আগামী জাতীয় নির্বাচনে নবগঠিত তিনটি রাজনৈতিক জোট বড় কোনো নির্বাচনী ফ্যাক্টর হিসেবে আবির্ভূত হবে না বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে তারা ধারণা করছেন— এনসিপি, জাতীয় পার্টি ও বামদের উদ্যোগে গঠিত আলাদা এই নতুন তিনটি জোট ভোটের প্রচারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
সম্প্রতি দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশন রাজনৈতিক জোট দিয়ে তাদের ভিডিও প্রতিবেদনে এমন তথ্যই তুলে ধরেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টির ভোট ব্যাংকে সরাসরি টান দেওয়ার মতো শক্ত অবস্থান নতুন এসব জোটের নেই। বিশেষ করে জাতীয় পার্টির একাংশের উদ্যোগে গঠিত ন্যাশনাল ডেমোক্রেসি ফ্রন্ট এবং সংস্কারের উদ্দেশ্যে গঠিত গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট বড় কোনো দলের সঙ্গে আসন–সমঝোতায় গেলে নিজেদের অস্তিত্ব সংকটে ফেলতে পারে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে নির্বাচনের আগে দৌড়ঝাঁপ বাড়ার পাশাপাশি ক্রমাগত জন্ম নিচ্ছে নতুন নতুন জোট। এরই মধ্যে নয়টি বাম দলকে নিয়ে গঠিত হয়েছে ‘গণতান্ত্রিক যুক্ত ফ্রন্ট’। এতে এনসিপি, এবি পার্টি ও রাষ্ট্রসংস্কার জোটকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। যদিও গণঅধিকার পরিষদসহ আরেকটি দলের এতে যুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি—যা নিয়ে নতুন জোটটির প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে শুরু থেকেই।
লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, “রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলন ও এবি পার্টি নির্বাচনের লক্ষ্য সামনে রেখে নয়—নির্বাচন–পরবর্তী রাজনীতি বিবেচনায় জোট করেছে। কিন্তু এনসিপির নির্বাচনী লক্ষ্য রয়েছে। তারা যদি এখান থেকেও বিএনপি–জামায়াতের সঙ্গে আসন–সমঝোতার পথে হাঁটে, তাহলে জোটটি ভেঙে যেতে পারে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, “কোনো জোট বড় দলের সঙ্গে যুক্ত হলে তাদের প্রেসার গ্রুপ হিসেবে ভূমিকা দুর্বল হয়ে যায়। বড় দলগুলো সবসময়ই ছোট অংশীদারদের স্বাধীন অবস্থান সীমিত করে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্যও এমন জোট গঠন করা হয়ে থাকে।”
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির পুরনো নেতাদের নেতৃত্বে গঠিত নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ‘জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট’ নিয়েও আলোচনার ঝড় উঠেছে। এতে জিএম কাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি নেই। ফলে জোটটির প্রতীক ‘লাঙ্গল’ পাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।
আলতাফ পারভেজ বলেন, “জাতীয় পার্টির দুইটি ধারা এখন মাঠে রয়েছে—একটি সরকারের পছন্দের বাইরে, আরেকটি সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্য। ছোট রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিদের টিকে থাকার প্রতিযোগিতায় এসব জোট আসলে নতুনভাবে টিকে থাকার কৌশল মাত্র।”
অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ আরও উল্লেখ করেন, “আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে ভোটের মাঠে বিএনপি ও জামায়াত ইসলামের দ্বৈরথই হবে মূল লড়াই। সেখানে নতুন জোটগুলোর ভূমিকা প্রচারকেন্দ্রিক হলেও ভোটের ফল নির্ধারণে তারা বড় প্রভাব ফেলবে না।”
বিশ্লেষকদের মতে, নতুন গঠিত জোটগুলো ভোটের প্রচারে কিছুটা প্রভাব রাখলেও মূল নির্বাচন–সমীকরণে তাদের গুরুত্ব সীমিত। তবে নির্বাচনে একটি–দুটি আসন পেলে পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এ জোটগুলো টিকে থাকবে কি না—তা তখনই পরিষ্কার হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর