ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সমাধিসৌধ কেবল কবির চিরনিদ্রার স্থান নয়; সময়ের পরিক্রমায় এটি পরিণত হয়েছে দেশের বিশিষ্ট শিল্পী, শিক্ষাবিদ ও গুণীজনদের শেষ ঠিকানায়। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) শহীদ শরিফ ওসমান হাদির দাফনের মধ্য দিয়ে সমাধিক্ষেত্রটি আবারও আলোচনায় এসেছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও ওসমান হাদি ছাড়াও এখানে শায়িত আছেন আরো কয়েকজন গুণীজন।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের চিরনিদ্রা
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। তার ইচ্ছানুযায়ী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে, ধর্মীয় ও শিক্ষাঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। এরপর থেকেই এই সমাধিসৌধ জাতীয় স্মৃতিচিহ্নে পরিণত হয় এবং প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এখানে আসেন।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সমাধি
নজরুল সমাধির আশপাশের এলাকায় শায়িত আছেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। তিনি বাংলাদেশের আধুনিক চিত্রকলার পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত। তার শিল্পকর্ম ও আজীবন অবদান দেশের শিল্পচর্চাকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।
কামরুল হাসান: শিল্প ও জাতীয় চেতনার প্রতীক
প্রখ্যাত শিল্পী ও জাতীয় পতাকার নকশাকার কামরুল হাসানও এই সমাধিক্ষেত্রে শায়িত। মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ে তার শিল্পকর্ম জাতীয় চেতনা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তার সমাধি শিল্প ও সংস্কৃতিপ্রেমীদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
শিক্ষাঙ্গনের দুই গুণী ব্যক্তিত্ব
শিক্ষা ও গবেষণায় অবদানের জন্য পরিচিত প্রফেসর আব্দুল মাতিন চৌধুরী, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন, তাকেও এই সমাধিক্ষেত্রে সমাহিত করা হয়েছে।
এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও গুণী শিক্ষক প্রফেসর মুজাফফর আহমদ চৌধুরীও এখানে চিরনিদ্রায় শায়িত, যিনি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
শরিফ ওসমান হাদির দাফনে নতুন মাত্রা
সাম্প্রতিক সময়ে নজরুল সমাধিসৌধ নতুন করে আলোচনায় আসে শহীদ শরিফ ওসমান হাদির দাফনের মাধ্যমে। পরিবারের অনুরোধ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে জাতীয় কবির সমাধির পাশে সমাহিত করা হয়।
ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আত্মত্যাগের মিলনস্থল
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নজরুল সমাধিসৌধের ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও প্রতীকী গুরুত্ব আবারও সামনে এসেছে—যেখানে কবিতা, শিল্প, শিক্ষা ও আত্মত্যাগের স্মৃতি একই প্রাঙ্গণে মিলিত হয়েছে।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর