• ঢাকা
  • ঢাকা, সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৫ সেকেন্ড পূর্বে
সাহিদুজ্জামান সাহিদ
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ২৪ নভেম্বর, ২০২৫, ০৫:২৭ বিকাল

বাউলদের ওপর হামলায় কারা এই তৌহিদি জনতা, সংঘাতের উৎপত্তি যেভাবে

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

বাউল শিল্পী আবুল সরকার গ্রেপ্তার হওয়ার পর মুক্তির দাবিতে বাউল ও তাদের সমর্থকরা রবিবার মানিকগঞ্জ শহরের প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ঘোষণা করে। সময় ছিল সকাল ৯টায়। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যায় বৈঠক করে ঠিক একই সময় আরেকটি সভা আহ্বান করে হেফাজত, ইমাম সমিতি, ইমাম পরিষদ, খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি সংগঠন এবং মুসল্লিদের ঐক্যবদ্ধ ’তৌহিদি জনতা’।

বিষয়টি তারা পুলিশকে অবহিত করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাউলদের কর্মসূচি সময় পিছিয়ে সাড়ে ১১টায় করতে নির্দেশনা দেন। বাউলরা সেই নির্দেশনা মেনে মানিকগঞ্জ শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে জড়ো হন। কয়েকজন ছিলেন দক্ষিণ সেওতা এলাকার স্টেডিয়ামের পাশেও। সকালে তৌহিদি জনতার মিছিল ওই এলাকায় এসে স্টেডিয়ামের সামনে সমাবেশে করতে জড়ো হয়, পুলিশ স্টেডিয়ামের পাশে জড়ো হওয়া ৩০-৪০ জন বাউল ও তাদের সমর্থকদের ওই এলাকা থেকে সরতে বললে তারা স্টেডিয়ামের বাইরের চা দোকানসহ আশপাশে অলস সময় পার করতে থাকেন। ওই সময় সেই বাউল ও তাদের সমর্থকদের দেখতে পেয়ে ধাওয়া দেন তৌহিদি জনতা। একপর্যায়ে তাদের কেউ কেউ পাশের পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়েন, কেউ কেউ আশপাশের ভবনগুলোতে আশ্রয় নেন।

তৌহিদি জনতা আশপাশে থাকা ব্যক্তিদের লাঠিপেটা, লাথিসহ বিভিন্নভাবে মারধর করেন, পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়া ব্যক্তিদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন, আর ভবনে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের আটকে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। তৌহিদী জনতার নির্মম এই হামলা চলে বিচ্ছিন্নভাবে আধা ঘন্টা ব্যাপী। পুলিশ এসে হামলার শিকার ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান, আর তৌহিদি জনতা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিতে ওই স্থান ত্যাগ করেন। বর্বর এ ঘটনায় আতঙ্কগ্রস্ত বাউল ও তাদের সমর্থকরা থানায় মামলা করতেও সাহস পাচ্ছেন না। আর এ ঘটনায় হতবাক বলে মন্তব্য করেন তৌহিদি জনতার কর্মসূচির আয়োজকরাও। যদিও এ ঘটনাকে তারা ধর্মীয় অনূভুতিতে আঘাতের প্রতিফলন হিসেবেই দেখছেন।

রবিবার রাতে হামলার শিকার বাউল ও তাদের সমর্থক, তৌহিদি জনতার কর্মসূচির আয়োজক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে উঠে আসে এ ঘটনার বিভিন্ন চিত্র।

রাত ৯টার দিকে দক্ষিণ সেওতার ওই ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দিন পেরিয়ে রাত নামলেও এখনও ঘটনার আকস্মিকতায় হতবিহ্বল স্থানীয় বাসিন্দারা। মানিকগঞ্জ শহরের মধ্যে এমন সংঘাতের ঘটনা আগে দেখেননি তারা।

স্টেডিয়ামের দক্ষিণ পাশে ঘটনাস্থলের পুকুরের আশপাশে গিয়ে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে। তারা জানান, সকাল ৮-৯টার দিক থেকেই বাউল বেশি অনেকেই ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিলেন। কেউ কেউ চায়ের দোকানে বসেছিলেন। সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ তাদের স্টেডিয়ামের পাশ থেকে সরিয়ে দেয়। আর হামলার ঘটনা ঘটে পৌনে ১১টার দিকে। বিভিন্ন বয়সী প্রায় ১৫০-২০০ জনের একদল তৌহিদি জনতা এসে লাঠিসোঁটা তাদের ধাওয়া দেয়। এতে তারা পালিয়ে যান। ওই সময়ই তারা পুকুরে ঝাঁপ দেন ও আশপাশের ভবনে আশ্রয় নেন। তবে সেখানেই তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।

মো. সোহেল রানা নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, তারা চায়ের দোকানে বসে ছিল। অনেকে হাঁটাহাঁটি করছিল। ওই সময় হঠাৎ করেই তৌহিদি জনতা এসে তাদের ধাওয়া দেয়। এরপর যা ঘটছে তা তো ভিডিওতেই প্রমাণ আছে।

স্টেডিয়ামের বাইরে প্রায় ২০০ মিটার দূরে আরশাদ আলীর নির্মাণাধীন বাড়িতে আশ্রয় নেন ৭-৮ জন বাউল ও তাদের সমর্থকরা। এরমধ্যে তিনজন ছিলেন ভবনটির নিচে। ওই বাড়ির বাসিন্দারা গেট আটকে তাদের রক্ষার চেষ্টা করেন। তবে তৌহিদি জনতা সেখানে গিয়ে গেট ভাঙার চেষ্টা করেন, একপর্যায়ে বাড়িটির জানালার কাঁচে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন ও বাড়িতে ভাংচুর করেন। পরে বাড়ির বাসিন্দারা গেট খুলে দিলে তৌহিদি জনতা ভেতরে ঢুকে নিচে থাকা তিনজন, নিচতলার টয়লেটে আশ্রয় নেওয়া একজনকেসহ ৪-৫ জনকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখমসহ আহত করেন। এ সময় ভেতরে থাকা আসবাব, দরজাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাংচুর করেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বাড়ির এক বাসিন্দা বলেন, সংঘর্ষ শুরু হলে বাউল ও তাদের সমর্থক কয়েকজন লোক এসে নিচতলায় পার্কিং স্পেসে আশ্রয় নেন। একজন বাথরুমে লুকিয়ে পড়েন। কয়েকজন বিভিন্ন ফ্লোরের ফাঁকা কক্ষে অবস্থান নেন। তৌহিদি জনতা এসে বাউল ও তাদের সমর্থকদের তাদের হাতে ছেড়ে দিতে বলেন। না দিলে তারা বাড়িতে হামলা করেন। এরপর গেট খুলে দিলে বাড়িতে ঢুকে তাদের মারধর করেন।

সরেজমিনে রাত ১০টার দিকে ওই বাড়িতে গিয়ে ভাংচুরের চিত্র দেখা যায়। বাড়িটির মেঝের টাইলস ও দেয়ালে ছোপ ছোপ জমাটবদ্ধ রক্ত দেখা যায়।

যেভাবে সংঘর্ষের শুরু

সকাল ৯টার দিকে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি প্রতিবাদি মিছিল বের করেন স্থানীয় তৌহিদি জনতা। এরপর খালপার হয়ে মিছিলটি আসে মানিকগঞ্জ স্টেডিয়ামের সামনে ডিসির কার্যালয়ের বিপরীত পাশে সড়কের ওপর সমাবেশ শুরু করেন। ওই সমাবেশেরই জনতার একটি অংশ স্টেডিয়ামের পাশে অবস্থানরত ৩০-৪০ জন বাউল ও তাদের সমর্থকদের ধাওয়া দেন। এ সময় যাকেই তারা সামনে পান, তাদের লাঠিসোটাসহ পেটাতে থাকেন।

এতে বাউল ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে শিবালয় উপজেলার শাকরাইল গ্রামের আবদুল আলীম (২৫), সিঙ্গাইর উপজেলার তালেবপুর গ্রামের আরিফুল ইসলাম (২৯) ও হরিরামপুর উপজেলার কামারঘোনা গ্রামের জহিরুল ইসলাম (৩২) আহত হন। আর তৌহিদি জনতার পক্ষে আহত হন সদর উপজেলার বরঙ্গাখোলা গ্রামের আব্দুল আলীম (২৭) নামে আরও এক ব্যক্তি।

বাউল সঙ্গীতশিল্পী মহারাজ আবুল সরকারের ভাতিজা পাপেল সরকার বলেন, আমরা গত পরশু ঘোষণা করি রবিবার সকাল ৯টায় মানববন্ধন করবো। এরমধ্যেই গতকাল রাত ৯টার সময় তারা (তৌহিদি জনতা) ঘোষণা করে বাসস্ট্যান্ডে মিছিল করবে। এমতাবস্থায় মুখোমুখি হওয়া এড়াতে পুলিশ বললো, উনারা ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত করবে। এরপর তারা চলে যাবে। এরপর আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন করবেন। আমরা যেহেতু আগে ঘোষণা করেছি, অনেককে আর সময় পরে জানাতে পারিনি। আবুল সরকারের ভক্তরা ৯টার মধ্যেই অনেকে চলে আসছেন। তো কোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা যখন জানতে পারি তারা কিছু লোক (প্রায় ৫০ জন) বিজয় মেলার মাঠে আছে, তখন আমি এবং আরেকজন বিজয় মেলার মাঠে যাই, তাদের এদিকে আসতে নিষেধ করি। বলি, আমাদের কর্মসূচি দুই ঘণ্টা পেছানো হয়েছে। পুলিশও আমাদের দূরে অবস্থান করতে বলেন। এজন্য আমরা মাঠের বাইরে দূরে আড়ালে চলে যাই। এরপর তারা যখন মিছিল নিয়ে মূল গেটের সামনে আসলো, ওদের হাতে যে মাইক ছিল ওই মাইকে বললো, ’ওই কোনায় লোক আছে, ধর শালাদের’। তারপরই অল্প বয়সী মাদরাসার ছাত্ররা আক্রমণ করছে। অনেকে দৌড়াতে গিয়ে যারা পেছনে পড়েছে, তাদের ওপরই হামলা হয়েছে। একটা ভবনের নিচতলায় আটকে আরিফুল ইসলাম, আলিম ও আরও একজনকে পেটানো হয়। এর মধ্যে পুলিশ এসে আক্রমণের শিকারদের উদ্ধার করে। আমরা তাদের আক্রমণ করতে যাইনি, শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করতে গিয়েছিলাম। আমরা করতে পারলাম না।

আমাদের মোট সাতজন আহত হয়েছে। বাউল শিল্পী হেলাল সরকার, লাভলু সরকার, আরিফুল ইসলাম, আলিম, জহিরুল, শুভর নাম প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তাদের মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল, মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এছাড়া তিনি অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের হুমকি দেওয়া হয় তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। এই ভয়ে কয়েকজন হাসপাতাল ছেড়ে যান।

তবে কে বা কারা এমন হুমকি দিয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কারো নাম বলতে পারেননি তিনি।

আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, আবুল সরকারের স্ত্রী আলেয়া বেগমসহ আমরা থানায় যাই, তবে আমরা কোনো অভিযোগ করতে পারিনি।

