• ঢাকা
  • ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৩ মিনিট পূর্বে
শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ২৭ নভেম্বর, ২০২৫, ০২:১৬ দুপুর

পর্যটন সম্ভাবনার মাঝে অস্তিত্ব সংকট: সোনাদিয়া দ্বীপ

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার উপকূলীয় সোনাদিয়া দ্বীপ একসময় প্রচুর মাছ ও শুঁটকি উৎপাদনের জন্য 'সোনার মতো দামি' হিসেবে পরিচিত ছিল। দৃষ্টিনন্দন প্যারাবন, লাল কাঁকড়া, নানা প্রজাতির সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ও নিসর্গমুখর সমুদ্রসৈকতের জন্য এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপটি পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয় ছিল। তবে অপার পর্যটন সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পরিকল্পিত উন্নয়ন ও অব্যবস্থাপনার কারণে আজ দ্বীপটি পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে। শীত মৌসুমেও যেখানে পর্যটকের ঢল নামার কথা, সেখানে এখন বিরাজ করছে নীরবতা।

দ্বীপের বাতাসে একসময় যে লবণাক্ত সমুদ্রের ঘ্রাণ ও প্যারাবনের সবুজ ছায়া মিশে থাকত, সেখানে এখন ভেসে আসে পোড়া গাছের তীব্র যন্ত্রণার গন্ধ। রাতের অন্ধকারে এক্সকাভেটরের শব্দ ও আগুনের লেলিহান শিখায় কেবল গাছ নয়, পুড়ে যাচ্ছে মানুষের স্মৃতি, আশ্রয় ও ভবিষ্যৎ। যে প্যারাবন ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় শত জীবনের রক্ষাকবচ ছিল, সেই বন আজ নিজেই রক্ষা চাইছে। সোনাদিয়ার আকাশে এখন আর কেবল সিগালের ডাক শোনা যায় না, শোনা যায় বাঁচার আর্তনাদ।

মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়নের এই ৪৯২৮ হেক্টরের দ্বীপে পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণ ছিল এর নির্জন সৈকত, প্যারাবনের আঁকাবাঁকা পথ, কাছিমের বিচরণ ও সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য। স্থানীয় বাসিন্দা তারেক আজিজ জানান, একসময় মৌসুমে হাজারো পর্যটক আসতেন, তাদের ঘিরে ছোট-বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। এখন পর্যটক আসা প্রায় শূন্য এবং ব্যবসাগুলোও বন্ধ হওয়ার পথে। যোগাযোগব্যবস্থা ও নীতিগত পরিকল্পনার অভাবেই সম্ভাবনার দ্বীপটি পিছিয়ে পড়ছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

সোনাদিয়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের একমাত্র লোনাজলের প্যারাবন। প্রায় ২২০০ একরজুড়ে বিস্তৃত এই বনাঞ্চলে সাদা বাইন, কালো বাইন, কেওড়া, নোনিয়া, হরগোজসহ প্রায় ৩০ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ বন আজ হুমকির মুখে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে প্রভাবশালী মহল, বিশেষত আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের সদস্যরা চিংড়ি প্রকল্প ও লবণ মাঠ স্থাপনের নামে নির্বিচারে ম্যানগ্রোভ কেটে উজাড় করছেন। প্রশাসনের নাকের ডগায় বন উজাড় হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

চকরিয়ার পরিবেশকর্মী নুরুল আমিন বলেন, "১৯৭৭ সাল থেকে বন ধ্বংস শুরু হয়েছে। এখন বন নেই বললেই চলে। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ছত্রছায়ায় সব দখল হয়ে গেছে।"

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সোনাদিয়ার খাল-মোহনা-বনাঞ্চলে ১৯ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ৫০ প্রজাতির কাঁকড়া, ৮০ প্রজাতির সাদা মাছ, ৬৫ প্রজাতির স্থানীয় ও যাযাবর পাখি, ৩ প্রজাতির ডলফিন, সামুদ্রিক কাছিম, মেছো বাঘ, শিয়াল ও নানা সরীসৃপসহ অসংখ্য মেরুদণ্ডী-অমেরুদণ্ডী প্রাণী রয়েছে।

নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের (নেকম) কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাইয়ুম জানান, "গত কয়েক বছরে প্রায় ৩৫টি জায়গায় অবৈধ চিংড়ি ঘের তৈরির জন্য দিনরাত এক্সকাভেটর চালিয়ে লাখো গাছ কেটে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।" তিনি আরও বলেন, "পরিবেশ অধিদপ্তর দু-একটি মামলা করেছে, কিন্তু প্রভাবশালী রাঘববোয়ালদের নাম মামলায় নেই।"

বর্তমানে দ্বীপটিতে মাত্র ৮১০ জন মানুষের বসবাস। ২০১২ সালের তথ্য অনুযায়ী, ভোটার ৩৮৪ জন। বেশিরভাগ পরিবার মৎস্য আহরণে যুক্ত। শীত মৌসুমে উৎপাদিত শুঁটকি সারা দেশে জনপ্রিয় এবং অতীতে বহু পর্যটক সোনাদিয়ার শুঁটকির জন্য দ্বীপে ছুটে যেতেন। শিক্ষার অবস্থা দুর্বল; দুটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া উল্লেখযোগ্য কিছু নেই। মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় প্রাথমিক শেষ করেই অধিকাংশ শিশুর পড়াশোনা থেমে যায়।

পরিবেশবিদদের মতে, সোনাদিয়া পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হওয়ায় এখানে স্বেচ্ছাচারী পর্যটন নয়, ইকো ট্যুরিজমই হতে পারে উপযুক্ত সমাধান। দ্বীপবাসীর সম্পৃক্ততায় কমিউনিটি-ভিত্তিক পর্যটন, জীববৈচিত্র্য রক্ষা, বিকল্প কর্মসংস্থান ও পরিবেশসম্মত পর্যটন অবকাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন। সঠিক পরিকল্পনায় এগোলে সোনাদিয়া দেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন গন্তব্য হতে পারে এবং অর্থনীতিতেও নতুন গতি যোগ হতে পারে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার ভান্ডার, জীববৈচিত্র্যের রত্নগর্ভ এবং পরিবেশগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সোনাদিয়া দ্বীপ আজ উন্নয়নহীনতা, দখলদারি ও অব্যবস্থাপনার চাপে অস্তিত্ব সংকটে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশবিদরা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনা, পরিবেশবান্ধব পর্যটন এবং কঠোর আইনপ্রয়োগ ছাড়া এই দ্বীপের সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা সম্ভব নয়।

জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মান্নান জানান, "সোনাদিয়ায় বন ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্যারাবন পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন উদ্যোগ চলছে।"

মাসুম/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]