জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে নিরাপত্তা শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আগামী ১৩ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, রায়কে ঘিরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের গুজব, উস্কানিমূলক প্রচার ও ভুয়া বার্তা। দলটির পক্ষ থেকে লকডাউন, গণসমাবেশ, সরকারি স্থাপনায় হামলা ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগের আহ্বানও দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এই উত্তেজনা আরও বেড়েছে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশের পর। নিষিদ্ধ ঘোষিত দলটির এই নেতা ভিডিওতে বলেন, “১৩ নভেম্বরকে সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধ হোন। আমরা ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা লকডাউন দিয়েছি। ১০ থেকে ১২ নভেম্বর দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল হবে, আর ১৩ নভেম্বর যেন রাজধানী জয় বাংলার দখলে থাকে।”
নানকের ভিডিও প্রকাশের পর থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী কর্মীরা ঝটিকা মিছিল করছে। সূত্র জানায়, তাদের মূল লক্ষ্য শেখ হাসিনার মামলার রায় বাধাগ্রস্ত করা এবং জাতীয় নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত করা। এজন্য সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীদের ঢাকায় জড়ো হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, এখনো কোনো নির্দিষ্ট হুমকি না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যগুলো গুরুত্ব সহকারে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে গোয়েন্দা নজরদারি ও আভিযানিক কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। প্রতিটি ক্রাইম ডিভিশনে বাড়ানো হয়েছে টহল ও বিশেষ অভিযান টিম। নিষিদ্ধ দলের সক্রিয় সদস্যদের শনাক্তে প্রযুক্তিগত সহায়তা নিচ্ছে পুলিশ। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর পাশাপাশি মাঠে থাকবে অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীও। সোমবার (১১ নভেম্বর) থেকে শুরু হতে যাচ্ছে বড় আকারের অভিযান।
সাইবার ইউনিটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং গুজব বা উস্কানিমূলক পোস্ট দাতাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। তবে অনেক আইডি দেশের বাইরে থেকে পরিচালিত হওয়ায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হচ্ছে।
এদিকে, নিরাপত্তা জোরদারে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) গত শনিবার (৮ নভেম্বর) বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত রাজধানীর ১৪২টি স্থানে একযোগে মহড়া চালিয়েছে। এতে প্রায় সাত হাজার পুলিশ সদস্য অংশ নেন। মহড়ায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা, সচিবালয়, হাইকোর্ট, বঙ্গভবন ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ সব গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বিডি টুয়েন্টিফোরকে বলেন, যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা মোকাবেলা করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বদা প্রস্তুত আছে। আওয়ামী লীগের পক্ষে এই মুহূর্তে বড় কিছু করা সম্ভব নয়। তবে ১৩ নভেম্বর ঘিরে ফেসবুক এবং ইউটিউব থেকে আমরা অনেক ধরনের তথ্য পাচ্ছি। এসব তথ্যকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, দলটির শীর্ষ নেত্রীর রায়কে ঘিরে সহিংসতা বা বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা জরুরি।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর