ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি অবরোধ ও টানা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের কারণে গাজা উপত্যকায় ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীর চরম সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পরিস্থিতিকে “অত্যন্ত উদ্বেগজনক” আখ্যা দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
রোববার এক বিবৃতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ওষুধ, চিকিৎসা উপকরণ ও ল্যাবরেটরি সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সেবা কার্যত ব্যাহত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরেই সতর্ক করে আসছেন যে, ইসরায়েল প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রবেশে বাধা দেওয়ায় চিকিৎসকেরা জীবন বাঁচাতে হিমশিম খাচ্ছেন। চলমান যুদ্ধে গাজার প্রায় সব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র হামলার শিকার হয়েছে। এখন পর্যন্ত অন্তত ১২৫টি স্বাস্থ্য স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত, যার মধ্যে ৩৪টি হাসপাতাল রয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকায় থাকা ৩২১টি ওষুধ সম্পূর্ণরূপে মজুতশূন্য, যা মোটের ৫২ শতাংশ। চিকিৎসা সামগ্রীর তালিকায় ৭১০টি উপকরণ নেই, অর্থাৎ ৭১ শতাংশ ঘাটতি। ল্যাব টেস্ট ও ব্লাড ব্যাংক সামগ্রীর ঘাটতি ৫৯ শতাংশে পৌঁছেছে।
সবচেয়ে মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে জরুরি বিভাগে। বিশেষ করে জীবনরক্ষাকারী ইন্ট্রাভেনাস স্যালাইন, অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথানাশক ওষুধের তীব্র অভাব রয়েছে।
মন্ত্রণালয় সতর্ক করে জানিয়েছে, এই সংকটের ফলে প্রায়- ২ লাখ রোগী জরুরি চিকিৎসা, ১ লাখ রোগী অস্ত্রোপচার সেবা এবং ৭০০ জন রোগী নিবিড় পরিচর্যা সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। এ ছাড়া কিডনি রোগ, ক্যানসার চিকিৎসা, ওপেন হার্ট সার্জারি ও অর্থোপেডিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামেরও মারাত্মক অভাব রয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “দখলদার শক্তি গাজায় প্রবেশকারী চিকিৎসা সামগ্রীর ট্রাক সংখ্যা মাসিক প্রয়োজনের ৩০ শতাংশেরও কমে নামিয়ে এনেছে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সব সংশ্লিষ্ট পক্ষকে জরুরি হস্তক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য তাদের দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করার আহ্বান জানাচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।”
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ- ইসরায়েল চুক্তি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসা সহায়তা ট্রাক গাজায় ঢুকতে দিচ্ছে না। এতে গাজায় চলমান স্বাস্থ্য সংকট আরও গভীর হচ্ছে।
ওষুধ সংকটের মধ্যেই ১,৫০০ শিশু সীমান্ত খোলার অপেক্ষায় রয়েছে, যাতে তারা গাজার বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য ইউনিটের প্রধান জাহের আল ওয়াহেইদি জানান, চিকিৎসার জন্য বাইরে নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় এখন পর্যন্ত ১,২০০ রোগীর মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৫৫ জন শিশু।
চিকিৎসা সংকট, অপুষ্টি ও অবরোধ- সব মিলিয়ে গাজার মানবিক পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বলে সতর্ক করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর