গ্রামের সাধারণ কৃষক পরিবারের সন্তান হয়েও যে বিসিএস ক্যাডারে একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া যায় তা প্রমাণ করেছেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ১নং পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বারোমারী এলাকার আন্ধারুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আব্দুল কুদ্দুসের পুত্র মো. আল আমিন। তিনি সম্প্রতি ঘোষিত ৪৫তম বিসিএস পরীক্ষার ফলাফলে কৃষি ক্যাডারে কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
বর্তমানে তিনি নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক মদন শাখার দ্বিতীয় কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি কিছুদিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নালিতাবাড়ী উপজেলায় শিক্ষকতা করেছেন। কৃষক আব্দুল কুদ্দুসের দুই ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে আল আমিন দ্বিতীয়। গ্রামীণ কৃষক পরিবার হলেও কুদ্দুসের পরিবারের সবাই শিক্ষিত। গ্রামের মানুষ আব্দুল কুদ্দুসকে একজন আদর্শ কৃষক হিসেবেই চেনেন।
শিক্ষা জীবনে আল আমিন নালিতাবাড়ী উপজেলার আন্ধারুপাড়া গ্রামের ব্র্যাক স্কুল থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। পলাশীকুড়া জনতা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৭ম শ্রেণি ও শেরপুর সদরের আইডিয়াল প্রিপারেটরি এন্ড হাই স্কুল থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। পরে শেরপুর সরকারী কলেজ থেকে ফের জিপিএ ৫ পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষা পাস করার পর তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ থেকে কৃতিত্বের সাথে কৃষিতে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কৃষক পরিবারের সন্তান হলেও আল আমিনের স্বপ্ন ছিল একজন বিসিএস ক্যাডার হওয়ার। তাই তার স্বপ্ন পুরণে নিরলসভাবে পড়াশোনা করেছেন। সর্বশেষ ৪৫তম বিসিএসে কৃষি ক্যাডারে কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় তার স্বপ্ন পুরণ হয়েছে। আল আমীনের বাবা আব্দুল কুদ্দুস জানান, আমার সন্তানকে উচ্চ শিক্ষিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে আমি ও আমার স্ত্রী আয়েশা বেগম অত্যন্ত পরিশ্রম করেছি। আমার ছেলে আমার পরিবার, গ্রামবাসী ও এলাকার মানুষের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আমি আমার সন্তান আল আমিনের জন্য দোয়া চাই সে যেন দেশ ও দেশের মানুষকে বিশেষ করে কৃষক শ্রেণির মানুষের সেবা করতে পারে। এমনকি আমি চাই সমাজের প্রতিটি ঘরে ঘরে আমার আল আমিনের মতো মেধাবী শিক্ষার্থী জন্ম নিয়ে দেশের জন্য অবদান রাখুক।
জানতে চাইলে সুপারিশপ্রাপ্ত আল আমিন জানান, একজন ভালো, আদর্শবান ও সৎ মানুষ হওয়াই আমার জীবনের মুল লক্ষ্য। শিক্ষা জীবনের শুরুতেই স্বপ্ন বুনেছিলাম ভালোভাবে পড়াশোনা করে ভালো একটা সরকারি প্রতিষ্ঠানে সম্মানের সহিত চাকরি করবো। আলহামদুলিল্লাহ বিসিএস আমাকে সেই লক্ষ্যে কাজ করার জন্য মনোনীত করেছে।
তিনি আরো জানান, ক্যাডার অফিসারদের সম্মান, মর্যাদা, কাজের সুযোগ, প্রটোকল, গাড়ি ও আর্থিক সুবিধা আমাকে বিসিএস এর প্রতি অনুপ্রানিত করেছে। শিক্ষা জীবনে মাঝে মাঝে যখন বিভিন্ন কাজের জন্য সার্টিফিকেটসহ অন্যান্য কাগজপত্র সত্যায়িত করার প্রয়োজন পড়তো তখন উপজেলা শহর কিংবা জেলা শহরে ক্যাডার অফিসারদেন কাছে চলে যেতাম। ভাবতাম আমার এতবড় গ্রাম এলাকা এখানে কাগজপত্র সত্যায়িত করার কেউ নেই। আমার পোড়াগাঁও ইউনিয়নে হাতে গোনা কয়েকজন বিসিএস ক্যাডার আছেন। তারাও চাকরির জন্য অন্য জেলাতে থাকতেন। তখন ভাবতাম আমি বিসিএস ক্যাডার হতে পারলে আমার এলাকার সাধারন শিক্ষার্থীদের হয়তো এই সমস্যাটা কিছুটা হলেও লাঘব করতে পারবো।
তিনি জানান, আমার প্রাণের আন্ধারুপাড়া গ্রাম যেখানে আমার বেড়ে ওঠা। যে গ্রামের মাটি, পানি ও বাতাসে আমার বড় হওয়া। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে গত ৪৫ টা বিসিএস এ আমিই সম্ভবত প্রথম বিসিএস ক্যাডার অফিসার হিসাবে মনোনিত হয়েছি। আমার এই অর্জন শুধু আমার বা আমার পরিবারের অর্জন নয় বরং আমার পুরো গ্রামবাসী ও ইউনিয়নবাসী সবার অর্জন। আমি সকলের কাছে দোয়া প্রার্থী।
আল আমিন আরো জানান, আমার এই কৃতিত্বের সাথে সফলতায় যাদের অবদান সবচেয়ে বেশি তারা হলেন- আমার বাবা-মা, খোদেজা খালা ও আমার স্ত্রীসহ অনেকে। আমি মনে করি শিক্ষা জীবনে নিজের সর্বোচ্চ পরিশ্রম, চেষ্টা, বুঝে বুঝে পড়ালেখা করা, মানুষের দোয়া, আল্লাহর রহমত, ভাগ্য, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা ও সবকিছুর সমন্বয়েই ভালো কিছু করা সম্ভব। সর্বোপরি সকলের কাছে আমি দোয়াপ্রার্থী আমার সামনের দিনের দায়িত্বগুলো যেন নিষ্ঠার সাথে পালন করতে পারি।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর