ফেনী পাসপোর্ট অফিসে আবেদন জমা গ্রহনে গ্রাহকদের হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। সংলিষ্ট কয়েকজন ভুক্তভোগীর সূত্র মতে, বর্তমানে পাসপোর্ট অফিসে ফাইল জমা নিতে চায় সত্য তবে বিভিন্ন ভাবে হয়রানির স্বীকার হতে হয়।
এ বিষয়ে আদনান কাওচার রিসাত নামে এক ভুক্তভোগী প্রতিবেদককে জানান, আমার পরিবারের কয়েকজনের পাসপোর্ট করতে গিয়ে ফেনী পাসপোর্ট অফিসের নানা ধরনের দুর্নীতি, ঝামেলা এবং হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়েছে। অফিসের সামনে বড় করে লেখা থাকে-"দালাল মুক্ত পাসপোর্ট অফিস", কিন্তু বাস্তবে মানুষজন বলছে-"এরা নিজেরাই তো দালাল!"
নিজে আবেদন করতে গেলে অজুহাত দেখিয়ে ঘুরানো হয়, সাধারণ ভুল নিয়েও হয়রানি করা হয়। কিন্তু দালাল দিয়ে গেলে সব কাজ ঝামেলা ছাড়াই হয়ে যায়।
১. প্রথম আবেদন: সিগনেচারের জন্য এক সপ্তাহ দেরী: প্রথমবার আবেদন করার সময় আমি NID নম্বর ও জন্ম নিবন্ধন নম্বর দুইটাই দিয়েছিলাম। তারা বলল, একটি দিতে হবে এবং একটি আবেদনপত্র জমা দিতে হলো। আবেদন জমা দেওয়ার পর বলল—২–৩ দিন লাগবে, মেসেজ আসবে। ৩ দিন পর মেসেজ না এলে আবার যাই—তখন বলে মেসেজ এলে আসবেন। রবিবার গেলে অফিসার শুধু একটা সিগনেচার করেই কাজ শেষ করলেন।প্রশ্ন হলো—একটা সিগনেচারের জন্য কি সত্যিই এক সপ্তাহ দেরি করানো লাগে?
২. জন্ম নিবন্ধন নিয়ে বাড়াবাড়ি: দ্বিতীয়বার জন্ম নিবন্ধনের মূল কপি ও অনলাইন কপি দেয়া ছিল। অনলাইন কপিতে বাংলা-ইংরেজি দুটোই দেখা যায়—তবুও তারা মানল না। এখানে আমার ভুল ছিল—এটা আমি মানি। কিন্তু দালাল দিয়ে করলে এমন ঝামেলা তারা কাউকে করে না।
৩. দালাল দিয়ে করলে আলাদা সুবিধা: দালালের কাগজ তারা উপরের তলায় জমা নেয়—লাইন নেই, ঝামেলা নেই। নিজে আবেদন করলে নিচতলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দিতে হয়। দালালদের কাগজে ভুল খুঁজে না—কিন্তু সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে ছোট জিনিস নিয়েও ঝামেলা।
এছাড়াও ফজলুল মিলন নামে এক ব্যক্তি ৫টি পাসপোর্ট দালাল দিয়ে ৩০,০০০ টাকা খরচে করিয়েছেন।
তাকে প্রতিবেদক জিজ্ঞেস করলেন নিজে করলে কম খরচে হতো। তিনি বললেন—“ভাই, নিজেরটা করতে গেলে এত হয়রানি করে যে দালাল ছাড়া উপায় নাই!”
এছাড়াও ফেনী পাসপোর্ট অফিসে, সরকারি ফি-এর তুলনায় অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়।
৪৮ পেজ (৫ বছর): ৪,০২৫ টাকা ,কিন্তু দালাল নেয় ৫,০০০–৬,০০০ টাকা
৪৮ পেজ (১০ বছর): ৫,৭৫০ টাকা ,দালাল নেয় ৭,৫০০–৮,০০০ টাকা।
এছাড়াও এখানে দালালদের একটি কোড থাকে। পাশ্ববর্তী কম্পিউটার দোকানে কাজ করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রতিবেদককে জানান, পাসপোর্ট অফিস নাকি দালালদের জন্য বিশেষ ইমেইল কোড থাকে। সেই কোড থাকলে অফিসের লোকজন বুঝে যায়—“এটা দালালের কাস্টমার।” এভাবে কোড দিয়ে যদি দালালদের চিনে নেওয়া হয়— তাহলে এটা কেমন দালাল-মুক্ত অফিস প্রশ্ন গ্রাহকদের।
স্থানীয় শান্ত শর্মা জানান, দালাল ছাড়া কাজ হয় না। আমরা মানলাম আমাদের ভুল আছে কিন্তু তারা যে কাজটি করতেছে টা কি ঠিক? আমাদের প্রশ্ন? দালাল-মুক্ত সাইনবোর্ড টাঙিয়ে রেখে নিজেরাই যদি দালালের ভূমিকা পালন করে—তাহলে মানুষ বিশ্বাস করবে কীভাবে? সাধারণ মানুষের হয়রানি কি বন্ধ হবে? আমরা কি সত্যিই কোনোদিন দালাল-মুক্ত পাসপোর্ট অফিস দেখতে পাব?
ফেনী জেলা এবি পার্টির সভাপতি মাস্টার আহসান উল্লাহ জানান, আমার কয়েকজন আত্নীয় ভুক্তভোগী হয়। তাদেরকে প্রথমে কাবিনের প্রকৃত কপির জন্য চাপ দেয়। পরে ফটোকপি আনলেও জমা নিতে রাজি হয় নি। পরে ডিডি মোঃ জাহাঙ্গীর আলম কে দেখালে তিনি সাক্ষর করেন।
এ বিষয় জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমি আসার পর হতে সেবার মান বেড়েছে। আপনি পরিচয় গোপন রেখে পর্যবেক্ষন করুন। যারা অভিযোগ করেছে বৃত্তিহীন অভিযোগ করেছে। বর্তমানে এখানে সেবার মান উন্নত। মানুষের দীর্ঘ লাইন নেই। মানুষ আসা মাত্র কাগজ পত্র ঠিক থাকলে আমরা সাথে সাথে ছবি ফিঙ্গারের জন্য পাঠাই।
মাসুম/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর