হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ১০ জন নেতা দীর্ঘদিন ধরে প্রচারণা চালালেও সবাইকে টপকে দলের যোগদানের তিন দিনের মাথায় চমক দেখালেন ড. রেজা কিবরিয়া। তার এই মনোনয়নের মধ্য দিয়ে সকল জল্পনার অবসান ঘটলো। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বিকালে বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর হবিগঞ্জ-১ আসনে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার পুত্র ড. রেজা কিবরিয়ার নাম ঘোষণা করেন।
তার মনোনয়ন পাওয়ার পর নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলা বিএনপির মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলা বিএনপির 'সুপার ফাইভের' পাঁচ নেতা ড. রেজা কিবরিয়ার মনোনয়নকে স্বাগত জানিয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ তাকে স্বাগত জানালেও সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সুজাত মিয়া ও সাবেক মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরী এখনো কোনো মন্তব্য করেননি।
নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলা বিএনপি নেতারা বলেছেন, ড. রেজা কিবরিয়ার মনোনয়ন দলকে আরও শক্তিশালী করেছে। তারা মনে করেন, তিনি এলাকার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। দলের সিদ্ধান্ত মেনে তারা মাঠে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। তারা ড. রেজা কিবরিয়াকে একজন আন্তর্জাতিক মানের ব্যক্তিত্ব উল্লেখ করে তার মনোনয়নে আনন্দিত ও গর্বিত বলে মন্তব্য করেছেন।
নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মতিউর রহমান পেয়ারা, সিনিয়র সহ-সভাপতি বয়েতুল্লাহ মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মজিদুর রহমান মজিদ, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অলিউর রহমান অলি এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিদ আহমদ তালুকদার যৌথভাবে ড. রেজা কিবরিয়াকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে স্বাগত জানান। একই সুরে কথা বলেছেন বাহুবল উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফেরদৌস আহমদ চৌধুরী তুষার ও সাধারণ সম্পাদক হাজী শামসুল আলম।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুখলিছুর রহমান বলেন, তিনি দীর্ঘ ১০-১৫ বছর ধরে দলের জন্য কাজ করেছেন এবং এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছেন। এখন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা মেনেই কাজ করতে হবে। তিনি নবীগঞ্জ ও বাহুবলবাসীর পাশে থেকে দলের জন্য ও দলের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।
তবে, বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক পৌর মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরী বলেছেন, দলীয় মনোনয়নটি তৃণমূলের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। এর বেশি তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সুজাত মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো বক্তব্য দিতে চাননি এবং সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে লাইন কেটে দেন।
সদ্য বিএনপিতে যোগ দেওয়া অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, "আমি দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমাকে দলীয় প্রার্থী মনোনীত করার জন্য।" তিনি নবীগঞ্জ ও বাহুবলকে স্বপ্নের মতো গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, "সবাই অবাক হয়ে দেখবে বাংলাদেশের মধ্যে নবীগঞ্জ ও বাহুবল হবে একটি মডেল উপজেলা, যে স্বপ্ন আমার বাবা দেখতেন। আমি ৩৫টি দেশের উন্নয়নে কাজ করেছি, এখন শেষ বয়সে আমার দেশের মানুষের উন্নয়নে কাজ করতে চাই।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা মেধা ভিত্তিক সরকার চাই। আমি কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। আমার বাবা নবীগঞ্জ নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন, সেই রকম উন্নয়ন করবো, সেটা দেখলে মানুষ অবাক হবেন। আমি নবীগঞ্জ ও বাহুবলে টেকনিক্যাল কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউট করবো। নার্সিংয়ের জন্য ডিগ্রীর ব্যবস্থা করবো। আমার দাদা বাড়ি নবীগঞ্জ, দাদি বাড়ি বাহুবল, এখানে আমার নাড়ীর টান রয়েছে। শুধু নবীগঞ্জ নয়, সিলেট শহরকে একটি আদর্শ শহর বানাবো।"
শিক্ষার মান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমাদের এলাকায় স্কুল কলেজ এতো উন্নতমানের নয়, উন্নত মানের স্কুল কলেজ গড়ে তুলতে হবে, শিক্ষার মান আরও উন্নত করতে হবে। আমাদের শিক্ষার মান আশানুরূপ নয়। আমার বাবা একজন অনির্বাচিত অর্থমন্ত্রী হয়ে কী করেছেন আপনারা দেখেছেন, আমি নির্বাচিত হয়ে আপনাদের উন্নয়নে কাজ করবো।"
আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বর্তমান সরকারের প্রশাসনিক দক্ষতার স্বল্পতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, "একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য যে সামগ্রিক সক্ষমতা প্রয়োজন—ভোটকেন্দ্রে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোটবাক্স সুরক্ষিত রাখা—সবকিছুতেই বর্তমান সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ফলে আগামী নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হবে, তা নিয়ে জনগণের মনে গুরুতর সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।"
মাসুম/সাএ
সর্বশেষ খবর