ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ভূত পরিস্থিতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) টানা ১৪ দিনের বন্ধে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ছেড়েছেন। বাকি শিক্ষার্থীরা আগামীকালের মধ্যেই ছাড়বেন, বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলের পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন পরিদর্শন কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
রোববার (২৩ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল এবং বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল পরিদর্শন করে বিশেষজ্ঞ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত প্রকৌশলদল। জানা গেছে, সূর্যসেন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল এবং মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে।
এদিকে প্রভোস্ট কমিটির জরুরি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হল ছেড়ে যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা তাদের মূল্যবান জিনিস-পত্র সাথে নিয়ে বের হবে এবং রুমের চাবি হল প্রশাসনের নিকট জমা দিয়ে যাবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিন বন্ধ থাকবে। সরেজমিনে গিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা হল ছাড়ছেন। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের বাসে করে বিভাগীয় শহরে পৌঁছে দেওয়া উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত রংপুরের উদ্দেশ্যে একটি বাস শিক্ষার্থীদের নিয়ে মল চত্বর থেকে রংপুরে ছেড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে অধিকাংশ শিক্ষার্থী হল ত্যাগ করলেও হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে হল ত্যাগের নির্দেশনা মামতে নারাজ অনেক শিক্ষার্থী। এদের কেউ কেউ আবার হল ছাড়তেও অসম্মতি জানিয়েছেন। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত, রাত ৭টা পর্যন্ত অনেক শিক্ষার্থীকেই হলে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, হুট করে হল ছাড়তে বলায় তারা পড়েছেন উভয় সংকটে। কারো টিউশন আছে। কেউ আবার চাকরি করেন। হল বন্ধ থাকলে তাদের এই কয়দিন থাকার কোন জায়গা নেই।।
এদিকে নিজের যেকোন ধরনের ক্ষতির দায় নিয়ে হলে অবস্থান করার অনুমতি চেয়ে হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর আবেদন করেছেন হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের আবাসিক ও যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান শাহিদ। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে হলে অবস্থানকালে যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভবন ধ্বসে আমার কোন ক্ষতি হলে তার সম্পূর্ণ দায় নিজের বলে ওই আবেদনে উল্লেখ করে শাহিদ লিখেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১৫ দিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তাতে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু বিকেল ৫টার মধ্যে হল ত্যাগ ও হলের বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার যে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে তাতে আমি সম্পূর্ণরূপে দ্বিমত ও নিন্দা জ্ঞাপন করছি। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা যদি মহামারীতে আক্রান্ত হতো বা বন্যায় তলিয়ে যেত তাহলে এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া যেত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় দায় এড়াতে এরকম স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।’
প্রসঙ্গত, ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুরুতে ১ দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে গত শনিবার রাতে টানা ১৪ দিনের বন্ধের ঘোষণা দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। রোববার থেকে শুরু হওয়া হচ্ছে এই বন্ধ চলবে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসসমূহ যথারীতি খোলা থাকবে।
শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জানানো হয়, এই ঝুঁকি নিরূপণ ও সম্ভাব্য সংস্কারের স্বার্থে আবাসিক হলগুলো খালি করা প্রয়োজন। এ কারণে সভায় আগামী ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাবির শ্রেণি কার্যকম বন্ধ থাকলেও ঢাবি অধিভুক্ত চিকিৎসা অনুষদভুক্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ দেশের বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকরি মেডিকেল কলেজগুলোতে এবার চলমান এমবিবিএস পরীক্ষা আগামী ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। স্থগিতকৃত পরীক্ষাসমূহের নতুন সময়সূচি যথাসময়ে ঘোষণা করা হবে, বলে জানিয়েছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর