ধান নদী খাল, এই তিনে বরিশাল। আর এই প্রাচীন জনপদে দেখার মতো অনেক ঐতিহাসিক জায়গা রয়েছে। তবে দিন দিন স্থান গুলোর সুন্দর্য নষ্ঠ হচ্ছে।
যেমন বরিশাল শহরের আকাশের দিকে তাকালে এখন দেখা যায় না নীল আকাশ, দেখা যায় শুধু তারের জঙ্গল। রাস্তাঘাট, ফুটপাত, অলিগলি থেকে শুরু করে প্রধান সড়ক পর্যন্ত সর্বত্র ঝুলছে টেলিফোন, ইন্টারনেট, ক্যাবল টিভি, বিদ্যুৎর অসংখ্য তার।
এই ঝুলন্ত তারগুলো শুধু শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করছে না, বরং প্রতিনিয়ত জীবননাশের ভয়ও তৈরি করছে। বরিশাল নগরীর আনাচে-কানাচে ডিশ ও ইন্টারনেটের তারের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সেগুলো দখল করে নিচ্ছে বিদ্যুতের খুঁটি। প্রতিটি এলাকাতেই এমন দৃশ্য চোখে পড়ছে।
বর্ষাকালে যখন শহরের অনেক সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়, তখন এই তারগুলোর মাধ্যমে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দূঘটনা থেকে শুরু করে মৃত্যুরও ঘটনা ঘটে থাকে।
কখনো ফুটপাথে হাঁটতে গিয়ে, কখনো দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। তবে অব্যবস্থাপনার এই দায় নিচ্ছে না কেউ। নগরীর যে কোনো এলাকায় গেলেই চোখে পড়ে বিশৃঙ্খলভাবে ঝুলন্ত তারের জট।
প্রান কেন্দ্র সদর, গীর্জ্জা মহল্লা, চকবাজার, ফকির বাড়ি রোর্ড, হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা সহ অধিকাংশ জায়গাতেই একই চিত্র। কোথাও বিদ্যুতের তারের সঙ্গে ঝুলছে ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভির তার, আবার কোথাও কাটা তার রাস্তায় পড়ে আছে। এবং কি জুলছে। তবে বর্তমানে কত বরিশালের কতটি ইন্টারন্টে সংযোগ রয়েছে তার হিসাব নেই কারো কাছে। ইন্টারনেট ও ক্যাবল অপারেটর, যারা নিজেদের সুবিধামতো বিদ্যুতের খুঁটিতে তার ঝুলিয়ে রেখেছে। এতে তারের ওজন বেড়ে গিয়ে অনেক খুঁটি হেলে পড়ছে, কোথাও আবার ভেঙে পড়ছে পুরো তারের জট।
বরিশালে শহরের রাস্তায় চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে, অগ্নিকান্ড বা বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা ঘটছে, আবার শহরের নান্দনিক সৌন্দর্যও সম্পূর্ণ দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বরিশালের সতেচন মহল জানিয়েছেন, বিদ্যুতের খুটির সঙ্গে তার ঝুলে থাকার সংস্কৃতি নতুন নয়।
১৯৯০-এর দশকে যখন ক্যাবল টিভি ও ইন্টারনেট সংযোগ শুরু হওয়া থেকেই বেসরকারি অপারেটররা সহজ পথে বিদ্যুতের খুঁটি ব্যবহার করে থাকে। এতে দিন দিন নগরীর সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে ভয়াবহভাবে। যা দেখার কেউ নেই বলে চলে।
বরিশাল বিটিসিএল কার্যলয়ের তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল বিভাগে ১৭ হাজার ৯০ টি ও জেলায় ৫ হাজার গ্রাহক তাদের ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করতে পারবে। যার ক্যাপাসিটি তাদের রয়েছে। কিন্তু সেখানে তবে বর্তমানে চালু আছে বিভাগে ৭ হাজার ৫শ’ ৮৬ টি, বরিশাল জেলায় রয়েছে ২ হাজার ৩শ’ ৩৮ টি সংযোগ।
প্রধান সড়কগুলোতে সাজানো আলোকসজ্জা, ফুটপাতের গাছপালা, বিলবোর্ড-সবই যেন হারিয়ে গেছে তারের আড়ালে। বরিশালে নতুন কেউ এলেই প্রথম চোখে পড়ে এই বিশৃঙ্খলা। নগর বিশেষজ্ঞদের মতে, শহরের চেহারা বদলে দিতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন তারের শৃঙ্খলা।
তারের জট শুধু নান্দনিক সমস্যা নয়, এটি সরাসরি প্রাণহানির ঝুঁকিও তৈরি করছে। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, বৈদ্যুতিক অগ্নিকান্ড ঘটে তারের জট বা শর্ট সার্কিটের কারণে। অনেক সময় বিদ্যুৎ ও ক্যাবল তার একসঙ্গে বাঁধা থাকায় একটি লাইনে শর্ট হলে সেটি ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়।
বরিশালের একটি বেসরকারী ইন্টারনেট কোম্পানীর ইঞ্জিনিয়ার বলেন, তারের জট শুধু দেখার জন্যই বিশ্রী নয়, এটি বিদ্যুৎ ব্যবস্থার অদক্ষতার প্রতীক। উন্নত দেশে প্রতিটি সংস্থা নিজস্ব ক্যাবল সিস্টেমের জন্য আলাদা পাইপলাইন ব্যবহার করে। ঢাকা ও বরিশালে তা না থাকায় এই বিপর্যয়। অবিলম্বে সমন্বিত ক্যাবল ব্যবস্থাপনা চালু করা প্রয়োজন। পাশাপশি ক্যাবল
বরিশাল বিটিসিএল কার্যলয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক মোঃ শামীম ফকির বলেন, বরিশালে বিদ্যুতের খুঁটিতে তাকালে দেখা যা যে কতটি তার ঝুলছে। বৈদ্যুতিক ঝুঁকি ও অগ্নিকান্ডের ঘটনার পিছনে বেশি ভাগই হলো তার সট সার্কিটের কারন। দ্রুত প্রয়োজন এগুলো অপসারন করে শৃঙ্খলা আওতায় ফিরিয়ে আনা।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) অহিদ মুরাদ বলেন, বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ইন্টারনেটের জুলছে, এটা নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর ধরে এরা এটা করে যাচ্ছে। তবে বিষয়টি নিয়ে আমি প্রশাসক স্যার এবং প্রধান নিবার্হী স্যারের সাথে কথা বলবো অপসারন করার জন্য।
বরিশাল ওজোপাডিকো বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুল কুমার স্বর্ণকার বলেন, ‘অনুমতি না নিয়েই বছরের পর বছর ধরে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ইন্টারনেটের লাইন টানছেন মালিকরা।
এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। এ ছাড়া কোনো এলাকায় বিদ্যুতের তার ঝুলন্ত বা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে এমন তথ্য আমরা পেয়ে থাকলে দ্রুত সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
সচেতন মহলের দাবি সময় এসেছে, বরিশাল নগর কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ সংস্থা ও বেসরকারি অপারেটর সবাইকে একসঙ্গে বসে পরিকল্পনা করার-যাতে আকাশে ঝুলে না থাকে মৃত্যু ও বিশৃঙ্খলার এই জাল, বরং দৃশ্যমান হয় এক সুন্দর, নিরাপদ ও সুশৃঙ্খলা শহর বরিশাল।
শহরের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন তারের শৃঙ্খলা বা অপসারন। না হলে বৈদ্যুতিক ঝুঁকি ও অগ্নিকান্ডের আশঙ্কা রয়েছে। তারের জট শুধু নান্দনিক সমস্যা নয়, এটি বৈদ্যুতিক তারের সাথে ক্যাবল একসঙ্গে বাঁধা থাকায় নগরবাসীর জন্য ঝুঁকিপূর্ন। তাই দ্রুত এগুলো অপসারন করে শৃঙ্খলা ভাবে রাখা হোক এমনটাই দাবি সকলের।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর