ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে সাদ্দাম হোসেন-(৩৫) নামে ছাত্রদলের সাবেক এক নেতাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে খুন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) মধ্যরাতে শহরের কান্দিপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত সাদ্দাম হোসেন সদর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সদস্য ছিলেন। তিনি শহরের কান্দিপাড়ার মাইমলহাটির মোস্তফা কামাল ওরফে মস্তুর ছেলে। তার সাত এবং দুই বছরের দুটি মেয়ে আছে। সাদ্দাম হোসেনের পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা ও তার সহযোগীরা তাকে হত্যা করেছেন।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কান্দিপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন দীলিপ ও একই এলাকার বাসিন্দা সদর উপজেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাকিল সিকদারের মধ্যে সম্প্রতি বিরোধ চলে আসছিল।
এর জেরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে কান্দিপাড়া মাদরাসা রোডের পপুলার প্রেসের সামনে গুলির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজে শাকিল সিকদারকে বন্দুক হাতে গুলি করতে দেখা যায়। গুলিতে কান্দিপাড়ার টুটুল মিয়া-(৪৬), শিহাব উদ্দিন ওরফে সোয়েব- (২৭) ও মো. সানজু-(২২) গুলিবিদ্ধ হন। উন্নত চিকিৎসার জন্য বৃহস্পতিবার রাতেই তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়।
এদিকে শহরের ফারুকী বাজারের চালের দোকান বন্ধ করে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে কান্দিপাড়ার বাড়ির ফটকের সামনে গিয়ে দাঁড়ান রবিন মিয়া। এ সময় দেলোয়ার হোসেন দীলিপের অনুসারীরা বাড়ির সামনে রবিনকে মারধর করেন। তাকে রক্ষা করতে গেলে রবিনের ছোট ভাই রিজন মিয়াকেও মারধর করা হয়। পরে সাদ্দাম হোসেনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।
নিহত সাদ্দামের বাবা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে সাদ্দাম বাসায় ভাত খাচ্ছিল। তখন দেলোয়ার হোসেন দীলিপ, তার সহযোগী পলাশ ও বাবুল মিয়া বাড়ি থেকে ডেকে সাদ্দামকে নিয়ে যান। রাত দুইটার দিকে সাদ্দাম গুলিবিদ্ধ হয়েছে শুনতে পাই। কান্দিপাড়ার শংকর সাহার বাড়ির পাশের খালপাড়ের নতুন সেতুর ওপরে গিয়ে দেখি, দুজন সাদ্দামকে টানাহেঁচড়া করে তোলার চেষ্টা করছে। তাকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সাদ্দামের বুকে গুলির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার গলায় ওড়না প্যাঁচানো ছিল। ওড়না খুলে বুঝতে পারি, ছেলেকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।’ নিহত সাদ্দামের পিতা মোস্তফা কামাল আরও বলেন, ‘দেলোয়ার হোসেন দীলিপ হাসপাতালে এসেছিল। সে জানিয়েছে, শাকিল পেছন থেকে গুলি করেছে। কিন্তু পিছন থেইক্কা গুলি করলে বুকে কেন লাগব? দেলোয়ার হোসেন দিলীপ, বাবুল ও পলাশ বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। তারা প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এ কাজ করেছে।’
এদিকে হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার সকালে নিহত ছাত্রদল নেতার বাড়িতে জড়ো হন তার স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন দীলিপ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সাদ্দাম সব সময় আমার সাথে থাকত। আমি কেন তাকে খুন করব? আমি তাকে বাড়ি থেকে ডেকে আনিনি। সে আমার সাথেই ছিল। পেছন থেকে আমাদের উদ্দেশ্য করে শাকিল ও তার লোকজন গুলি করে। আমরা দৌড়ে পালিয়ে যাই। তারা সাদ্দামকে গুলি করে হত্যা করেছে। তার পরিবার আমার বিরুদ্ধে কেন এসব বলছে, বুঝতে পারছি না।’
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গুলির ঘটনা ঘটে। একই এলাকার দীলিপ গ্রুপ ও শাকিল গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এই বিরোধের জের ধরেই মধ্য রাতে সাদ্দামকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কে বা কারা এ কাজ করেছে এখনো জানা যায়নি। নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম সিরাজ বলেন, ‘কান্দিপাড়ায় একটি খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা শুনেছি। কে বা কারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তা আমরা জানি না। আমরা খোঁজ-খবর নিয়ে পরে বিস্তারিত বলব।’
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর