বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, কোনো বড় ভূমিকম্পে ঢাকা শহর সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক প্রভাবের মুখোমুখি হতে পারে। দেশের রাজধানী হওয়ায় এখানে জনসংখ্যা, অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম অত্যন্ত ঘন, যা ভূমিকম্পের ক্ষতির মাত্রা আরও বৃদ্ধি করতে পারে।
ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থান
ঢাকা ভূমিকম্প-প্রবণ অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরের নিচে রয়েছে একাধিক ত্রুটি রেখা (fault lines), যা ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ায়। পাশাপাশি, বাংলাদেশের ভূমিকম্পের ইতিহাসে দেখা গেছে, পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে ছোট-বড় কম্পন নিয়মিত লক্ষ্য করা যায়।
মাটির ধরন ও ভূ-প্রাকৃতিক পরিবেশ
ঢাকার মাটি তুলনামূলকভাবে নরম ও বালুকাময়, যা ভূমিকম্পের কম্পন দীর্ঘ সময় ধরে প্রচার করে। বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করছেন, এই ধরনের মাটির উপর নির্মিত বহু ভবন ভূমিকম্পে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শহরের নিম্নাঞ্চল, বিশেষ করে প্রাচীন বিল, খাল ও নদীর আশপাশের এলাকা, ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।
জনসংখ্যা ও নগরায়ন
ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে জনঘনত্বপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে একটি। এখানে বিপুল সংখ্যক মানুষ ঘনভাবে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে বসবাস করেন। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, কোনো বড় ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে মানব ও অর্থনৈতিক ক্ষতি বিপুল হবে, কারণ দ্রুত নিরাপদ স্থানে পৌঁছানো কঠিন।
অপরিকল্পিত নগরায়নও ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে। শহরের বহু এলাকা অননুমোদিতভাবে গড়ে উঠেছে, এবং অনেক ভবন ভূমিকম্প-সহনীয় ডিজাইনে নির্মিত নয়। পুরনো ও ভাঙা ভবন, সেতু, স্কুল, হাসপাতাল ও শিল্পকেন্দ্রগুলোর স্থায়িত্বও অপ্রতুল।
জরুরি সেবা ও প্রস্তুতির সীমাবদ্ধতা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্পের প্রভাব মোকাবিলায় দ্রুত উদ্ধার ও চিকিৎসা সেবা পৌঁছানোর ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। নগরের রাস্তা, যানবাহন ও জরুরি সেবা অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা ধ্বংসের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
প্রাকৃতিক ঝুঁকি ও সহায়ক বিপর্যয়
ভূমিকম্পের সঙ্গে ভূমিধস, বন্যা, আগুন ও অবকাঠামোর ধ্বংসও যুক্ত থাকে। ঢাকার নরম মাটি ও নদী-সংলগ্ন অবস্থান এই ধরনের বিপর্যয়কে ত্বরান্বিত করতে পারে। বিশেষ করে শহরের নিম্নাঞ্চল এবং নদীর তীরবর্তী এলাকা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, রাজধানী ঢাকার জন্য এখনই জরুরি- স্থায়ী ও ভূমিকম্প-সহনীয় ভবন নির্মাণ, নগর পরিকল্পনা ও অপরিকল্পিত গৃহনির্মাণ নিয়ন্ত্রণ, জরুরি উদ্ধার ও চিকিৎসা সেবা শক্তিশালী করা, জনসচেতনতা ও দুর্যোগ প্রস্তুতি বৃদ্ধি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি ঢাকার মতো ঘন জনবসতিপূর্ণ শহরে বড় কোনো ভূমিকম্প ঘটে, তাহলে মানুষের জীবন ও অর্থনীতির উপর ভয়াবহ ক্ষতি হবে। তাই সরকারি, বেসরকারি ও স্থানীয় প্রশাসনকে এখনই প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর
এক্সক্লুসিভ এর সর্বশেষ খবর