স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের খসড়াটি দ্রুত অনুমোদনের জোর দাবি জানিয়েছে উবিনীগ (উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা) ও তাবিনাজ (তামাক বিরোধী নারী জোট)। এই লক্ষ্যে উবিনীগ ও তাবিনাজ গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম কনফারেন্স হলে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে তামাকের ভয়াল থাবা থেকে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা এবং অধূমপায়ীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে বর্তমান আইনটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করা জরুরি বলে উপস্থিত সদস্যরা দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে মূল উপস্থাপনায় তামাকের ভয়াবহ স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষতির চিত্র তুলে ধরা হয়। জানানো হয়, তামাকের ধোঁয়ায় প্রায় ৭০০০ ধরণের রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে, যার মধ্যে ২৫০টি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
বাংলাদেশে প্রতি বছর তামাকজনিত রোগে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন এবং বর্তমানে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত (টোব্যাকো এটলাস, ২০২২)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্ক, ইউনিভার্সিটি অফ এডিনব্যার্গ এবং লিডস সিটি কাউন্সিলের জনস্বাস্থ্য বিভাগের যৌথ গবেষয়াণায় দেখা গেছে ঢাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯২% শিক্ষার্থীর লালায় নিকোটিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা পরোক্ষ ধূমপানের ভয়াবহ বিস্তার নির্দেশ করে।
অর্থনৈতিক ক্ষতির দিকটি তুলে ধরে হাসানুল হাসিব আল গালিব বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক খাত থেকে সরকার যে রাজস্ব পেয়েছিল, তার চেয়ে ৩৪% বেশি অর্থ ব্যয় হয়েছে তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায়। এছাড়া তামাক চাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বন উজাড় এবং পরিবেশ দূষণের বিষয়ও তুলে ধরেন তিনি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রস্তাবিত খসড়া আইনে তামাক নিয়ন্ত্রণে যে ৬টি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে, সেগুলোর পক্ষে উবিনীগ ও তাবিনাজ দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করে:-
১. সকল পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান' (Designated Smoking Areas - DSA) বিলুপ্ত করা। ২. বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকপণ্যের প্রদর্শনী (Product Display) নিষিদ্ধ করা।
৩. তামাক কোম্পানির তথাকথিত সামাজিক দায়বদ্ধতা (CSR) কার্যক্রম পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা। ৪. তরুণদের সুরক্ষায় ই-সিগারেট ও ভ্যাপিং পণ্য উৎপাদন, আমদানি ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা।
৫. তামাকপণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০% থেকে বাড়িয়ে ৯০% করা।
৬. বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশনা লঙ্ঘন করে বৈশ্বিক তামাক কোম্পানি ফিলিপ মরিসকে (Philip Morris) বাংলাদেশে নিকোটিন পাউচ তৈরির কারখানা স্থাপনের অনুমোদন দেওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং অবিলম্বে এই অনুমোদন বাতিলের দাবি জানিয়েছে উবিনীগ এবং তাবিনাজ সদস্য।
তামাক কোম্পানির বিভিন্ন অপপ্রচারের জবাব দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আইন শক্তিশালী হলে রাজস্ব কমার আশঙ্কা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। অতীতে ২০০৫ ও ২০১৩ সালে আইন পাসের পর রাজস্ব আয় বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও কর্মসংস্থান হারানোর যে ভয় দেখানো হয় তা বাস্তবসম্মত নয়। বিবিএস-এর জরিপ অনুযায়ী, দেশে বিড়ি শ্রমিকের সংখ্যা তামাক কোম্পানির দাবিকৃত সংখ্যার চেয়ে অনেক কম এবং খুচরা বিক্রেতারা কেবল তামাক পণ্য বিক্রি করেন না, তাই তাদের জীবিকা বিপন্ন হওয়ার শঙ্কা নেই।
পরিশেষে, মাদকের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত তামাক থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে প্রস্তাবিত আইনটি দ্রুত পাস করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় উবিনীগ ও তাবিনাজ সদস্যরা।
উপস্থিত সদস্যবৃন্দ:
১. ইকবাল মাসুদ, পরিচালক, স্বাস্থ্য ও ওয়াস সেক্টর।
২. আঞ্জুমান আখতার, ডিপুটি কান্ট্রি ডাইরেকটার, হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড।
৩. আমিনূর রসুল,সদস্য, স্বাস্থ্য আন্দোলন নেটওয়ার্ক।
৪. সীমা দাস সীমু, পরিচালক, উবিনীগ (উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণা)।
৫. শারমিন কবির বীনা, তাবিনাজ, সদস্য, তাবিনাজ (তামাক বিরোধী নারী জোট)।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর