তিন দফা দাবিতে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। যার ফলে সারাদেশের প্রায় ৬৫ হাজার বিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ হয়ে পড়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলছেন, দাবি পূরণে তাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এমন পরিস্থিতির পেছনে দায়ী করে স্বরাষ্ট্র এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি জানিয়েছেন তারা। শিক্ষকেরা বলছেন, ১০ গ্রেড-শতভাগ পদোন্নতি ছাড়া ছাড়বেন না শহীদ মিনার।
রোববার (৯ নভেম্বর) রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দ্বিতীয় দিনের অবস্থান কর্মসূচী থেকে এ দাবি জানান আন্দোলনরত শিক্ষকেরা। এইদিন বিকেলে মুখে কালো কাপড়ে মুখ বেঁধে দাবি আদায়ে কথা বলায় পুলিশি হামলার প্রতিবাদে চুপ কর্মসূচি পালন করেন তারা। আন্দোলনরত শিক্ষকদের দাবি, তাদের অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন। এর আগে বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটের কাফনের কাপড় হাতে শিক্ষকরা শপথ নেন, দশম গ্রেড এবং শতভাগ পদোন্নতি ছাড়া ফিরে যাবেন না।
দুপুরে আটক পাঁচ শিক্ষককে মুক্তি দিলেও দাবি পূরণে অবস্থান কর্মসূচি ও লাগাতার কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কাশেম।
তিনি বলেন, ‘সারা বাংলাদেশে সকাল ৯টা থেকে লাগাতার কর্মবিরতি চলছে এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমাদের এই অবস্থান কর্মসূচি দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত চলবে। আমরা পেশাজীবি সংগঠন, আমরা কোন রাজনৈতিক সংগঠন নয়। আর এই কর্মসূচি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দা ফেলতে না, বরং এই কর্মসূচি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য দেয়া হয়েছে। নিরীহ শিক্ষকদের উপর যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছি, ইতোমধ্যে আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি তুলেছি। একই সঙ্গে গণশিক্ষা উপদেষ্টা আমাদের দাবিকে অযৌক্তিক বলেছেন, তাই আমরা তারও পদত্যাগের দাবি তুলেছে। আমরা তো নিজেরা রাস্তা নামিনি, বাধ্য হয়ে আমাদের রাস্তায় নামতে হয়েছে। আমাদের বলা হচ্ছে, আমরা শিক্ষার্থীদের জিম্মি করছি কি-না, আমি বলব, আমাদের শিক্ষার্থীদের আমাদের বিভাগ জিম্মি করছে। আমরা দশম গ্রেড ছাড়া এখান থেকে সরছি না।’
কর্মসূচী অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে আবুল কাশেম বলেন, ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে, একই সঙ্গে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অবস্থান কর্মসূচি চলমান থাকবে।’
আন্দোলনরত শিক্ষকদের ৩ দফা দাবিগুলো হলো, ১০ম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, ১০ বছর ও ১৬ বছরপূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড সমস্যার সমাধান ও শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি।
এর আগে রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্য ও শিক্ষক সায়েদুর রহমান আকন্দের জিম্মায় শাহবাগ থানায় আটক পাঁচ শিক্ষককে ছেড়ে দেয়া হয়। মুক্তি পাওয়া ওই শিক্ষকরা হলেন- জয়পুরহাটের মো. মাহবুবর রহমান, একই জেলার মো. আব্দুল কাদের, পটুয়াখালীর মো. নরুল ইসলাম লিটন, ঢাকার মো. শরীফুল ইসলাম ও সাতক্ষীরা জেলার মো. সোহেল রানা।
এক জিম্মানামার প্রেক্ষিতে দীর্ঘ ২০ ঘণ্টা পর আটক ও শিক্ষকদের ছেড়ে দেয়া হয়। জিম্মাদার শিক্ষক সায়েদুর রহমান আকন্দ জিম্মানামায় বলেন, ‘থানা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় নিম্ন বর্নিত সাক্ষীদের উপস্থিতিতে আমার নিজ জিম্মায় গ্রহণ করিলাম।’
গত শনিবার (৮ নভেম্বর) সকাল থেকে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামে চারটি সংগঠনের ব্যানারে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। কর্মসূচির এক পর্যায়ে বিকেল সাড়ে ৩টায় শাহবাগে পূর্বনির্ধারিত ‘কলম সমর্পণ’ কর্মসূচি পালন করতে পদযাত্রা নিয়ে শাহবাগ থানার সামনে এলে পুলিশি বাঁধার সম্মুখীন হয়। একপর্যায়ে শিক্ষকেরা ব্যারিকেড ভাঙ্গার চেষ্টা করলে জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এসময় ওই পাঁচ শিক্ষককে আটক করে থানায় নেয় পুলিশ।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর