• ঢাকা
  • ঢাকা, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৫ মিনিট পূর্বে
মোঃ এস হোসেন আকাশ
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৫:২৮ বিকাল

শান্তিরক্ষা মিশনে নিহত জাহাঙ্গীরের বাড়িতে শোকের মাতম

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

আফ্রিকার সুদানের আবেইতে অবস্থিত জাতিসংঘের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরোও ৮ জন।

শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শহীদের তালিকায় যুক্ত হয়েছেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম (৩০)। গত ৭ নভেম্বর পরিবারের চোখের জল আর বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন সুদানে। তার ব্যক্তিগত নম্বর সিএস- ২২০১০৯।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক খুদে বার্তায় এই মর্মান্তিক ঘটনার কথা জানা যায়। আইএসপিআর জানায়, সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। এতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন শান্তিরক্ষী নিহত হন এবং অন্তত আটজন আহত হন। হামলার পরও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলমান রয়েছে। এখনো পুরো এলাকা অস্থিতিশীল।

এ ঘটনায় শহীদ জাহাঙ্গীর আলম উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামের আকন্দ বাড়ির হযরত আলীর ছেলে। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেসওয়েটার পদে কর্মরত ছিলেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তিন ভাইয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন মেজো ছেলে। তার বড় ভাই মো. মোস্তফা প্রবাসী এবং ছোট ভাই মো. শাহিন মিয়া বাড়িতে কৃষিকাজ করেন।

স্ত্রী আর তিন বছরের একমাত্র ছেলে ইরফানকে রেখে দেশ ছেড়েছিলেন তিনি। তার মৃত্যুর খবর শুনে বাড়ির উঠোনজুড়ে এখন শুধু কান্না আর হাহাকার। বাবার আদর কী, তা বোঝার আগেই চিরতরে পিতৃহারা হলো ছোট্ট ইরফান।

প্রায় ১১ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনের স্বপ্ন নিয়ে এক মাস সাত দিন আগে সুদানে যান তিনি। পরিবারের সদস্যরা জানান, সন্তানকে ভালো ভবিষ্যৎ দেওয়ার আশাতেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশের মাটিতে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।

জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুর খবরে তারাকান্দি গ্রাম যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। প্রতিবেশীরা বলছেন, শান্ত স্বভাবের এই মানুষটি দেশের জন্য জীবন দিয়ে গেলেন। এলাকায় শোকের মাতম চলছে। সবাই এক কণ্ঠে শহীদ জাহাঙ্গীর আলমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছেন এবং তার অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

নিহতের ছোট্ট শিশু ইরফান যেন বাবার শোকে শান্ত হয়ে গেছে। জাহাঙ্গীরের ভাই শাহিন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার ভাই আমাকে খুব আদর করত। যখন যা চেয়েছি তাই দিয়েছে। কিছুদিন আগেও আমাকে ফোন দিয়ে বলছে মা-বাবার সেবা যত্ন করতে। তারা যা চায় তার ব্যবস্থা করতে। উনি টাকা পাঠাবেন বলেছিলেন। এরপর আমার ফোন নষ্ট হয়ে যায় আর ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি।

নিহতের চাচাতো ভাই হানিফ মিয়া বলেন, আমার চাচাতো ভাইয়ের মতো মানুষই হয় না। সে খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। সবকিছু আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করতেন। গতকাল রাতে আমরা যখন জানতে পারি ওই শান্তিরক্ষী মিশনে বিমান ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে, এরপর আমার ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে বিষয়টি জানতে পারি।

নিহতের বাবা হযরত আলী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, এক মাস আগে আমার ছেলে মিশনে গেছে। সে যাওয়ার সময় বলেছে তার ছেলেকে যেন দেখে শুনে রাখি। আর আমাকে বলেছে কাজ কাম কম করতে যেহেতু আমি অসুস্থ। যাওয়ার সময়ও টাকা দিয়ে গেছে। আমার সেই ছেলে আর নেই বলে কাঁদতে থাকেন।

নিহতের মা পালিমা বেগম বলেন, আমার বাবা উঁচু লম্বা আর সুন্দর। গতকালকে রাত থেকে কাঁদতে কাঁদতে আমার বাবাকে খুঁজতেছি, আমার বাবাকে এনে দেন। স্ত্রী রুবাইয়া আক্তার কাঁদতে কাঁদতে বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন।

নিহতের ফুফাতো ভাই হোসেন্দী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. সুরুজ মিয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গতকাল মিডিয়ার মাধ্যমে এমন হামলার ঘটনা জানতে পেরে আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। এর কিছুক্ষণ পরেই তার সঙ্গের একজন ফোন দিয়ে মৃত্যুর ঘটনা জানায়। আসলে এমন মৃত্যু মেনে নেওয়ার মতো না তবে দেশের হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দেওয়া গর্বের।

পাকুন্দিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুপম দাস বলেন, আমি ঘটনার শোনার পরই পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।

তিনি জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ফেসবুক পেজে প্রকাশিত তথ্যে জানানো হয়, আবেই এলাকায় অবস্থিত ইউএন ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত হামলায় মোট ১৪ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী হতাহত হন। এর মধ্যে ছয়জন নিহত এবং আটজন আহত হয়েছেন (সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী)। নিহতদের একজন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।

প্রসঙ্গত, সুদানে চলমান সহিংস পরিস্থিতির মধ্যেই বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা জাতিসংঘের অধীনে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। শান্তি প্রতিষ্ঠায় দায়িত্ব পালনের সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের এমন আত্মত্যাগ জাতির জন্য গভীর বেদনার বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

কুশল/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]