ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার গ্রামীণ জনপদে এখন আমন ধান কাটাকে ঘিরে নবান্নের আনন্দঘন উৎসব চলছে। মাঠে মাঠে সোনালি ধানের দোলা, কোথাও ধান কাটা, কোথাও মাড়াই, আবার কেউ ব্যস্ত সেদ্ধ ও শুকানোর কাজে—এসব মিলিয়ে গ্রামজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে প্রাণচঞ্চল পরিবেশ।
ভোর থেকেই কৃষক-কৃষাণীরা দল বেঁধে মাঠে ছুটছেন, আর নতুন ধানের মৌ মৌ ঘ্রাণে ভরে উঠেছে চারদিক। পুরুষদের পাশাপাশি নারী ও শিশুরাও সমানতালে যুক্ত হচ্ছে এ কৃষি উৎসবে। সারাদিনের হাড়ভাঙা পরিশ্রম শেষে সন্ধ্যায় চায়ের দোকানে কৃষকদের আড্ডায় জমে উঠছে উৎসবের উচ্ছ্বাস। বিভিন্ন গ্রামে রাতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কিচ্চার আসর এবং অতিথি আপ্যায়ন।
গৃহবধূরা নতুন চাল দিয়ে নানান পিঠা-পুলি তৈরি করছেন। শীতের সকালে পিঠা খেয়েই কৃষকেরা আবার রওনা হচ্ছেন মাঠে, আর রাতে নারীরা একত্রে বসে নবান্নের গল্প আর পিঠার আয়োজন নিয়ে আলোচনা করছেন।
চরাঞ্চলের কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, “এবার ধানের ফলন খুবই ভালো। আবহাওয়া অনুকূলে ছিল, আর আগাম জাতের ধান দ্রুত কাটায় একই জমিতে সরিষা বুনতে পেরেছি। এতে আয়ও বাড়বে।”
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, এ মৌসুমে উপজেলায় ১৯ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫০৫ হেক্টরে ব্রি ধান-৪৯ ও ১০৩ এবং ২ হাজার ৮১৫ হেক্টরে আগাম ও উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্রি ধান-৭১, ৭৫, ৮৭ ও বিনা-১৭ চাষ করা হয়েছে। আগাম জাতের ধান দ্রুত কাটার ফলে কৃষকেরা ওই জমিতেই সরিষা ও গমের আবাদ শুরু করেছেন।
নিজতুলন্দর ব্লকের কৃষক আব্দুস সামাদ ভূইয়া বলেন, “অগ্রহায়ণের শুরুতেই আগাম জাতগুলোর ধান পেকে যায়। কম সময়ে বেশি ফলন—এ দুই সুবিধায় কৃষকেরা এখন এসব জাত বেশি আবাদ করছেন।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিপা রানী চৌহান জানান, চলতি মৌসুমে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৭ হাজার ৪৪১ মেট্রিক টন। তবে অনুকূল আবহাওয়া, কৃষকের পরিশ্রম ও আগাম জাতের উচ্চ ফলনের কারণে সেই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে বলে তারা আশাবাদী।
তিনি আরো বলেন, “ঈশ্বরগঞ্জের গ্রাম এখন ধান কাটার উৎসবে মুখর। কৃষকের ঘরে ফসল ওঠায় নবান্নের আনন্দে একাকার হয়ে গেছে জনপদ।”
মাসুম/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর