সরকারি প্রকল্পের আওতায় জনগণকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (DPHE) খাগড়াছড়ি জেলায় কয়েক হাজার পরিবারের মধ্যে সাবমারসিবল মোটর, পানির ট্যাংক ও রিং সরবরাহ করেছে। প্রতিটি পরিবার থেকে সরকার নির্ধারিত ফি মাত্র ১০,৫০০ টাকা গ্রহণ করে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ১ হাজার লিটারের পানির ট্যাংক, একটি সাবমারসিবল মোটর এবং তিনটি রিং।
কিন্তু সম্প্রতি সরজমিনে দেখা গেছে, এসব ট্যাংক যেগুলোর গায়ে স্পষ্টভাবে “জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (DPHE)” লেখা রয়েছে, সেগুলো খাগড়াছড়ি জেলা শহর এবং বিভিন্ন উপজেলার হার্ডওয়্যার দোকানে প্রকাশ্যে খোলা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ পানির ট্যাংকগুলোতে লেখা রয়েছে 'বিক্রির জন্য নহে'। পানির এ ট্যাংকগুলো প্রকল্পের মাধ্যমে নির্ধারিত সরবরাহকারীর কাছ থেকে নির্দিষ্ট দরপত্র অনুযায়ী কম মূল্যে কেনা হয়, যা শুধুমাত্র প্রকল্পভুক্ত পরিবারের জন্য বরাদ্দ। অথচ এগুলো বাজারে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হওয়া আইনত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং গুরুতর অনিয়ম ও দুর্নীতির শামিল।
খাগড়াছড়ি সদরের নাহিদ এন্টারপ্রাইজ, মহাজন পাড়ার সাকিব ট্রেডার্স, মহালছড়ির জনি হার্ডওয়্যার এন্ড গ্লাস হাউজ, মাইসছড়ির আমিন ট্রেডার্স, গুইমারার এ এফ ট্রেডার্স, বাঘাইহাটের ভাই ভাই হার্ডওয়্যার দোকানে DPHE-র নামযুক্ত ট্যাংক খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ- কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের যোগসাজশে এই দুর্নীতির ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে যেমন সরকার অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
খাগড়াছড়ির সুলতান এন্ড ব্রাদার্সের মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, 'জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের 'DPHE' এর পানির ট্যাংক গুলোতে স্পষ্ট করে লেখা রয়েছে 'নট ফর সেল'। তবুও এসব ট্যাংক বাজারে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে। বাজার এগুলোতে সয়লাব হয়ে গেছে। এগুলো খোলা বাজারের জন্য নয়, খোলা বিক্রি করা নিষেধ। আমরা সাধারণ ব্যবসায়ীরা চাই, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর খোলা বাজারে এসব ট্যাংক বিক্রি বন্ধ করুক। যারা এসব বিক্রি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।'
খাগড়াছড়ি বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলম ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী মো. আলম বলেন, 'DPHE লেখা পানির ট্যাংক অনেক দোকানেই দেখা গেছে। আমরা ঠিকাদারের কাছ থেকে অর্ডার পেলে কোম্পানির কাছ থেকে DPHE সিল এনে ঠিকাদারের নিকট হস্তান্তর করতে পারি। এগুলো খোলা বাজারে বিক্রি করা উচিত নয়। এতে করে সাধারণ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খোলা বাজারে এ ট্যাংক বিক্রি করা বন্ধ করা উচিত।'
এখন পর্যন্ত কোনো প্রশাসনিক বা আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। জনস্বার্থে দ্রুত তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সাঈদ মাহমুদ বলেন, 'এই অভিযোগ আপনার নিকটই প্রথম শুনলাম। DPHE লেখা পানির ট্যাংকগুলো শুধুমাত্র উপকারভোগীদের দেওয়া হয়। এর বাইরে এসব ট্যাংক বিক্রি করা অন্যায়। আমরা ঠিকাদারের মাধ্যমে এ কাজটি করে থাকি। খোলাবাজারে DPHE লেখা পানির ট্যাংক বিক্রি করা যাবেনা। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।'
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর