গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি বাড়িতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্র ও সরঞ্জামসহ সাতজনকে আটক করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের অভিযোগ তুলেছে সেনাবাহিনী।
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সকালে গাজীপুর মহানগরের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এই অভিযোগ করেন ১৪ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফর রহমান।
অভিযানে অস্ত্র ও সরঞ্জাম উদ্ধার: বুধবার (৫ নভেম্বর) গভীর রাতে গাজীপুর আর্মি ক্যাম্পের তত্ত্বাবধানে এবং পুলিশ ও র্যাবের সহায়তায় শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে গাজীপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. এনামুল হক মোল্লা (৫০) সহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি ম্যাগাজিন, চার রাউন্ড গুলি, চারটি ওয়াকিটকি সেট, চারটি লাঠি (বেটন), দুটি ইলেকট্রিক শক ডিভাইস, একটি হ্যামার নেল গান ও একটি ধারালো চাকু উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতার অন্যরা হলেন, শওকত মীর (৪৫), জাহিদ মিয়া (৪০), মোস্তফা কামাল (৩২), সিদ্দিকুর রহমান (৩৪), বুলবুল মিয়া (৩৫) ও তোফাজ্জল হোসেন (৪৫)।
গ্রেফতারকৃত এনামুল হক মোল্লা সম্পর্কে সেনা বাহিনীর বক্তব্য:
লে. কর্নেল লুৎফর রহমান জানান, গত ৬ নভেম্বর ভোর রাতে গাজীপুর আর্মি ক্যাম্পের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পুলিশ ও র্যা বের প্রত্যক্ষ সহায়তায় শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নে একটি যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং এলাকাবাসীর সহায়তায় গাজীপুর জেলার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী তথা শ্রীপুর এলাকার ত্রাস, অবৈধ বালু উত্তোলনকারী এবং ডাকাত দলের সর্দার এনামুল হক মোল্লাকে তার নিজ বাসার পানির ট্যাংক এর ভিতর থেকে গ্রেফতার করা হয়। একই সাথে তার আরও ৬ জন সহযোগীকেও যৌথ বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, অভিযান চলাকালীন তল্লাশীর সময়ে তার কাছ থেকে ২ টি বিদেশী পিস্তল, ৩ টি ম্যাগজিন, ৪ রাউন্ড গুলি, ২ টি ইলেক্ট্রিক শক মেশিন, ৪ টি ওয়াকিটকি সেট এবং ২ টি লাইসেন্স বিহীন মোটরসাইকেলসহ বেশকিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এনামুল হক মোল্লার বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় বেশ কয়েকটি ডাকাতি এবং অস্ত্র মামলা চলমান রয়েছে এবং কিছু কিছু মামলায় তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্টও জারী করা হয়েছে।
অভিযান শেষে উদ্ধারকৃত অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সরঞ্জামসহ সাতজনকে শ্রীপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
অপপ্রচারের অভিযোগ ও সতর্কবার্তা: ব্রিফিংয়ে সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল লুৎফর রহমান বলেন, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় একটি মহল এনামুল হক মোল্লার গ্রেফতারের বিষয়টিকে রাজনৈতিক রূপ দেয়াসহ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ভিন্ন খাতে অপপ্রচার করার চেষ্টা করছে।
এসময় তিনি আরো বলেন, সেনাবাহিনী কোন ব্যক্তি বা দলের পক্ষে বা বিপক্ষে নয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময় ন্যায়ের পক্ষে এবং অন্যায়ের বিপক্ষে, সেনাবাহিনী দেশের পক্ষে। যারা এ ব্যাপারে অপপ্রচার করছে এবং অপপ্রচারের প্রশ্রয় দিচ্ছে, আমরা মনে করি এদেরও কোন না কোন ভাবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। সে বিষয়টিকেও আমরা গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছি এবং প্রমাণ স্বাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
অভিযানের প্রেক্ষাপট ও স্থানীয় তথ্য: সেনা কর্মকর্তা আরো জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ৫ নভেম্বর রাত দেড়টা থেকে ভোর সোয়া পাঁচটা পর্যন্ত এনামুল হক মোল্লার বরামা গ্রামের নিজ বাড়িতে অভিযান চলে। অভিযানের নেতৃত্ব দেন মেজর খন্দকার মহিউদ্দিন আলমগীর (৪৬ ডিভ লোকেটিং, গাজীপুর সেনা ক্যাম্প)। অভিযানের সময় এনামুল হক মোল্লা বাড়ির ছাদের পানির ট্যাংকের ভেতর লুকিয়ে ছিলেন—তল্লাশির সময় তাকে সেখান থেকে বের করে আটক করা হয়।
তিনি বলেন, অভিযানের সময় আপনারা (সাংবাদিকরা) অনেকেই এই অপারেশনের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন এবং সকলেই অবগত আছেন যে, কিছু সার্থান্বেষী মহল তার বাসা থেকে ব্যক্তিগত কিছু সরঞ্জামাদি হারানো গিয়েছে বলে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। এরুপ মিথ্যা অপবাদ ছড়ানোর সাথেও যারা সংশ্লিষ্ট তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পুলিশের বক্তব্য : শ্রীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল বারিক বলেন,“যৌথ বাহিনীর অভিযানে দুটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরে আদালতের আদেশে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।”
গ্রেফতারকৃত এনামুল হক মোল্লার পরিচয়: স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এনামুল হক মোল্লা বরমী ইউনিয়নের বরকুল গ্রামের মৃত আহাদ আলীর ছেলে। এনামুল হক মোল্লা ১৫ বছর সৌদিতে ছিলেন। গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নানা অপরাধে জড়িয়ে দেশ ছাড়েন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর দেশে ফেরেন তিনি। এর পর থেকে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। গাজীপুর-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চেয়ে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় ফেস্টুন ও ব্যানার টানিয়েছেন। গত সোমবার বিএনপির প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর তিনি ফেসবুক এ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গাজীপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন।
সেনা বাহিনীর আহ্বান: ব্রিফিংয়ে সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল লুৎফর রহমান এলাকাবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, যৌথবাহিনীকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য পাশাপাশি এলাকাবাসীকে এরূপ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে যারা যাবা জড়িত রয়েছে তাদের ব্যাপারেও তথ্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য আহবান জানান। তারা যেখানেই লুকিয়ে থাকুন একইভাবে তাদেরকেও খুজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।
সেনা কর্মকর্তা আশ্বাস দিয়ে বলেন, গাজীপুর জেলার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখব এবং জনগণের সহায়তায় অপরাধীদের আইনের আওতায় আনব। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পূর্বের মতো সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান সামনের দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর