ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সমমনা ৮ দলীয় জোট-বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনসহ অন্যান্য দল—ওয়ান বক্স নীতিতে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ অবস্থায় জোটের প্রধান দল জামায়াত প্রায় ১৫০ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের আভাস দিয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও দলীয় স্বার্থ ও জোটের প্রয়োজন বিবেচনায় বহু আসন ছাড় দিতেও প্রস্তুত।
সমমনা ৮ দলের উদ্যোক্তা জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন ইতোমধ্যে ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ঘোষিত প্রার্থীদের অধিকাংশ নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনী তৎপরতায় সক্রিয়। তবে ৮ দলের আসন সমঝোতার কারণে জামায়াতকে কমপক্ষে অর্ধেক আসন এবং ইসলামী আন্দোলনকে অর্ধেকের বেশি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন বা সরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
আসন সমঝোতার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত সোমবার ৮ দলের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে প্রাথমিকভাবে আসন বণ্টনের আলোচনা হয়। প্রতিটি দলের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে। আরও আলোচনা ও পর্যালোচনার পর শীর্ষ নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ জানান, শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে আসন সমঝোতার আলোচনা শুরু হবে। তিনি বলেন, এক আসনে এক প্রার্থীর বিষয়ে সবাই একমত। যেখানে যিনি জিততে পারবেন, সেখানে তাঁকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। জামায়াতের কতটি আসন ছাড় দেবে—এ প্রশ্নে তিনি বলেন, জামায়াতের নিজস্ব কোনো আসন দাবি নেই। আট দলের প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো প্রার্থী সরে দাঁড়াবেন। লক্ষ্য হচ্ছে ৮ দলের বিজয় নিশ্চিত করা।
ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, সকল দলের শক্তি ও রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনায় আসন বণ্টন করা হবে। তাদের লিয়াজোঁ কমিটি জেলা–উপজেলা–ইউনিয়ন পর্যায়েও সক্রিয় হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ৮ দলের যৌথ প্রার্থীতাও বজায় থাকবে বলে জানান তিনি। একটি সূত্র জানিয়েছে, ইসলামী আন্দোলনের অর্ধশতাধিক আসনে শক্ত অবস্থান আছে এবং আসন সমঝোতার ফলে অন্তত ১০০ আসনে লড়তে চায় দলটি।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, দলের নিজস্ব প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, যা লিয়াজোঁ কমিটিতে উপস্থাপন করা হবে। দলের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, তারা ২৬৮ আসনে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছে, যার মধ্যে ৯৩ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা সক্রিয়ভাবে মাঠে কাজ করছেন। জোটের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৪০টি আসনে জয় সম্ভাবনা উজ্জ্বল—আসন সমঝোতায় সেই আসনগুলোই তাদের মূল লক্ষ্য।
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, গণভোট, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ, ১৪ দলের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণসহ পাঁচ দফা দাবিতে গত জুলাই থেকে রাজপথে সক্রিয় রয়েছে এই ৮ দল। ১১ নভেম্বর রাজধানীতে প্রথমবারের মতো শীর্ষ নেতারা এক মঞ্চে আসেন এবং পরে সাতটি বিভাগীয় সমাবেশেও তাদের সরব উপস্থিতি থাকে।
সমমনা ৮ দলের লক্ষ্য এক আসনে এক প্রার্থী, এবং যেখানে জয়ের সম্ভাবনা বেশি, সেখানে সেই দলের প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া। ফলে আসন্ন নির্বাচনে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ অংশীদার দলগুলোতে ব্যাপক প্রার্থী পরিবর্তন ও সমন্বয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর