বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতির কার্যক্রমে স্থবিরতায় ঠাকুরগাঁও জেলা কার্যালয় এখন কার্যত অচল। বছরের পর বছর ধরে এমনাবস্থার কারণে ক্ষুদ্ধ কার্যকারি কমিটির সদস্যরা। সরজমিনে গিয়ে তার সত্যতাও মিলেছে।
অভিযোগের সূত্র ধরে ঠাকুরগাঁও জেলা শহরের কালিবাড়িতে অবস্থিত বিসিডিএস সমিতির কার্যালয়ে যাওয়ার পর খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কয়েক বছর ধরে কোনো কার্যক্রম নেই সমিতির। হয় না নিয়মিত বৈঠক বা সংগঠনের সদস্যদের উপস্থিতি। ফলে ময়লা আবর্জনায় ভরে গেছে পুরো ভবন। বোঝার উপায় নেই যে এটি একটি ঔষধ ব্যবসায়ীদের সংগঠন। দেখে মনে হবে মুল ফোটকের তালা খোলা হয়নি কয়েক বছর ধরে। অফিসের এই জীর্ণ দশা শুধু অবহেলা নয় এর ভেতরে জমে আছে দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও নেতৃত্বের অচলাবস্থা। একসময় প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা এই কার্যালয় এখন দূর থেকে যে কেউ সহজেই মনে করবে এটি একটি ভুতুরে বাড়ি।
এই সংগঠনটি জেলার ফার্মাসিস্ট ও ড্রাগ ব্যবসায়ীদের অন্যতম শক্ত কেন্দ্র হওয়ার কথা। ওষুধ নীতিমালা থেকে শুরু করে লাইসেন্স সংক্রান্ত দিকনির্দেশনা সব বিষয়ে সদস্যদের পাশে থাকার প্রত্যাশাও থাকে। বাস্তবে দৃশ্যটা সম্পূর্ণ উল্টো। অভিযোগ নয়েছে ১৫ বছর ধরে সভাপতি ও সহ-সভাপতিসহ কয়েকজন ব্যাক্তি একই পদে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চেয়ার দখলে রাখেছেন। ফলে নির্বাচন কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। নিয়মিত নেতৃত্ব বদলের সুযোগ না থাকায় সমিতি এখন ব্যক্তি কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। আর সদস্যদের অংশগ্রহণ বললেই নেই।
জানা গেছে, সংগঠনটির বর্তমান কমিটির মেয়াদ রয়েছে চলতি বছরের ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। যার সদস্য সংখ্যা ৩৮০ জন। যেখানে ওষুধ ব্যবসায়ীর সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সিনিয়র সহসভাপতি সহ অন্যান্য সদস্যরা কমিটির মেয়াদ শেষে নির্বাচন না দিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে চেয়ার দখলে রেখেছেন ১৫ বছর ধরে। আওয়ামীলীগের নেতারা কার্যকারি কমিটির পরিচালনা তবে পুরো জেলায় দোকানের সংখ্যা বা নিবন্ধিত কতগুলো তার সঠিক উত্তর জানা নেই বর্তমান কমিটির কাছে। তারা বলছেন, উপ-কমিটির মাধ্যমে উপজেলারগুলো পরিচালনা করা হয়।
স্থানীয় ফার্মাসিস্ট ও ড্রাগ ব্যবসায়ীরা বলছেন, একই ব্যক্তি বহু বছর ধরে সংগঠনের নেতৃত্বে থাকায় কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে। নিয়মিত নির্বাচন না হওয়ায় নতুন নেতৃত্বের সুযোগ তৈরি হয়নি। ফলে সংগঠনটি সদস্যদের স্বার্থ রক্ষার চেয়ে ব্যক্তি কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। কেউ কিছু বললে বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করা হয়। প্রমাণ করে কার্যালয়ের বর্তমান চিত্র যেন সেই স্থবিরতার সাক্ষ্য। অফিসের দরজায় তালা ঝুলছে। ময়লা-আবর্জনার গন্ধই জানিয়ে দেয়, কতদিন ধরে এখানে কোনো সভা বা কার্যক্রম হয়নি।
অন্যদিকে জেলা পর্যায়ের বেশ কয়েকজন ওষুধ ব্যবসায়ী জানান, সরকার পতনের পর থেকেই সংগঠনের কার্যক্রম একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকেই পতিত সরকারের দল করায় গা-ঢাকা দিয়েছে। সময়মতো নেতাদের না পেয়ে নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। তারা আরও বলেন, ওষুধের নীতিমালা, লাইসেন্স নবায়ন, বাজার নিয়ন্ত্রণ বা প্রশিক্ষণ এসব বিষয়ে আগে সমিতির সহযোগিতা পাওয়া যেত। এখন সেই সুযোগ নেই বললেই চলে। কোনও বিষয়ে সমিতির কাছে গেলে ‘পরে জানাব’ এ ধরনের উত্তর মেলে, কিন্তু বাস্তবে আর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায় না। তবে টাকার বিনিময়ে লাইসেন্স পাইয়ে দিতে সুপারিশ করার অভিযোগ রয়েছে কমিটির দু’একজন নেতার বিরুদ্ধে।
কেবল স্থবিরতা নয়, আরও কিছু অভিযোগ ভাসছে ভেতরে ভেতরে। কেউ কেউ বলছেন, ব্যক্তিকেন্দ্রিক তদবির ছাড়া সমিতির কোনো কাজ এগোয় না। কারও লাইসেন্স সংক্রান্ত পরামর্শ লাগলে ‘পরবর্তীতে জানানোর’ প্রতিশ্রুতি শোনা যায়, কিন্তু সেই ‘পরবর্তীতে’ আর আসে না। সংগঠনের নামে যে প্রশিক্ষণ বা সভা সম্মেলন হওয়ার কথা বছরের পর বছর তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না। নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে সংগঠনটি সচল হোক এমন আশা সবার।
এবিষয়ে সংগঠনের সভাপতি আজিজুর রহমান ও সহ-সভাপতি আজিজুল ইসলাম সব অভিযোগ অস্বীকার করে তারা বলেন, এখানে কোন ভোট হয়না। কেন্দ্র কমিটির করে দেয় আমরা শুধু প্রস্তাবনা পাঠাই। কেন্দ্র মনে করেছে বলেই আমরা এতো বছর নেতৃত্ব দিয়ে আসছি। আর অফিসের তার চুরি হয়ে যাওয়ার কারনেই অফিস খোলা হয়না বলে স্বীকার করেন তারা।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর