শক্তি ও ক্ষমতা থাকার পরও ক্ষমা প্রদর্শন ইসলামের একটি মহান সৌন্দর্য। আল্লাহপাক নিজেও ক্ষমাশীল এবং তিনি ক্ষমাকারীদের ভালোবাসেন। ক্ষমা, বিশেষ করে বদলা নেওয়ার শক্তি ও ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ক্ষমা করতে পারা মানুষের অন্যতম প্রধান মহৎ গুণ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘ক্ষমা করো, এটিই হলো তাকওয়ার অধিকতর নিকটবর্তী বিষয়।
(সুরা : আল-বাকারাহ, আয়াত : ২৩৭)
মক্কাবাসীদের কাছে এত নিপীড়ন-নির্যাতন, লাঞ্ছনা ভোগের পরও মক্কা বিজয়ের সময় নবীজি (সা.) যে অপূর্ব ক্ষমা প্রদর্শন করেছিলেন, জানের দুশমনদের সঙ্গেও উদার ব্যবহার করেছেন, এর নজির পৃথিবীর কোথাও কি আছে? বলেছিলেন, ‘কোনো গঞ্জনা নেই তোমাদের ওপর। তোমরা সবাই মুক্ত।’
মক্কায় প্রবেশের আগে জনৈক আনসারি সাহাবি অতিউৎসাহে বলে ফেলেছিলেন, ‘আজ হলো হত্যা ও নিধনের দিন।’ নবীজি (সা.) শুনতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে বলেছিলেন, ‘আজ তো অনুকম্পার দিন’ এবং ওই সাহাবিকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেন।
তায়েফবাসীদের বর্বর আচরণের মুখে আল্লাহ নিজে যখন ফেরেশতা পাঠালেন তাদের ধ্বংস করে দিতে, নবীজি (সা.) বলেছিলেন, ‘না, এরা তো বোঝে না, জানে না। এরা না হোক, এদের বংশ থেকে কেউ তো হেদায়েত গ্রহণ করতে পারে।’
কোরআন মাজিদে বারবার ক্ষমার কথা বলা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘ক্ষমাকেই গ্রহণ করো, ভালো বিষয়ে নির্দেশ দাও, মূর্খদের আচরণ উপেক্ষা করো।
(সুরা : আল আরাফ, আয়াত : ১৯৯)
মন্দকে ‘মন্দ’ দিয়ে নয়, বরং মন্দের বদলে উত্তম ব্যবহারের তাগিদ করা হয়েছে—‘মন্দ ও ভালো এক বরাবর নয়। উত্তম পন্থা দ্বারা মন্দকে প্রতিহত করো।’ (সুরা : হা-মিম আস-সাজদা, আয়াত : ৩৪)
এর উপকারিতা অসীম। তাহলে তোমার ও তার মধ্যে যে শত্রুতা আছে তা অন্তরঙ্গ বন্ধুত্বে পরিণত হবে। ক্রোধ সংবরণ করা ও ক্ষমা প্রদর্শন করা মুত্তাকিদের কাজ বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
আল্লাহপাক মুত্তাকিদের গুণাবলি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘তারা ক্রোধ সংবরণ করে এবং লোকদের ক্ষমা করে।’ (সুরা : ইমরান, আয়াত : ১৩৪)
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘মুমিন হলো তারা, যারা যখন ক্রোধান্বিত হয় তখন তারা ক্ষমা করে দেয়।’ (সুরা : আশ-শূরা, আয়াত : ৩৭)
নবী (সা.) বলেছেন, যে দ্বন্দ্ব-দ্বৈরথে অন্যজনকে পরাভূত করল সে শক্তিশালী পালোয়ান নয়। পালোয়ান তো হলো, ক্রোধের সময়ও নিজকে যে নিয়ন্ত্রিত রাখতে পারে। (ইমাম বুখারি, হাদিস : ৫৭৬৩)
মহানবী (সা.) আরো বলেন, ‘ক্ষমা মানুষের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি করে।’ (ইমাম মুসলিম, হাদিস : ২৫৮৮)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, ‘অধীনদের প্রতি ক্ষমাশীল হওয়ার কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, দিনে ৭০ বার হলেও ক্ষমা করো।’ (ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, হাদিস : ৫১৬৪)
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর