শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার উজান থেকে বয়ে আসা পাহাড়ি খরস্রোতা ভোগাই নদীর পশ্চিম পাড়ে একটি জরাজীর্ণ পরিত্যক্ত ভবনেই চলছে উপজেলার ৪ নং নয়াবিল ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম। ছোট একটি ভবনে পরিষদের সব কাজ করতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে ইউনিয়ন পরিষদের সার্বিক কর্মকাণ্ড। কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ মানুষ ও ত্রাণসহ উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে বিপাকে পড়ছেন জনপ্রতিনিধিরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফেটে চৌচির জরাজীর্ণ পরিত্যক্ত টিনশেড একটি আধাপাকা ঘরটি। মাঝে মধ্যেই খুলে পড়ছে দেয়ালের পলেস্তরা। এমন ঝুঁকিপূর্ণ ছোট একটি অবকাঠামোর মধ্যে চলছে নয়াবিল ইউনিয়ন পরিষদের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের নাগরিক সেবা প্রদানের কার্যক্রম।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিনের পুরোনো এ অবকাঠামোর মধ্যে চলছে ইউনিয়ন পরিষদের সার্বিক কর্মকাণ্ড। ঝুঁকিপূর্ণ ইটের দেয়াল ও টিনের চালায় মরিচা পড়ে অনেক জায়গায় ছিদ্র হয়ে গেছে, ফেটে গেছে। মাঝে মধ্যেই হঠাৎ দেয়ালের পলেস্তরা খুলে পড়ছে আর বৃষ্টি হলেই টিনের চালের ছিদ্র দিয়ে কক্ষে পানি পড়ে। ভয়ে অনেকে ভিতরে থাকার সাহস পান না।
স্থানীয় বাসিন্দা সামিউল ইসলাম জানান, জোরে বাতাস বইলে ভয় হয়। কখন না জানি টিনের চালা উড়ে যায় কিংবা ঘরের মেয়াদোত্তীর্ণ ইটের দেয়াল ভেঙে পড়ে। এই ভবনে এখন কোনো কাজ ঠিক ভাবে করা যায় না। তবে বিকল্প ভবন না থাকায় বাধ্য হয়ে ছোট ওই ভবনের ভিতরেই চলছে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম, চেয়ারম্যানসহ ইউপি সদস্যদের বসা, উন্নয়ন কার্যক্রমের সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ইউপি সচিবের দাপ্তরিক কাজ ও ডিজিটাল তথ্য সেবাসহ সকল কার্যক্রম। একটি কাজ করতে গিয়ে বন্ধ রাখতে হচ্ছে অন্য একটি সেবা। আর ভিতরে ১০ থেকে ১৫ জন লোকের বেশি ধারণ ক্ষমতা না থাকায় খোলা আকাশের নিচে রোদ বৃষ্টিতে ভিজে দাঁড়িয়েও প্রয়োজনীয় কাজ সারতে হচ্ছে এই ইউনিয়নের জনগণকে। এতে ব্যাহত হচ্ছে জনগণের কাঙ্ক্ষিত সেবা। জনগণের পাশাপাশি ভবন না থাকায় বিপাকে পড়েছেন জনপ্রতিনিধিসহ ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও। ভবনের অভাবে সরকারি বরাদ্দকৃত বিভিন্ন ত্রাণ, পরিষদের ব্যবহৃত কম্পিউটারসহ বিভিন্ন দরকারি কাগজপত্র বৃষ্টিতে ভিজে ও যত্রতত্র রাখার কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথিও চুরি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। নয়াবিল ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ শরীফ আল ফায়েদ জানান, বৃষ্টি এলে এই ভবনের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে গুরুত্বপূর্ণ কাগজ ও আসবাবপত্র ভিজে যায়। এক ছাদের নিচে একটি ইউনিয়নের সব কার্যক্রম চালাতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট নয়াবিল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমান মিজান জানান, এই ইউনিয়ন পরিষদের দাপ্তরিক কাজের সমস্যার পাশাপাশি ভিজিডি ও ভিজিএফসহ সরকারি বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণে সমস্যায় পড়তে হয়। পরিষদের গোডাউনে চালের ধারণ ক্ষমতা না থাকায় পাশের স্কুল ঘরে বা অন্য কোথাও রাখতে হয়। ইউপি সদস্যদের নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে মিটিং করার মতো পরিবেশ নেই। পাশাপাশি গ্রাম আদালত পরিচালনা করার মতো জায়গা নেই। তাই দ্রুত পরিষদের দাপ্তরিক কাজ পরিচালনা করার জন্য নতুন ভবন নির্মাণ করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারজানা আক্তার ববি জানান, ৪নং নয়াবিল ইউনিয়ন পরিষদের জরাজীর্ণ ভবনটির বিষয়ে অবগত আছি। নতুন ভবনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো আছে। সারাদেশে নতুন করে ইউনিয়ন পরিষদের ভবন নির্মাণ শুরু হলে তখন নয়াবিল ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। উল্লেখ্য, দেশের মুক্তিযুদ্ধের আগে স্থাপিত এই ভবনটিতে নয়াবিল ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮৩ সালে। এর আগে এখানে রামচন্দ্রকুড়া মন্ডলিয়াপাড়া ইউনিয়ন ও নয়াবিল ইউনিয়ন যৌথভাবে একক পরিষদ হিসেবে এ ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর