রাজশাহীর তানোরে পরিত্যক্ত গভীর নলকূপের গর্তে পড়ে যাওয়া দুই বছর বয়সী শিশু সাজিদ আর বেঁচে নেই। প্রায় ৩২ ঘণ্টার প্রাণান্তকর উদ্ধার অভিযান শেষে তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে রাত ৯টা ৪০ মিনিটে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. বার্নাবাস হাসদা জানিয়েছেন, রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে শিশুটিকে হাসপাতালে আনা হয়, তবে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছিল। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা এবং দীর্ঘসময় অক্সিজেন না পাওয়াই মৃত্যুর কারণ বলে জানান তিনি।
শিশুর নানা আইয়ূব আলী দাবি করেন, উদ্ধারকর্মীরা যখন শিশুটিকে তুলছিলেন, তখন সে জীবিত ছিল। তিনি বলেন, “ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছিলেন সে বেঁচে আছে। আমি নিজেও দেখেছি সে বেঁচে ছিল। কিন্তু হাসপাতালে এসে মারা গেল।” শিশুটির মরদেহ ইতোমধ্যে পরিবারের বাড়ি তানোরের কুড়িরহাট পূর্বপাড়ায় নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, গত বছর একটি গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য ১২০ ফুট গভীর পর্যন্ত গর্ত করা হলেও পানি না পাওয়ায় তা পরিত্যক্ত অবস্থায় খোলা রেখেই ফেলে রাখা হয়। সঠিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না থাকা এবং মুখ খোলা থাকার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। গত বছরের বৃষ্টিতে গর্তটির মুখ আরও বড় হয়ে যায়।
ঘটনাস্থলে হাজারো মানুষ ভিড় করেন এবং গর্তের পাশেই নির্ঘুম রাত কাটান সাজিদের মা। সন্তানের জীবিত ফিরে আসার আশায় তার কান্না-প্রার্থনায় আবেগে ভারী হয়ে ওঠে চারপাশ। প্রথমদিকে গর্তের ভেতর থেকে সাড়া পাওয়া গেলেও সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শব্দ বন্ধ হয়ে যায়, যা উদ্ধারকর্মীদের শঙ্কা আরও বাড়িয়ে দেয়।
উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া ফায়ার সার্ভিস, মেডিকেল টিম ও স্থানীয় প্রশাসন সারাক্ষণ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। সন্ধ্যায় লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছিলেন, শিশুটির বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ, তবে জীবিত বা মৃত— যে অবস্থাতেই হোক, উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।
অবশেষে শিশুটিকে উদ্ধার করা গেলেও তাকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি— শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো এলাকায়।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর