২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তিকে সামনে রেখে স্বকীয়তায় ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল-ফিকহ্ অ্যান্ড ল’ বিভাগ। রোববার (৭ ডিসেম্বর) প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে ৪০ জন এবং কলেজ ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির শর্ত দেওয়া হয়েছে। বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্ত ও একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন অনুযায়ী এসব শর্ত গুচ্ছ ভর্তি কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছিল বলে জানা গেছে।
জানা যায়, ইসলামী ও প্রচলিত আইনের সমন্বয়ে শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে ২০০৩–০৪ শিক্ষাবর্ষে আইন ও শরিয়াহ অনুষদের অধীনে ‘আল-ফিকহ্’ নামে যাত্রা শুরু করে বিভাগটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইসলামী শরিয়ত তথা ফিকহের পাশাপাশি প্রচলিত আইন পড়ানো হওয়ায় আরবি ভাষায় পারদর্শী শিক্ষার্থীদেরই ভর্তি করা হতো এখানে। তবে ২০১৮ সালে তৎকালীন প্রশাসন ভর্তির ক্ষেত্রে মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের বাধ্যতামূলক শর্ত তুলে দেয়। এতে বিশেষায়িত এই বিভাগটি ধীরে ধীরে তার স্বাতন্ত্র্য হারায়। সম্প্রতি বিভাগটির সেই স্বাতন্ত্র্য পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে পূর্বের নিয়মে ফেরত যেতে আবারও ভর্তির শর্তে মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ড সংযোজন করা হয়েছে।
এছাড়া প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৭–১৮ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত বিভাগটিতে শুধুমাত্র মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীদেরই ভর্তি করা হতো। সে সময়ে ভর্তি পরীক্ষায় আল-ফিকহ্ বিষয়ক পৃথক ২০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। পরবর্তীতে সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-উর-রাশিদ আসকারীর ২০১৮–১৯ শিক্ষাবর্ষে মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০টি এবং অন্যান্য ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০টি আসন নির্ধারণ করেন। যদিও এক শিক্ষাবর্ষ এই ধারা বহাল ছিল, পরবর্তীতে সেই নিয়মও বাতিল করা হয়। এমনকি পরে মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়াই শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হয়।
বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে মিলিয়ে প্রায় ২,৫০০ নম্বরের আরবি মাধ্যমে ফিকহ বিষয় পড়ানো হয়। কিন্তু আরবিতে অদক্ষ শিক্ষার্থীদের জন্য এসব বিষয়ে উত্তীর্ণ হওয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। বাধ্য হয়ে শিক্ষকদের অনেককে বাংলা ভার্সনে লিখে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীরা প্রচলিত আইনে দক্ষ হলেও ফিকহ বিষয়ে প্রত্যাশিত দক্ষতা অর্জন করতে পারছেন না।
এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে ২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে পুনরায় পূর্বের নিয়মে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিভাগটি। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মোট ৮০টি আসনের মধ্যে ৪০টি মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ড এবং ৪০টি কলেজ ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিভাগের শিক্ষকরা জানান, বর্তমান নিয়মে ভর্তিকৃত অনেক শিক্ষার্থী আরবি ভাষায় পর্যাপ্ত দক্ষ না হওয়ায় আরবি মাধ্যমে পরিচালিত কোর্সগুলো ঠিকভাবে বুঝতে পারে না। এর ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী খারাপ ফলাফল করে রিটেক পরীক্ষা দিতে বাধ্য হয়। এতে বিভাগে সেশনজট বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন একাডেমিক জটিলতা সৃষ্টি হয়। এই অবস্থার পরিবর্তন করে পূর্বের নিয়মে ফিরে যেতে চায় বিভাগটি, যাতে আরবি জানা ও ফিকহ অধ্যয়নে সক্ষম শিক্ষার্থীরাই ভর্তির সুযোগ পায়।
বিভাগের ২০২১–২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী দুলাল হোসেন বলেন, “আল-ফিকহ বিভাগে ভর্তি হয়ে আমি হীনমন্যতায় ভুগি, কারণ আমি ফিকহ ভালোভাবে পড়তে পারি না। কারণ, আমি আর
এ বিষয়ে বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজিমুদ্দিন বলেন, “বিভাগের নাম যখন ‘আল-ফিকহ্ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ’ করা হয়, তখন একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৫০% মাদ্রাসা এবং ৫০% জেনারেল ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে তৎকালীন প্রশাসনের বিভিন্ন কারণে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা যায়নি। ফলে বিভাগের অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও গুচ্ছের নিয়ম অনুযায়ী শুধু জেনারেল ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীরাই ভর্তি হয়। বিভাগের পূর্বের ধারায় আমরা সম্পূর্ণ মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থী গ্রহণ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা সম্ভব হয়নি। তাই চলতি বছর এই শর্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।”
বিভাগটির সিনিয়র অধ্যাপক ড. আবুবকর মো. জাকারিয়া মজুমদার বলেন, “বিজ্ঞানে পড়তে হলে যেমন বিজ্ঞানের পূর্বশর্ত থাকে, তেমনি ফিকহ পড়তে হলে ফিকহের পূর্বশর্ত প্রয়োজন। ফিকহের কিছু বিশেষ শব্দ ও টার্ম আছে, যা আরবি না জানা শিক্ষার্থীদের পক্ষে হঠাৎ এসে বোঝা সম্ভব নয়। ফলে এ ধরনের শিক্ষার্থী ভর্তির ফলে বিভাগের মূল উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে না। এর ফলে শিক্ষার্থীরা যেমন পড়াশোনায় সমস্যায় পড়ছে, আমরাও পাঠদান করতে গিয়ে নানা অসুবিধার মুখোমুখি হচ্ছি।”
বিভাগটির সভাপতি অধ্যাপক ড. আলতাফ হোসেন বলেন, “বিভাগের একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন ভর্তির এই শর্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। নতুন শিক্ষার্থীরাই এই নিয়ম অনুযায়ী ভর্তি হবে।”
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর