• ঢাকা
  • ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৪১ সেকেন্ড পূর্বে
শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০:১২ দুপুর

মানব অবহেলার নীরব সাক্ষী প্লাস্টিক দানব

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

কক্সবাজারের নীল সমুদ্রের গর্জনের মাঝেই দাঁড়িয়ে আছে এক নীরব সতর্কবার্তা- প্লাস্টিকের দৈত্য। দূর থেকে মনে হয়, যেন কোন অদৃশ্য বিপর্যয়ের দূত বালিয়াড়ি পেরিয়ে উঠে এসেছে তটে। কাছে গেলে বোঝা যায়- এটা কেবল ভাস্কর্য নয়; মানুষের ফেলে যাওয়া প্লাস্টিকের পাহাড় কীভাবে আমাদের পৃথিবীকেই দানবে পরিণত করছে, তার প্রতিবিম্ব।

বালুরাশির ওপর ঠাঁই নেওয়া এই দৈত্যের বুক চিরে বেরিয়ে এসেছে ছড়িয়ে থাকা প্লাস্টিক। পৃথিবীকে দুই ভাগ করা সেই চিত্র যেন বলে দেয়- সমুদ্র আর প্রকৃতি আজ মানব-অবহেলার নিষ্ঠুরতার মুখোমুখি। ঢেউয়ের শব্দের মধ্যেও তাই যেন শোনা যায় এক নীরব আর্তনাদ; ‘আমাকে বাঁচাও, নিজেকেই রক্ষা করবে।’

সৈকতের এই প্লাস্টিক দানব কেবল চোখের জন্য দৃশ্য নয়; এটি আমাদের ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবি, আমাদের অপরাধের প্রমাণ, এবং শেষ হয়ে আসা সময়ের শেষ সতর্কবার্তা।

পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে তৈরি এই ভাস্কর্য নির্মাণ করেছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। তিন মাসব্যাপী চিত্রপ্রদর্শনী এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সেটি এখন সৈকতের বালিয়াড়িতে প্রদর্শিত হচ্ছে। উদ্বোধন করেছেন জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শহীদুল আলম, বিদ্যানন্দের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিনসহ আরও অনেকে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়- বালিয়াড়ির বুকে দাঁড়িয়ে আছে এক বিশাল রক্ত-মাংসহীন দৈত্য। তার থাবায় ক্ষত-বিক্ষত প্রকৃতি, ক্ষয়ে যাওয়া মানবদেহ আর অস্থির পৃথিবীর প্রতিচ্ছবি। প্রথম দেখায় ভয় ধরিয়ে দেয়, কিন্তু কাছে গেলেই স্পষ্ট হয় এর বার্তা- প্লাস্টিক দূষণে মৃতপ্রায় জীববৈচিত্র্যের আর্তনাদ।

ভাস্কর্যের কেন্দ্রে রয়েছে একটি বিশাল পৃথিবী, যেটিকে দুই ভাগ করে ফেলে দানবটি। পৃথিবীর বুক চিরে বেরিয়ে আসা প্লাস্টিক যেন বলছে- পৃথিবী দম বন্ধ হয়ে আসার মতো প্লাস্টিক চাপ বহন করছে।

জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান বলেন, ‘এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে মানুষ প্লাস্টিক ব্যবহারে সতর্ক হবে। সৈকত রক্ষায় এটি আমাদের এক যৌথ প্রচেষ্টা।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের একদল শিল্পী দানবটি নির্মাণ করেছেন। ভাস্কর আবীর কর্মকার জানান- এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘ওশান প্লাস্টিক দানব’, যার নির্মাণে ব্যবহার হয়েছে প্রায় ৬ টন বর্জ্য প্লাস্টিক, সঙ্গে কাঠ, পেরেক, আঠা ইত্যাদি উপকরণ।

বিদ্যানন্দের দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবক মুহাম্মদ মুবারক জানান, গত চার মাসে কক্সবাজার, ইনানী ও টেকনাফ সমুদ্রসৈকত থেকে অন্তত ৮০ টন সামুদ্রিক প্লাস্টিক সংগ্রহ করা হয়েছে। এর একটি অংশ দিয়ে তৈরি হয়েছে এই ভাস্কর্য। মানুষকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চেয়েছি- সমুদ্র কতটা চাপের মুখে।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সদস্য জামাল উদ্দিন জানান, ভাস্কর্যের পাশাপাশি থাকছে চিত্রপ্রদর্শনী, পথনাটক ও সংগীতানুষ্ঠান। মূল উদ্দেশ্য- সৈকতবাতাসে ভেসে বেড়ানো আনন্দে যেন প্লাস্টিক দূষণের কঠিন সত্যটিও মানুষের মনে ধরা দেয়।

সংশ্লিষ্টদের মতে, কক্সবাজার সৈকতের এই প্লাস্টিক দানব কেবল ভাস্কর্য নয়; এটি আমাদের ভোগবাদী জীবনযাত্রার কঠোর প্রতিচ্ছবি। যে সমুদ্র হাজার হাজার বছর ধরে মানুষকে দিয়েছে জীবন, সৌন্দর্য ও সম্পদ- সেই সমুদ্র আজ শ্বাসরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে মানুষের পরিত্যক্ত প্লাস্টিকে।

সাজু/নিএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]