মো: সাইফুল আলম সরকার: দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে এবং প্রবাসে অবস্থানরত সকল কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে প্রস্তাবনা দিয়ে ১৯ দফা দাবি জানিয়েছে "আমরা সচেতন রেমিডেন্স যোদ্ধা" সংগঠনটি। গত রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে প্রবাসীরা এই দাবি জানান।
এক লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, আপনাদের সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। আজ আমরা কেউ সাবেক সৌদি প্রবাসী, কেউ বর্তমানে ছুটিতে দেশে থাকা প্রবাসী, আবার অনেকে প্রবাসীদের পরিবারের সদস্য হিসেবে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। আমরা দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে দেশের জন্য রেমিট্যান্স পাঠাই, পরিবার-পরিজনকে সহায়তা করি এবং দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে ভূমিকা রাখি। প্রবাসীর কয়েক মাসের জন্য দেশে এলেও পরিবারের সাথে সময় কাটিয়ে আবার কাজে ফিরে যায়। আমাদের অনেক ভাই- বোন সংবাদ সম্মেলন সম্পর্কে অবগত নয়, তবে প্রয়োজনের তাগিদে কেউ কেউ মাঝে মধ্যে এ ধরনের আয়োজন করেছেন ।
আজকের এই সংবাদ সম্মেলন কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে নয়। আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রায় ২ কোটি রেমিট্যান্স যোদ্ধার মুখপাত্র হিসেবে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। প্রিয় গণমাধ্যমকর্মী ভাই ও বোনেরা,
প্রবাসীর বহু বছর ধরে সরকারের কাছে ন্যায্য ও যৌক্তিক কিছু দাবি উপস্থাপন করে আসছে। কেউ বাক্তিগতভাবে, কেউ দলগতভাবে বা সংগঠনের মাধ্যমে এসব দাবি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য-এ পর্যন্ত কোনো সরকারই এসব দাবির বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি ।
যখন থেকে বাংলাদেশ সরকার বিদেশে শ্রমবাজারে কর্মী পাঠানো শুরু করেছে, ঠিক তখন থেকেই এসব দাবি বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল সরকারের। অথচ তা হয়নি-এটি আমাদের গভীর হতাশার বিষয়। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, এবং আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রথমবার প্রবাসীরা ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়েছে-এ জন্য আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই
তবে এই সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা ছিল সর্বোচ্চ। প্রবাসীরা এই সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল যা সরকারও স্বীকার করে । কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায় এই সরকার প্রবাসীদের কল্যাণে কী করেছে?
সব সরকারের মতো এই সরকারও প্রবাসীদের প্রতি অবহেলার পরিচয় দিয়েছে-এটি বলতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে।
সরকারের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। তাই দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত দাবিগুলোর বাস্তবায়নের জন্য প্রবাসীর সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়ে উঠেছেন যা আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন। প্রায় ৭-৮ দিন আগে আমরা এসব দাবি প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টার নিকট লিখিতভাবে জমা দিয়েছি। কিন্তু সাড়া পাওয়া যায়নি ।
আপনাদের মাধ্যমে আমরা সরকার ও সংশ্লিষ্টি মন্ত্রণালয়ের কাছে নিম্নোক্ত ১৯ দফা দাবি উপস্থাপন করছি-
১. পাসপোর্ট সরবরাহ । বিদেশগামী যাত্রীদের জন্য স্বল্প সময়ে ও হয়রানি মুক্ত পাসপোর্ট সরবরাহ করতে হবে।
২. নিম্ন সুদে ঋণ ভিসার কপি দিয়ে জামানত ছাড়া, স্বল্প সুদে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে নূন্যতম ৩ লাখ টাকা ঋণ দিতে হবে।
৩. দালালমুক্ত মেডিকেল সার্ভিস: বিদেশগামী যাত্রীদের মেডিকেল পরীক্ষায় দালালমুক্ত ও সঠিক রিপোর্টের নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
৪. বিমানবন্দরের সম্মান । যাত্রীদের সম্মান ও মূল্যায়ন নিশ্চিত করে বিদেশে আসা-যাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে এবং সকল ধরণের হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
৫. বাংলাদেশী মিশন সেবা । বিদেশে বাংলাদেশী মিশনগুলোতে প্রবাসীদের সম্মানজনক ও দ্রুত সেবা প্রদান করতে হবে।
৬. বেতন ও সুযোগ সুবিধা পর্যবেক্ষণ: প্রবাসী কর্মীদের কোম্পানিতে বেতন, আবাসন ও অন্যান্য সুবিধা পাচ্ছে কিনা তা বাংলাদেশী মিশনগুলোকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
৭. ভিসা যাচাই: বাংলাদেশে কর্মী নেবার জন্য ভিসা প্রেরণের পূর্বে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির যাচাই-বাছাই করতে হবে।
৮. বায় নিয়ন্ত্রণ: সরকার কর্তৃক নির্ধারিত খরচের মধ্যে কর্মীদের বিদেশ যাওয়ার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৯ টিকেট মূল্য নিয়ন্ত্রণ সকল এয়ারলাইন্সের টিকিট মূল্য গন্তব্যস্থান অনুযায়ী নির্ধারণ করতে হবে।
১০. বিশেষায়িত হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ: প্রবাসীদের জন্য সকল বিভাগীয় শহরে ১টি করে বিশেষায়িত হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করতে হবে।
১১. সম্পদ নিরাপত্তা প্রবাসীদের পরিবারের সম্পদ ও জান-মাদের শতভাগ নিরপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।।
১২. দক্ষ কর্মী পাঠানো: বিদেশে কর্মী পাঠানোর পূর্বে তাদেরকে কোনো কাজের উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কর্মী পাঠাতে হবে ।
১৩. জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহ সকল প্রবাসীকে তাদের কর্মরত দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহ করতে হবে ।
১৪. পেনশন সুবিধা: যারা ১০ বছরের বেশি প্রবাসে কর্মরত রয়েছেন, তাদেরকে পেনশনের আওতায় আনতে হবে ।
১৫. অসুস্থ কর্মী ও মরদেহের খরচ: অসুস্থ কর্মী ও প্রবাসীর মরদেহ দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে সকল খরচ নিয়োগকর্তাকে প্রদান করতে বাধ্য করতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশ সরকারকে নিজ খরচে এই কার্য সম্পাদন করতে হবে।
১৬. গণশুনানি আয়োজন: প্রবাসী কর্মীদের নিয়ে বাংলাদেশী মিশনগুলো প্রতি ৩ মাস পর পর গণশুনানির আয়োজন করতে হবে। ১৭. বৈধতা নিশ্চিতকরণ: বিভিন্ন দেশে যে সকল প্রবাসীরা অবৈধ হয়ে আছেন, তাদেরকে বৈধ করর চেষ্টা চালাতে হবে, তাদেরকে দেশে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
১৮. অবৈধ পথে কর্মী যাওয়া বন্ধ: যে সকল দেশে বাংলাদেশ সরকার কর্মী প্রেরণ করেন না, সে সব দেশে অবৈধ পথে ঝুঁকি নিয়ে কর্মী যাওয়া বন্ধ করতে হবে।
১৯. মতবিনিময়: অভিবাসন খাতে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রতি মাসে অন্তত একবার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বা সচিবের মতবিনিময় করতে
হবে।
দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের এই ১৯ দফা ন্যায্য দাবিগুলো এই সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরের আগেই বাস্তবায়ন করা হোক। আপনাদের মাধ্যমে আমরা সরকারের কাছে জোরালোভাবে অনুরোধ করছি। আমরা বিশ্বাস করি- এই ১৯ বায়নে ১৯ মিনিটও লাগবে না।
প্রয়োজন কেবল সদিচ্ছা, সদিচ্ছা, আন্তরিকতা, মূল্যায়ন ও সঠিক নির্দেশনা ।
প্রবাসীদের ত্যাগ ও অবদানের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে-এটাই আমাদের প্রত্যাশা ।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর