শৈশবের টানে ফিরলেন কিশোরগঞ্জে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন , বন্ধুদের সাথে মনখুলে কথা বললেন, বন্ধুর সাথে বন্ধুর আলিঙ্গন করলেন। যেন ফুটে উঠেছিল ৬৩ বছর আগের স্মৃতি। তিনি ছোট বেলায় যে পুকুরে মাছ ধরেছেন, যে মাঠে খেলাধুলা করেছেন, নদীতে গোসল করেছেন, যে বাসায় থেকে শৈশব কাটিয়েছেন তা একনজর দেখতে ভুলেননি। পায়ে হেটে হেটে দেখে গেলেন ছোট বেলার কাটানো সময়ের এলাকার স্কুলসহ স্মৃতি বিজোড়িত মাগুড়া। শৈশবের স্মৃতিকে ভাসিয়ে তুললেন চোখের সামনে।
তিনি রোববার (৭ডিসেম্বর) সকালে শৈশবের বিদ্যালয় মাগুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে আসেন। তাঁর স্মৃতিবিজরিত নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও এলাকার সুধীজনের সাথে একটি মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি বলেন, বাচ্চাদের লেখাপড়ায় প্রচুর সময় ও সাপোর্ট দিন, তারা অনেকদুর এগিয়ে যাবে। অন্তর্র্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন দুপুরে কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ৬৩ বছর পর তাঁর কৈশোরকালের স্মৃতিবিজরিত প্রিয় প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হলে সকলেই উচ্ছ¡সিত হন। ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করে সমবেতরা। মঞ্চে তাঁর প্রিয় শিক্ষক জহুরুল ইসলাম উপস্থিত হলে আবেগ আপ্লুত হয়ে পরেন।
এসময় তিনি ৩ জন গুণি শিক্ষকের কথা স্বরণ করে বলেন, স্যাররা স্বল্প বেতনে মন থেকে পড়াতো বলেই আমি এই পর্যায়ে এসেছি। তবে লেখাপড়ার কোন বিকল্প নেই। কারণ আমার বাবা গ্রামে প্রথম গ্রাজুয়েট। তিনি ভাল ইংরেজী জানতেন। তিনি আমার দক্ষতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছেন। তিনি আরো বলেন, দেশে গত ৬০ বছরে শিক্ষার ক্ষেত্রে এক অভাবনীয় পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বিশেষ করে নারী শিক্ষার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। গ্রামে-গঞ্জে সকল বিদ্যালয়ে অর্ধেকের বেশী শিক্ষর্থী এখন নারী। তিনি উল্লেখ করেন, ছাত্র ছাত্রীর উপস্থিতি শিক্ষার মানোন্নয়ন নয়, রাষ্ট্রে তা ইমপেক্ট করা হচ্ছে শিক্ষার মান উন্নয়ন। শিক্ষার এ উন্নতির ফলেও বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ নিয়ে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষাখাতে মোট বাজেটের ২৫ শতাংশ বরাদ্দের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। শিক্ষার উন্নয়ন হলেও সে তুলনায় শিক্ষকদের বেতন ভাতা তেমন বাড়েনি। তিনি শিক্ষকদের পুর্বেকার সময়ের চেয়ে এখন অনেকটা বেতনভাতা বেড়েছে বলেও মনে করেন। তিনি শিক্ষা ও শিক্ষকদের মান উন্নয়নের দিকে গুরুত্বআরোপ করে বলেন, অনেক ক্ষেত্রে লেখাপড়া ছাড়াই পাশ করে দেয়ার প্রবণতা ছিল। বর্তমানে এ অবস্থা হতে বের হবার চেষ্টা করা হচ্ছে। শুধু বরাদ্দ বাড়িয়ে নয় গুনগত মানোন্নয়নের গুরত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু অর্থ বরাদ্দ নয় এর যথাযথ ব্যবহার করা প্রয়োজন। তিনি জিডিবির ১০ শতাংশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন। শিক্ষার গুনগতমান না বাড়ার কারণে বিদেশে গিয়েও আমাদের শ্রমিকেরা প্রতারিত হচ্ছে। অন্য দেশের তুলনায় আমাদের শ্রমিকেরা ৭৫ শতাংশ বেতন কম পায় বলে তিনি জানান।
তিনি আরো বলেন, অন্য দেশের তুলনায় ৫/৭ গুন বেশী টাকা দিয়ে আমাদের দেশের লোকজন বিদেশে শ্রমিক হিসাবে যায়, এটাকে তিনি রাষ্ট্রের ব্যর্থতা বলে উল্লেখ করেন। তিনি জনগণকে জনসম্পদে পরিনত করার উপর গুরত্ব দেন। মতবিনিময় সভা শেষে তিনি পায়ে হেটে শৈশবের স্মৃতি বিজরিত স্থানগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান, পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম (পিপিএম), উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) তনিমা জামান তন্বী, মাগুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান মিঠু প্রমুখ।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর