• ঢাকা
  • ঢাকা, সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১১ সেকেন্ড পূর্বে
নিউজ ডেস্ক
বিডি২৪লাইভ, ঢাকা
প্রকাশিত : ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৮:৪৩ রাত

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ভূমিকম্পপ্রবণ যে কারণে

ফাইল ফটো

চলতি মাসের ৪ তারিখ সকালে ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় আবারও ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪.১, যা এর আগের ভূমিকম্পের তুলনায় কিছুটা দুর্বল। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সকাল ৬টা ১৪ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডে নরসিংদীর শিবপুরকে কেন্দ্র করে এই ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।

ঢাকার আগারগাঁওয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, উৎপত্তিস্থলটি কেন্দ্র থেকে প্রায় ৩৮ কিলোমিটার উত্তর–পূর্বে অবস্থিত ছিল।

ইউরো-মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টারের তথ্যমতে, ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল গাজীপুরের টঙ্গী থেকে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার উত্তর–উত্তরপূর্বে এবং নরসিংদী শহর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার উত্তরে। ভূমিকম্পটির গভীরতা ছিল প্রায় ৩০ কিলোমিটার।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পটি হয় গত ২১ নভেম্বর। রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার ওই কম্পনে সারাদেশ কেঁপে ওঠে। এতে ১০ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হন, পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় অনেক ভবন ও স্থাপনা।

এর পরবর্তী ৩১ ঘণ্টায় ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় আরও চারবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ২৭ নভেম্বর বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে ঢাকায় আবারও চার মাত্রার কম্পন হয়, যার কেন্দ্র ছিল নরসিংদীর টঙ্গী এলাকায়। একই দিনে ভোরে সিলেট ও কক্সবাজারের টেকনাফে দুটি ভূমিকম্প আঘাত হানে।

২ ডিসেম্বর সোমবার রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে চট্টগ্রাম জেলায় ৪.৯ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর কেন্দ্র ছিল মিয়ানমারের মিনজিন অঞ্চলে। চট্টগ্রামসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে স্পষ্টভাবে এই কম্পন অনুভূত হয়।

সম্প্রতি আফগানিস্তানেও দুই দফা ভূমিকম্পে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সর্বশেষ গত নভেম্বরে মাজার-ই-শরিফের কাছে ৬.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে দেশটির উত্তরাঞ্চল ব্যাপকভাবে কেঁপে ওঠে।

এর দুই মাস আগে পূর্ব আফগানিস্তানে ছয় মাত্রার ভূমিকম্পে ২,২০০-এর বেশি মানুষ নিহত হন। যা দেশটির সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম প্রাণঘাতী ভূমিকম্প হিসেবে রেকর্ড হয়েছে।
এই সময়ের মধ্যে আরো কয়েকটি হামলা ও মাঝারি মাত্রার কম্পন অনুভব করেছেন দেশটির মানুষ। এই পরপর দুর্যোগগুলো আবারও একটি বিষয় স্পষ্ট করেছে যে এই অঞ্চল ভূমিকম্পের প্রতি কতটা সংবেদনশীল। দক্ষিণ এশিয়াকে বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে সবসময়ই চিহ্নিত করা হয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় এত ঘন ঘন ভূমিকম্প কেন হয়?

এক দশক আগে ২০১৫ সালের নেপাল ভূমিকম্পে প্রায় নয় হাজার মানুষ নিহত হন এবং ২০২৫ সালের মার্চে মায়ানমারে সাত দশমিক সাত মাত্রার ভূমিকম্পে তিন হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। এই অঞ্চলে শুধু গত এক দশকে বেশ কয়েকটি প্রাণঘাতী ভূমিকম্প হয়েছে, যাতে প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও কম নয়। কিন্তু এমনটা কেন হয়? দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো কি ভূমিকম্পপ্রবণ?

এর উত্তর লুকিয়ে আছে এই অঞ্চলের ভূপৃষ্ঠের অনেক অনেক গভীরে— যেখানে রয়েছে জটিল টেকটোনিক প্লেটের বিন্যাস। এই প্লেটগুলো ক্রমাগত সরতে থাকায় বারবার ভূমিকম্প হয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বহু টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। যেমন ভারতীয় প্লেট, ইউরেশিয়ান প্লেট, ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেট, সুন্দা প্লেট, বার্মিজ প্লেট এবং প্যাসিফিক প্লেট।

ভারতীয় প্লেট প্রতি বছর প্রায় পাঁচ সেন্টিমিটার করে উত্তর দিকে সরছে এবং ইউরেশিয়ান প্লেটের সঙ্গে ধাক্কা খাচ্ছে। এমন সংঘর্ষ থেকেই যেমন এক সময় হিমালয় পর্বতমালার সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি এখন প্রচণ্ড ভূ-ভৌগোলিক চাপ সৃষ্টি করছে এবং প্রাচীন ফল্ট লাইনগুলোকে পুনরায় সক্রিয় করে তুলছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় ভূমিকম্প এত বিধ্বংসী কেন?

দক্ষিণ এশিয়ার ভৌগোলিক রূপ বেশ জটিল। এখানে আছে উঁচু উঁচু পাহাড় ও গভীর উপত্যকা, সেইসঙ্গে আছে নরম পলি বা বালুকাময় মাটি, বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশে। এই ভৌগোলিক রূপ ভূমিকম্পের তীব্রতা আরো বাড়িয়ে দেয়।

এ অঞ্চলে টেকটোনিক প্লেটগুলোর অবস্থানও অগভীর ভূমিকম্পের সৃষ্টি করে, যা আরো বেশি ধ্বংসাত্মক, কারণ এতে বিস্তৃত এলাকার পৃষ্ঠ তীব্রভাবে কেঁপে ওঠে। এছাড়া এই অঞ্চলের বেশিরভাগ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা ঘনবসতি হওয়ায় হতাহতের সংখ্যাও বেশি হয়।

কাবুল, ইসলামাবাদ, দিল্লি, কাঠমান্ডু এবং ঢাকার মতো বড় শহরগুলোর অবস্থান মূল ফল্ট সিস্টেমের কাছাকাছি হওয়ায় এখানকার কোটি কোটি মানুষ ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে। দ্রুত নগরায়ন এবং নিরাপত্তা মানদণ্ড না মেনে করা নির্মাণকাজও এ অঞ্চলের ভবন ও স্থাপনাগুলোকে বিপজ্জনক করে তুলেছে।

উদাহরণস্বরূপ, আফগানিস্তানের গ্রামীণ অঞ্চলের অধিকাংশ বাড়ি কেবল মাটি ও পাথরের তৈরি, ফলে মধ্যম মাত্রার ভূমিকম্পেও বহু মানুষ হতাহত হয়।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর কেমন পরিস্থিতি?

ভারতে বেশ কয়েকটি সক্রিয় ফল্ট সিস্টেম রয়েছে এবং সেখানে ইন্ট্রাপ্লেট ভূমিকম্প অর্থাৎ একটি টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে যে ভূমিকম্প হয়, তাও অনুভূত হয়েছে, যা অনেক সময় প্রাচীন ফল্ট লাইনের পুনরায় সক্রিয় হওয়ার কারণে ঘটে।

ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় দ্রুত নারায়ণও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়ি দিয়েছে। বাংলাদেশও একাধিক ফল্ট লাইনের ওপর অবস্থিত, যেমন ডাউকি ফল্ট, সিলেট ফল্ট এবং চেরদাং ফল্ট, যেগুলো সাম্প্রতিক সময়ে সক্রিয় হয়েছে এবং ভূমিকম্প দেখা যাচ্ছে।

তবে দক্ষিণ এশিয়ার ভৌগোলিক অবস্থান ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে এবং ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের ক্ষেত্রে সংবেদনশীল করে তুলেছে, কারণ বিশ্বের সবচেয়ে বড় নদী ডেল্টা, সুন্দরবন ডেল্টা বাংলাদেশের বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। পাকিস্তানেও বেশ কিছু প্রধান ফল্ট লাইন রয়েছে, যেমন চামান ফল্ট এবং মেইন ম্যান্টল থ্রাস্ট বিশেষভাবে সক্রিয়।

খাইবার পাখতুনখাওয়া, গিলগিত-বালতিস্তান এবং বেলুচিস্তানে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গভীর এবং অগভীর—উভয় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছে। তবে ২০০৫ সালে কাশ্মীরে সাত দশমিক ছয় মাত্রার ভূমিকম্পটি এ অঞ্চলের সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল, যেখানে ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায়। পাকিস্তানেও বেশ কয়েকটি প্রধান ফল্ট রয়েছে বিশেষত চামান ফল্ট এবং মেইন মান্টল থ্রাস্ট সক্রিয়। তবে, দক্ষিণ এশিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে নেপালে।

কারণ দেশটি সরাসরি ভারতীয় প্লেট ও ইউরেশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষসীমার ওপর অবস্থিত এবং এখানে বড় বড় ফল্ট সিস্টেম রয়েছে। এখানকার পাহাড়ি ভূপ্রকৃতি ভূমিধস এবং হিমবাহ হ্রদ উপচে বন্যার ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দেয়।

সময়ের সঙ্গে কি পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে?

মানুষ ও পরিবেশগত কারণ, সেইসঙ্গে এ অঞ্চলের অনন্য ভূতাত্ত্বিক গঠন মিলিয়ে ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়ায় তীব্র ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে, যেখানে ধ্বংসযজ্ঞ ভয়াবহ হতে পারে।

শত শত বছর ধরে জমে থাকা টেকটোনিক চাপ বড় এবং আরো শক্তিশালী ভূমিকম্পের সৃষ্টি করতে পারে। যদিও প্যাসিফিক রিং অব ফায়ার অঞ্চলের দেশগুলোতে ভূমিকম্প বেশি হয় এবং সেগুলো শক্তিশালী মাত্রার হয়। তবু হিমালয় অঞ্চল শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সঞ্চিত প্রচণ্ড টেকটোনিক চাপের কারণে সবচেয়ে বিপজ্জনক ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলের একটি।

বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে নেপাল, ভারত, ভুটান এবং পাকিস্তানজুড়ে বিস্তৃত হিমালয় অঞ্চলে আট বা তার বেশি মাত্রার ‘বড় হিমালয়ান ভূমিকম্প’ হতে পারে। প্রাচীন এবং নিষ্ক্রিয় ফল্ট লাইনগুলোর পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠাও ভূমিকম্পের প্রবণতাকে আরো বাড়িয়ে তুলছে, যা প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।

কুশল/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]