আবুল সরকারের অনুসারী বাউল শিল্পী হেলাল সরকার বলেন, আমরা সাড়ে ৯টার দিকে পৌঁছাই। তখন দেখি তাদের মিছিল চলছে। প্রশাসন বললো, ওরা চলে গেলে আপনারা করবেন। আমরা মাঠের পেছনে মূল রাস্তা থেকে প্রায় ৬০০-৭০০ মিটার দূরে একটা জায়গায় দাঁড়াই। আমরা প্রায় ৫০-৬০ জন ছিলাম। এদের মধ্যে কেউ শিল্পী, কেউ ভক্ত। তো এরমধ্যে তাদের মিছিল আসলো, সমাবেশ চলছিল দূরেই। তখনই অনেক লোক সেখান থেকে লাঠি নিয়ে এসে ধাওয়া দেয়। সেখান থেকে বের হওয়ার সুযোগ ছিল না। যে যেভাবে পারে পালায়, কেউ কেউ পানিতে লাফ দেয়। আমরা সম্পূর্ণ খালি হাতে ছিলাম। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে এসব চলতে থাকে। পুলিশ থাকলেও ওদের সঙ্গে পারেনি। আমাদের অনেককে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে হাসপাতালে পাঠায়। পাঞ্জাবি-পাজামা ও টুপি পরিহিত প্রায় ৭-৮ জন আমার মাথায়, পায়ে-পিঠে আঘাত করে। হামলাকারীরা সবাই একই ধরনের পোশাক পরিহিত ছিলেন।

তৌহিদি জনতার কর্মসূচির আয়োজকরা যা জানালেন

গত ৪ নভেম্বর মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জাবরা এলাকায় খালা পাগলীর মেলায় পালাগানের আসরে প্রশ্নোত্তরের পর্বে বাউল মহারাজ আবুল সরকার ’আল্লাহকে নিয়ে গালি দেওয়া ও কটুক্তি’ করেন বলে অভিযোগ তোলেন তৌহিদি জনতা। প্রায় ৫ ঘণ্টার পালাগানের এক মিনিটের মতো একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর জেরে গত বুধবার রাতে মাদারীপুরে একটি গানের আসর থেকে আবুল সরকারকে আটক করে মানিকগঞ্জ ডিবি পুলিশের একটি দল। গত বৃহস্পতিবার সকালে তাকে জেলা ডিবির কার্যালয়ে আনা হয়। দুপুরে মুফতি মো. আবদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে আবুল সরকারকে আসামি করে ঘিওর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে আবুল সরকারকে কারাগারে পাঠানো হয়। রবিবার জামিন শুনানির জন্য তাকে আদালতে তোলার কথা ছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আবুল সরকারের অনুসারীরা মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দেন। আর জামিন ঠেকাতে ও তার সর্বোচ্চ বিচার দাবিতে আরেকটি কর্মসূচির ডাক দেন তৌহিদি জনতা।

তৌহিদি জনতার ডাকা কর্মসূচির অন্যতম সংগঠক মানিকগঞ্জ কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম ও মানিকগঞ্জ জেলা ইমাম পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মুজিবুর রহমান জানান, গতকাল সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জ কেন্দ্রীয় মসজিদে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মানিকগঞ্জ জেলা ইমাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আউয়াল, ইমাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান, খেলাফত মজলিসের শেখ মাহবুবুর রহমান, আনিসুল ইসলামসহ আরও অনেকে অংশ নেন। বৈঠকে রবিবার সকালে কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী সকাল ৯টায় কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। আর প্রশাসনের নির্দেশে বাউলদের কর্মসূচি ৯টা থেকে দুই ঘণ্টা পিছিয়ে দেওয়া হয়। পরে তৌহিদি জনতা মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে মিছিল নিয়ে বিজয় মেলার মাঠের সামনে এসে সমবেত হন।

তিনি জানান, সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের মানিকগঞ্জের সভাপতি সাইদ নুর, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সালাউদ্দিন, জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের জেলার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ওবায়দুল্লাহ, জামায়াতে ইসলামীর জিয়াউর রহমানসহ আরও ইসলাম ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী, মাদরাসা শিক্ষার্থী ও মুসল্লিরা অংশ নেন। এতে সমাবেশটি সার্বজনীন সম্মিলিত হয়ে ওঠে।

ইমাম মুজিবুর রহমান বলেন, আমরা মিছিল নিয়ে স্টেডিয়াম মাঠের সামনে আসি। এরপর সেখানে বক্তারা বক্তব্য দিচ্ছিলেন। আমি স্মারকলিপির জন্য গণ সাক্ষর নিচ্ছিলাম। এরমধ্যে দেখি দৌড়াদৌড়ি চলছে। এগিয়ে গিয়ে দেখি দৌড়াদৌড়ি চলছে। পরে সবাইকে ডেকে আনতে থাকি। ৫-৭ মিনিটের মধ্যে শেষ হয়ে গেছে।

এ সময় একটি ভবনের নিচতলায় আটকে বাউলদের পেটানোর একটি ভিডিও দেখিয়ে কাউকে চিহ্নিত করতে পারেন কিনা জানতে চাইলে কাউকেই চেনেন না বলে জানান তিনি। মুজিবুর রহমান বলেন, ওই ক্ষোভটা পুঞ্জীভূত ছিল। ওই মুহুর্তে পেয়েছে, হিতাহিত জ্ঞান ছিল না তাই। তারা সময় ও ভেন্যু লঙ্ঘন করায় বিষয়টি বড় হয়েছে। এছাড়া হামলা ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কর্মসূচি শেষের পর পর্যালোচনায় বসতে পারিনি। এটি সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত, আমরা হতবিহ্বল হয়ে পড়েছি। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সন্ধ্যায় হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের দেখতে যান কয়েকজন আলেম-ওলামা। তাদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের জেলা কমিটির আমীর আবদুল্লাহ আল ফিরোজ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আল্লাহকে গালি দেওয়া, আল্লাহকে কটুক্তি করা এবং আল্লাহকে নিয়ে বেয়াদবীমূলক কথাবার্তা বলা সহ্য করে নেওয়ার মতো নয়। তবুও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল শেষ করেছি। মিছিলের পরবর্তী যে সমাবেশ হয়েছে, ওখানে আমরা বক্তব্য দিচ্ছিলাম। এর মধ্যেই কিছু বয়াতী সমাবেশের আশপাশে থাকা আমাদের কিছু ছেলের বেদম পিটুনি দিয়েছে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। আমাদের কয়েকজন আহত হয়েছে।’

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সুজিত চন্দ্র রায় বলেন, আহতদের মধ্যে তিনজনের মাথায় মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন। তাদের মাথার একাধিক স্থানে সেলাই দেওয়া হয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, গতকাল তারা একটা চিঠি দেয়। সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ হবে জানিয়েছিল। আবার বাউলদেরও কর্মসূচি ছিল। তো কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য নজর রাখছিলাম। একপর্যায়ে বাউলদের মাঠের দিকে দেখলে তাদের সরিয়ে দেই। কোনো উস্কানি ছাড়াই দৌড়ে টেনিস মাঠের পাশ দিয়ে তাদের ধাওয়া দেয়। এতে তারা আটকে পড়ে। এরমধ্যে তিনজন একটা বাসায় আটকে পড়ে। সেখানে তাদের মারধর করা হয়। আবার অনেকে পানিতে ঝাঁপ দেন। একজনকে দেখি মারধর করছে, আমি একাই গিয়ে তাদের থামাই। উপস্থিত সাংবাদিকরাও সহযোগিতা করেন। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই। এই বিষয়ে মামলা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বাউলশিল্পী আবুল সরকারের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে তৌহিদী জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়। এ দিকে আবুল সরকারের ভক্ত-অনুরাগীরা তার মুক্তি দাবিতে মানববন্ধনের কর্মসূচি ছিল। পরবর্তীতে তৌহিদী জনতার একটি অংশ আবুল সরকারের সমর্থকদের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে ধাওয়ায় তিন-চারজন আহত হন। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরিস্থিতি এখন শান্ত ও স্বাভাবিক রয়েছে।

কুশল/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]