সিনেমার গল্পের মতো এবার বাস্তবেও 'আয়নাবাজি' ঘটেছে গাজীপুর জেলা কারাগারে। বন বিভাগের এক মামলায় অভিযুক্ত সাত্তার মিয়ার পরিবর্তে হাজতে আছেন সাইফুল নামের আরেক ব্যক্তি। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে চমকে ওঠার মতো এই তথ্য। বিষয়টি অবগত করতেই তড়িঘড়ি করে আদালতকে চিঠি লিখে পুরো লুকোচুরি জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া রেঞ্জ অফিস গেল ৯ সেপ্টেম্বর এই এলাকার বন থেকে সরকারি গাছ কাটার সময় হাতেনাতে কয়েকজনকে আটক করেন বন কর্মকর্তারা। পরে দেশীয় অস্ত্রের মুখে পিছু হটলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করে বন বিভাগ।
কালিয়াকৈর ফুলবাড়িয়া রেঞ্জের কাচিঘাটা বিট অফিসার শরিফ খান বলেন, স্থানীয়দের অস্ত্রের মুখে আমরা অসহায় তাই আলামত জব্দ করে ফিরে এসে মামলা দায়ের করি।
এ ঘটনার তিন মাস পর গত ৭ ডিসেম্বর আদালতে হাজিরা দেয় প্রধান আসামি সাত্তার মিয়া। অভিযোগ আমলে নিয়ে তাকে কারাগারে পাঠান বিচারক। কিন্তু অনুসন্ধান বলছে, যে সাত্তারের থাকার কথা কারাগারে, তিনি দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন নিজ এলাকাতেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে নেই সাত্তার। মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ব্যবসায়িক কাজে অবস্থান করছেন মাওনা এলাকায়। যদিও আদালতের নথি বলছে, এই মুহূর্তে তার থাকার কথা গাজীপুর জেলা কারাগারে।
সাত্তার মিয়া যদি নিজ এলাকায় স্বাভাবিকভাবে ঘুরে বেড়ান, তাহলে কারাগারে সাত্তার নামে যে বন্দিকে রাখা হয়েছে তিনি আসলে কে? আর কিভাবে আদালত, পুলিশ, কারা কর্তৃপক্ষ সব পেরিয়ে এক সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যক্তি বন্দি হয়ে গেলেন সাত্তার পরিচয়ে?
আশ্চর্যের বিষয়, কারাগারের নথিতেও বন্দির নাম সাত্তার। কিন্তু ছবি মেলাতে গেলেই ধরা পড়ে যায় আয়নাবাজি। জেলে থাকা ব্যক্তির প্রকৃত পরিচয় সাইফুল ইসলাম। তাহলে সাত্তার পরিচয়ে কীভাবে কারাগারে সাইফুল?
জানতে চাইলে, তড়িঘড়ি করে আদালতকে অসঙ্গতির বিষয়টি জানিয়ে চিঠি পাঠান জেল সুপার। গাজীপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার মোহাম্মদ রফিকুল কাদের বলেন, আসামী এন্ট্রি করার সে তার নাম সাত্তার বলেছে তাই সন্দেহ করিনি। পরবর্তীতে জানার পর বায়োমেট্রিক পরিক্ষা করে জানতে পারি সে আসলে সাত্তার না সাইফুল। এ বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যে আদালতে চিঠি দিয়ে অবগতি করেছি।
আয়নাবাজির এই অদ্ভুত ঘটনা সম্পর্কে জানতে বারবার যোগাযোগ করেও সাড়া মেলেনি প্রকৃত আসামি সাত্তারের আইনজীবী শ্যামল সরকারের। যদিও ভুক্তভোগীর পরিবার স্বীকার করেছে, জামিন পাইয়ে দেয়ার আশ্বাসে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রক্সি হাজিরা দেন সাইফুল।
সাত্তার পরিচয়ে কারাগারে থাকা সাইফুলের বাবা রহিম বাদশা বলেন, আমার ছেলে গার্মেন্টস এ চাকরি করে। আমরা জানতাম সে গার্মেন্টস এ গিয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে জানতে পারি সে নাকি কারাগারে। আমার ছেলে টাকা নিয়ে এসব করেছে। বিষয়টির জন্য আমরাও অনুতপ্ত।
গাজীপুর কারাগার কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, গত এক মাসে এমন প্রক্সি হাজিরা ও জেল খাটার তিনটি ঘটনা শনাক্ত হয়েছে।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর