রাজধানীতে অ্যাপভিত্তিক রাইডশেয়ারিং পরিবহন সেবার ওপর আবারও সংগঠিত হামলার অভিযোগ উঠেছে। অননুমোদিত কিছু গোষ্ঠী সংঘবদ্ধ হয়ে রাইডশেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের অফিসে হামলা, ভাঙচুর এবং তালা লাগানোর মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিযোগ, যাত্রী হয়রানি ও প্রতারণার দায়ে বাতিলকৃত (ডিলিস্টেড) চালকরাই এই নৈরাজ্যের মূল হোতা। এ ঘটনায় গত ৭ ডিসেম্বর পল্লবী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গত ৩ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে মিরপুরে পাঠাও লিমিটেডের অফিসে ঢুকে হুমকি-ধমকি ও জোরপূর্বক তালা লাগানোর ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গত ৭ ডিসেম্বর পল্লবী থানায় ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ১৪৩/৪৪৭/৫০৬ ধারায় একটি মামলা (মামলা নং-৯) দায়ের করা হয়েছে। মামলার এজাহারে মো. আসাদুজ্জামান (আসাদ আজিজ), কাওসার আহমেদ (কাওসার মুসল্লী), মো. আব্দুস সাত্তার লিটনসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা অফিসে অবৈধভাবে প্রবেশ করে কর্মীদের গালিগালাজ করে, মারধরের হুমকি দেয় এবং অফিস থেকে বের করে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এতে কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র ও মামলার নথিপত্র অনুযায়ী, এই বিশৃঙ্খলার পেছনে একাধিক অনিবন্ধিত সংগঠনের নাম উঠে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে: বাঁচাও রাইড পরিষেবা ঐক্য পরিষদ ইউনিয়ন, অ্যাপ বেইজড ট্রান্সপোর্ট ইউনিয়ন (ATU), রাইড শেয়ারিং ড্রাইভারস ইউনিয়ন (RSDU), বাংলাদেশ রাইড সার্ভিস ইউনিয়ন (BRDU)।
অভিযোগ রয়েছে, এসব সংগঠনের কোনো আইনি নিবন্ধন বা অনুমোদিত কাঠামো নেই; মূলত ফেসবুক গ্রুপ ও মেসেঞ্জারের মাধ্যমে এরা কার্যক্রম পরিচালনা করে । অ্যাপ কোম্পানিগুলোর অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, এই গ্রুপগুলোর সদস্যদের একটি বড় অংশই সেই সব চালক, যারা যাত্রীদের সঙ্গে ভাড়া প্রতারণা, নিরাপত্তা লঙ্ঘন এবং অ্যাপের শর্ত ভঙ্গের কারণে বিভিন্ন সময়ে ‘ডিলিস্টেড’ বা নিষিদ্ধ হয়েছেন। এখন তারা সংঘবদ্ধ হয়ে অন্যায্য দাবি আদায়ে অফিস ঘেরাও ও হামলার পথ বেছে নিয়েছেন।
রাইডশেয়ারিং খাতে এই অস্থিরতা নতুন নয়। এর আগে ২০২৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর উবার ও পাঠাও-এর বিভিন্ন অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়েছিল। এরপর একই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর বিআরটিএ-র প্রধান কার্যালয়ে রাইডশেয়ারিং কোম্পানির প্রতিনিধিদের জিম্মি করে রাখার ঘটনা ঘটে, যা শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে সুরাহা হয়।
ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিযোগ, বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও বিআরটিএ এসব অননুমোদিত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়নি। সংশ্লিষ্টদের মতে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার এই নীরবতার সুযোগেই অপরাধীরা পুনরায় সংগঠিত হয়ে এ বছরও একই কায়দায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে।
টানা দুই বছর ধরে চলা এই সহিংসতা ও জিম্মি দশার কারণে রাইডশেয়ারিং খাতের স্থিতিশীলতা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি সেক্টরকে অস্থিতিশীল করার একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা। সাধারণ রাইডার ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে যথাযথ তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর