টেকনো, ইনফিনিক্স ও আইটেল ব্র্যান্ডের বিরুদ্ধে সাম্প্রতি আন্দোলন করেছে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা সিটি, মোতালেব প্লাজাসহ দেশের বেশ কয়েকটি মার্কেটের মোবাইল ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি বাংলাদেশের মোবাইল মার্কেটে একচেটিয়া দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে।
তারা জানান, মার্কেটে যেন শুধুই টেকনো, ইনফিনিক্স ও আইটেল ব্র্যান্ডের বাজার গড়ে উঠে, এজন্য এখন সক্রিয় একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তাদের পণ্য অচল ও নিম্নমানের, আর এসব সিন্ডিকেটের পেছনে প্রধান ইন্ধনদাতা হিসেবে কাজ করছে এর মাদার কোম্পানিটি।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশে টেকনো, ইনফিনিক্স ও আইটেল এই তিনটি ব্র্যান্ড সম্পূর্ণ বৈধ বিনিয়োগকারী এবং তারা দেশের প্রযুক্তি খাতে ইতিবাচক অবদান রাখছে। বাস্তবে, যারা এই ব্র্যান্ডগুলোর বিরুদ্ধে বয়কটের আহ্বান জানাচ্ছে, তারা হলো অবৈধ ও আনঅফিসিয়াল মোবাইল ব্যবসায়ীরা, যাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে আঘাত লেগেছে।
এমন কয়েকটি মোবাইল বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের পেজ থেকে আন্দোলনের ভিডিও আপলোড করতে দেখা গেছে। সেসব ভিডিওর মন্তব্যের ঘরে বেশিরভাগই আন্দোলনকারীদের বিপক্ষেই নানান নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন সেসব পেজের অনুসারীরা।
এমএনএইচ রেদোয়ান নামের এক মন্তব্যকারী লিখেন, সহ্য হইতেছে না আর কি! তাদের আনঅফিশিয়ালের বাটপারি ব্যবসা বন্ধ হইতেছে তাই তাদের আর ভালো লাগতেছে না।
তৌহিদুল ইসলাম মুক্তা লিখেন, এরা দেশে ইনভেস্ট করছে। ফ্যাক্টরি বানিয়েছে। আর আপনারা দেন টেক্স ফাঁকি আবার করেন অন্দোলন।
এছাড়া গ্রাহকদের অনেকে পক্ষে-বিপক্ষে অসংখ্য মন্তব্য দেখা যায়।
আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে আই স্মার্ট ইউ টেকনোলজি বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও রেজোয়ানুল হক বলেন, এটা একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। সরকার আনঅফিসিয়াল মোবাইল বন্ধের ব্যাপারে কাজ করছে এটা সরকারের কাজ। NEIR হলো একটি জাতীয় ডাটাবেইজ, যেখানে বৈধভাবে আমদানি বা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত প্রতিটি ফোনের IMEI নম্বর নিবন্ধিত থাকবে। কিন্তু যারা আনঅফিসিয়াল হ্যান্ডসেট বিক্রয় করে তারা আমাদের পেছনে লেগেছে। এটার সাথে আমার কোনো সম্পর্কই নেই।
তিনি আরও বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে অ্যাসোসিয়েশন এবং বিটিআরসিকে জানিয়েছি, এটা একটি জাতীয় প্রজেক্ট। এটা কোনো ব্যাক্তিগত কোম্পানির হয়ে আসতে পারে না। যেহেতু মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওনার্স অব বাংলাদেশ সহ-সভাপতি হিসেবে আছি, তাই আমিও মনে করি মোবাইল মার্কেটের শৃঙ্খলা আসা উচিত।
এর আগে মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওনার্স অব বাংলাদেশ (এমআইওবি) এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, দেশের মোবাইল ফোন বাজারের প্রায় ৬০ শতাংশই অবৈধভাবে আমদানি হওয়ায় বছরে সরকারের প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে।
এমআইওবির সহ-সভাপতি ও টেকনোর সিইও রেজোয়ানুল হক জানান, দেশে শতভাগ সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও অবৈধ আমদানির কারণে বাজারের চাহিদার মাত্র ৬০ শতাংশ উৎপাদন ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে এমআইওবি নেতারা বলেন, ‘বিশ্বের শীর্ষ মোবাইল ব্র্যান্ডগুলোর প্রায় সবক’টিই এখন দেশে উৎপাদন করছে। দেশের ৯০ শতাংশ চাহিদা দেশীয় কারখানা থেকেই মেটানো সম্ভব। কিন্তু অবৈধ মোবাইলের দাপটে স্থানীয় শিল্প পূর্ণ সক্ষমতা কাজে লাগাতে পারছে না। অবৈধ বেচাকেনায় স্থানীয় নির্মাতাদের বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
স্মার্ট টেকনোলজিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অনার ব্র্যান্ডের স্থানীয় উৎপাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আইন মেনে দেশে মোবাইল ব্যবসা করা এখন সহজ। এ খাতে নতুন বিনিয়োগ বাড়ছে, কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। দেশে উৎপাদন বাড়লেও আইফোনের বাজার এখনো সম্পূর্ণভাবে অবৈধ আমদানির ওপর নির্ভরশীল, যা বৈধ বাজারের ওপর বড় চাপ সৃষ্টি করছে।’
মূলত এই আলোচনার পর থেকেই অবৈধ ও আনঅফিসিয়াল মোবাইল বিক্রেতারা টেকনো, ইনফিনিক্স ও আইটেল ব্র্যান্ডের এই তিনটি অফিসিয়াল ব্রান্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এর সর্বশেষ খবর