস সংরক্ষণ করা।
১২। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
১৩। নির্বাচনকালীন প্রশাসনকে দলনিরপেক্ষভাবে পুনর্গঠন করা।
উপরোক্ত দাবি-দাওয়াসমূহ বাস্তবায়নের নিমিত্তে জনমত গঠনের লক্ষ্যে বৃহত্তর সুন্নী জোট সারাদেশে নিম্নোক্ত কর্মসূচি ঘোষনা করছে।
১। ১৫ নভেম্বর '২৫ চট্টগ্রামে জনসভা
২। ২২ নভেম্বর'২৫ নারায়ণগঞ্জে জনসভা
৩। ২৯ নভেম্বর '২৫ কুমিল্লায় জনসভা।
৪। ৬ ডিসেম্বর ‘২৫ হবিগঞ্জে বিশাল জনসভা
৫। ২০ ডিসেম্বর '২৫ ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল মহাসমাবেশ এর কর্মসূচি পালন করবে।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর