মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল–১ রায় ঘোষণা করে। রায়ে দুটি অভিযোগে শেখ হাসিনাকে এবং একটি অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। রাজসাক্ষী হিসেবে ভূমিকার কারণে পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রায় ঘোষণার পরপরই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হাসিনা ও কামালকে ভারতের কাছে হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান প্রত্যর্পণ চুক্তির ভিত্তিতেই এই দাবি জানানো হয়। গত বছর ডিসেম্বরেও নয়াদিল্লির কাছে হাসিনাকে ফেরত চেয়ে কূটনৈতিক নোট পাঠিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার।
তবে ভারতের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত মিলেছে—হাসিনাকে প্রত্যর্পণ বিষয়টি সরল নয়। ভারত শুরু থেকেই বলছে, এটি বিচার বিভাগীয় ও আইনি প্রক্রিয়ার বিষয় এবং চুক্তির শর্তগুলো পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। রাজনৈতিক চরিত্রের অভিযোগ বা প্রাণহানির ঝুঁকি থাকলে প্রত্যর্পণ বাধ্যতামূলক নয়—চুক্তিতেও এমন ব্যাখ্যা রয়েছে। ভারতের একাধিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ও আইনজ্ঞ মনে করছেন, রায়ের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং প্রাণহানির আশঙ্কার কারণে নয়াদিল্লি হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে বাধ্য নয়।
আইনজীবীদের মতে, শেখ হাসিনা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার অধিকার রাখেন। তবে দেশে না থাকার কারণে আপিল করতে বাধা পেলে তা মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল হতে পারে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে বলা আছে—কোনও দেশে কারও জীবনের ঝুঁকি থাকলে আশ্রয়দানকারী দেশ তাকে ফেরত পাঠাতে বাধ্য নয়।
২০১৩ সালে দুই দেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং ২০১৬ সালে তা আরও সহজ করা হয়। গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেই প্রত্যর্পণের আবেদন করা যায়। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও একাধিক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।
ছাত্র–জনতার আন্দোলনের জেরে ২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা এবং ভারতের আশ্রয় নেন। তখন থেকে তিনি ভারতেই অবস্থান করছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে দিল্লি রাজনৈতিক, আইনি ও মানবাধিকারগত দিকগুলো বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে আভাস দিয়েছে।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর