বিতরণের সময় সার না পেয়ে বিক্ষুব্ধ কৃষকদের হামলার শিকার হয়েছেন এক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বিকালে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার উমরাডাঙ্গী বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
গুরুতর আহত অবস্থায় ওই কৃষি কর্মকর্তাকে প্রথমে রাণীশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে গম, ভুট্টা ও সরিষার চাষ বেড়ে যাওয়ায় উপজেলায় সারের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সরবরাহ কম থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই কৃষকরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
কৃষকদের অভিযোগ, রবি মৌসুমে আলু, গম, ভুট্টা ও সরিষার চাষে ব্যস্ত থাকলেও ডিলারদের কাছে পর্যাপ্ত সার মিলছে না। সার বিতরণের সময় কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা আকতার হোসেনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি থেকে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এ সময় অন্য পাঁচ কৃষক তিনটি ভ্যানে ৩৩ বস্তা সার নিয়ে চলে যেতে দেখেন উপস্থিত কৃষকরা, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে।
স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, মল্লিক ট্রেডার্সের প্রতিনিধি মোজাম্মেল হোসেনের তত্ত্বাবধানে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আকতারুল ইসলামের উপস্থিতিতে কৃষকদের মধ্যে সার বিতরণ চলছিল। এ সময় তিনটি ভ্যানগাড়িতে করে ৩৩ বস্তা সার নিয়ে যাচ্ছিলেন পাঁচজন কৃষক। এতে সার নিতে আসা অন্য কৃষকেরা বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মুহূর্তেই পরিস্থিতি উত্তেজনাকর হয়ে ওঠে। হট্টগোল বাড়তে থাকায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বিকালে খাবারের কথা বলে ঘটনাস্থল ছাড়তে চাইলে পরে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম তাকে সঙ্গে নিয়ে ফের বিতরণ স্থলে আসেন। তখন উপস্থিত লোকজন আকতারুল ইসলামের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করেন। এতে তার দাঁত ভেঙে যায় এবং মাথায়ও গুরুতর আঘাত পান। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে রাণীশংকৈল উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান বলেন, “সকালে শান্তভাবেই সার দিচ্ছিল। পরে দেখি কয়েকজন একসঙ্গে বস্তা তুলে নিয়ে চলে যাচ্ছে। তখন লাইনে থাকা লোকজন চিৎকার শুরু করে। সবাই রেগে যায় কে আগে সার পেল, কে না পেল এই নিয়ে।”
স্থানীয় আকবর আলী বলেন, “আমরা দেখি কৃষি কর্মকর্তারা চেষ্টা করছিল পরিস্থিতি সামাল দিতে। কিন্তু ভিড় এত বেশি, আর মানুষের রাগ এমন জায়গায় পৌঁছায় যে, কেউ একজন কথা-কাটাকাটি করতে গিয়েই মারামারি বেধে যায়। তারপর মুহূর্তেই সব গরম হয়ে যায়।”
আরেক স্থানীয় জুয়েল বলেন, “কেউ ইচ্ছা করে মারধর করবে এমন মনে হয় না। কিন্তু যে ভিড়টা তৈরি হয়েছিল, তাতে ঠেলা ধাক্কা, উত্তেজনা মিলেই পুরো ঘটনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কর্মকর্তার দাঁত ভেঙে যাওয়া খুবই দুঃখজনক। আমাদের এলাকায় এখনো সারের পর্যাপ্ত সংকট রয়েছে। মূলত সারের সংকটের কারণে এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে।”
এ বিষয়ে রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, সার বিতরণের সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় আখতারুল ইসলাম নামে উপসহকারী আহত হয়েছেন। রোগীর মাথায় জখম হয়েছে, একটি দাঁত ভেঙে গেছে। আখতারুল ইসলাম বর্তমানে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসা শেষে ভুক্তভোগীর মতামত অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত রফিকুল ইসলাম বলেন, কৃষি অফিস লিখিত অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাসুম/সাএ
সর্বশেষ খবর