সিভিল সোসাইটি, মানবাধিকার কর্মী এবং ন্যায়বিচার প্রত্যাশী নাগরিকগণ আজ ৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে গত দুই দশকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নিরাপত্তা ন্যারেটিভ, সাজানো অভিযান ও বিচারব্যবস্থার অপচর্চা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বক্তারা বলেন, “জঙ্গি ন্যারেটিভ” রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে — যার ফলে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, সাজানো মামলা, দীর্ঘ রিমান্ড, পরিবার হয়রানি ও মিডিয়া ট্রায়ালের মতো ঘটনার স্বাভাবিকীকরণ ঘটেছে। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থনের পরও একই প্রবণতা দেখা গেছে।
মঞ্চস্থ অভিযান ও সাজানো নিরাপত্তা ন্যারেটিভঃ
বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও প্রাক্তন কর্মকর্তাদের সাক্ষ্যে প্রকাশ পেয়েছে—
* অনেক “জঙ্গিবিরোধী অভিযান” আগে থেকেই পরিকল্পিত ছিল,
* বহু আসামিকে আগেই আটক রাখা হয়েছিল,
* প্রকৃত অপরাধী শনাক্ত না করে গল্প সাজানো হয়েছে।
এটি নিরাপত্তা কাঠামোর গভীর প্রাতিষ্ঠানিক সংকটের ইঙ্গিত দেয়।
রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত বিচারপ্রক্রিয়াঃ
মামলাগুলোর ধারাবাহিকতায় দেখা গেছে—
* রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চার্জশিট,
* ভিকটিমদের সাক্ষ্য বাদ দেওয়া,
* জোরপূর্বক ১৬৪ ধারা জবানবন্দী,
* একই বিচারকের আদালতে ধারাবাহিক রায়,
* নির্যাতিত বা গুম হওয়া আসামির তথ্যে ভিত্তিক সিদ্ধান্ত।
এসবই বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলে।
মেজর সৈয়দ মো. জিয়াউল হক: এক সেনা অফিসারের প্রতি অবিচারঃ
মেজর জিয়া—সিলেট ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, ৪১তম বিএমএর Sword of Honor প্রাপক, MIST-এর প্রশিক্ষক এবং আন্তর্জাতিক সামরিক কোর্সে সফল অংশগ্রহণকারী—রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত টার্গেটের শিকার হন।
২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী অসংগতি নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর বহু তরুণ কর্মকর্তার মতো তাকেও প্রতিশোধমূলক ন্যারেটিভের আওতায় ফাঁসানো হয়।
ইঞ্জিনিয়ারড “জঙ্গি তকমা”
বিভিন্ন সময়ে দাবি করা হয়েছে যে তিনি—
হিজবুত তাহরীর, আনসার আল-ইসলাম, ABT, JMB, এমনকি IS—বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত। কোন ব্যক্তি এতগুলো পরস্পর বিরোধী সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকতে পারে না। এখান থেকেই বোঝা যায়, অভিযোগগুলো সাজানো নাটক ছাড়া কিছুই নয়।
ভিকটিম পরিবারের অভিযোগঃ
পরিবার বলেছে—
* তদন্ত সংস্থা তাদের সাথে যোগাযোগ করেনি,
* প্রমাণ উপেক্ষা করা হয়েছে,
* আসামির তালিকা পরিবর্তন করা হয়েছে।
এগুলো বিচারপ্রক্রিয়ার ন্যূনতম মান লঙ্ঘন করে।
প্রমাণহীন পুরস্কার ঘোষণাঃ
মিডিয়ায় প্রচারিত ২০ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণার বিষয়ে পরে পুলিশ জানায়—
* কোনো লিখিত আদেশ নেই, • কোনো নথি নেই, • কোনো বৈধ প্রক্রিয়া নেই।
এটি ছিল শুধুই মিডিয়া ন্যারেটিভ তৈরির একটি হাতিয়ার।
মূল দাবিঃ
১. পুরস্কার ঘোষণার অসত্যতা আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে।
২. সাজানো তিনটি মামলার ফাঁসির দণ্ড অবিলম্বে স্থগিত করতে হবে।
৩. রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সকল মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
৪. হাইকোর্ট রেফারেন্স মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি প্রদান করতে হবে।
৫. সেনাবাহিনীতে যোগ্যতার ভিত্তিতে পুনর্বহাল বিবেচনা করতে হবে।
৬. আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রচারিত বিভ্রান্তিকর তথ্য সংশোধন করতে হবে।
৭. ২০১৩–২০২৪ সালের সকল জঙ্গি-অপারেশনের উপর স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।
বক্তারা বলেন — এটি শুধু একজন ব্যক্তির মামলা নয়; এটি সত্য, ন্যায়বিচার ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। যারা অন্যায়ভাবে টার্গেট হয়েছেন, তাদের সকলের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হোক।
জনাব শাহজাহান সম্রাট এর সঞ্চালনায়, সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন মেজর (অব.) রেজাউল হান্নান শাহিন, সভাপতিত্ব করেন- সাবেক কুটনীতিক জনাব সাকিব আলী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, কর্ণেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান, জনাব রাশেদ প্রধান, জাগপা, মিসেস জাহানারা বেগম (মেজর জিয়াউল হকের মা), হাফেজ আবু তাসমিয়া আহমেদ রফিক, ব্রিগে. জেনারেল (অব.) জিয়া হাসান, ড. কামরুল আহসান, কর্ণেল (অব.) আসাদ, লে. কর্ণেল (অব.) ফেরদৌস আজীজ, কর্ণেল (অব.) জাকারিয়া হোসেন, মেজর (অব.) জামাল হায়দার।
রেকর্ডেড বক্তব্য প্রচার করা হয় ব্রিগে. জেনারেল (অব.) বারী, ব্রিগে. জেনারেল (অব.) হাসান নাসির, লে. কর্ণেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলন শেষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর