কড়াইয়ে ফুটন্ত তেলে হাত দিয়ে নেড়ে ডালপুরি ভাজছেন। অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই বাস্তব। এক দুই দিন ধরে নয়, গত ২০ বছর এভাবেই মুখরোচক পুরি তৈরি করছেন তিনি। তার নাম লিয়াকত আলী। বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার তারাকান্দিতে। তার এই কারিশমা এরই মধ্যে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। লিয়াকতের ফুটন্ত তেলে হাত দিয়ে ডালপুরি ভাজার গল্প এখন লোকজনের মুখে মুখে। এ দৃশ্য দেখতে ও খাবার কিনতে প্রতিদিন তার দোকানে ভিড় করছেন অনেকেই।
ম্যাজিক নয়, এটাই লিয়াকত আলীর কারিশমা। কড়াইয়ে ফুটন্ত তেলে ডোবাতে পারেন হাত, ভাজতে পারেন ডালপুরি ও বড়া।
মুখরোচক ডালপুরি বিক্রি করে জীবন-সংসারকেও মনের মতো করে সাজিয়েছেন লিয়াকত। তার এমন সাফল্যের কারণে এলাকায় তিনি ডালপুরি লিয়াকত হিসেবেই পরিচিত।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামের দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান লিয়াকত আলী। ৪০ বছর আগে অভাবের সংসারে হাল ধরতে বেছে নিয়েছিলেন বাড়ির পাশের বাজারে ডালপুরি বিক্রির ব্যবসা। তারাকান্দি মধ্য বাজারের সরকারি জমিতে তৈরি এক চালা ঘরে ব্যবসা তার। মুখরোচক ডালপুরি তৈরিতে তার হাতের যশ অন্য পাঁচজন ব্যবসায়ী থেকে তাকে বরাবরই আলাদা করে রেখেছে। সেইসঙ্গে রপ্ত করেছেন ফুটন্ত তেলে হাত দিয়ে ডালপুরি ও বড়া নাড়াচাড়া।
বুধবার সন্ধ্যায় তারাকান্দি বাজারে লিয়াকত আলী মিয়ার ডালপুরি দোকান সরেজমিন পরিদর্শন কালে দেখা গেছে, ডালপুরি নিতে এবং উত্তপ্ত কড়াইয়ের তেলে হাতড়ানোর দৃশ্য দেখতে আসা বিভিন্ন এলাকার নানা বয়সের নারী-পুরুষের ভিড়।
কিশোরগঞ্জ থেকে ও বন্ধুদের সঙ্গে ডালপুরি খেতে এসেছে কলেজছাত্র জাহিদ আলম অপূর্ব। সে বলেন, গরম তেলে হাত দিয়ে ডালপুরি ভাজছেন লিয়াকত আলী নামে এক ব্যক্তি। এমন একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছি। তাই আজ সেই দৃশ্য নিজ চোখে দেখতে এসেছি।
বাজারের জিলাপি ব্যবসায়ী ইলিয়াস মিয়া বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই লিয়াকত চাচার এই কারিশমা দেখে এসেছি। এখনও দেখতেছি। অনেক দূর থেকে চাচার হাতের এই দৃশ্য দেখতে ছাত্র-ছাত্রীসহ অনেক লোক প্রতিদিনই আসে। চাচাও গরম তেলে হাত দিয়ে ডালপুরি ভেজে মানুষকে দেখাতে আনন্দ পায়।
তারাকান্দি গ্রামের ঈমান আলী বলেন, লিয়াকত ডালপুরির ব্যবসা করে ঘর-বাড়ি করেছে। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করিয়েছে।
অবিশ্বাস্য এই কাণ্ডের শুরুটা কীভাবে? সেই প্রশ্নের উত্তরে লিয়াকত জানালেন, প্রথমে ভয় ও যন্ত্রণা দুটোই হতো। তবে আস্তে আস্তে সব সয়ে গেছে। এখন আর ভয় ভীতি নেই। নিমিষেই হাত দিতে পারেন ফুটন্ত গরম তেলের কড়াইয়ে।
তিনি আরো বলেন, অভাবের সংসারে হাল ধরতে ৪০ বছর আগে এ ব্যবসা শুরু করি। ডালপুরি ভাজার কাজে প্রথমে ঝাঁঝর ব্যবহার করতাম। এক সময় মনে হলো গরম তেলে হাত দিয়ে যদি ভাজা যাই তাহলে অনেক লোক দেখতে আসবে। ব্যবসাও ভালো হবে। এই ভাবনা থেকে উত্তপ্ত তেল নাড়াচাড়া করে ডালপুরি ভাজতে থাকি। এখন বেশ দক্ষতার সঙ্গে এই কাজ করছি।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর