ভেনেজুয়েলা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে (ইউএনএসসি) অভিযোগ করেছে, দেশটির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলা ও নৌ অবরোধ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং এটি লাতিন আমেরিকার ওপর ওয়াশিংটনের “মহাদেশীয় উচ্চাকাঙ্ক্ষা” বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ।
মঙ্গলবার ১৫ সদস্যবিশিষ্ট নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ভেনেজুয়েলার স্থায়ী প্রতিনিধি স্যামুয়েল রেইনালদো মনকাদা অ্যাকোস্তা বলেন, “এটা শুধু ভেনেজুয়েলার বিষয় নয়। এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা গোটা মহাদেশজুড়ে। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের একে একে বিচ্ছিন্ন করে দখল করতে চায়।”
তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলেই বলা হয়েছে—এই মহাদেশের ভবিষ্যৎ তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ভেনেজুয়েলার অনুরোধে আয়োজিত এই বৈঠকে মনকাদা বলেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় সাগর ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে ভেনেজুয়েলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জাহাজে বিমান হামলা শুরু করে। হোয়াইট হাউস দাবি করে, এসব জাহাজ মাদক পাচারে জড়িত ছিল—তবে এর পক্ষে কোনো প্রমাণ দেয়নি।
ভেনেজুয়েলার অভিযোগ, এসব হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১০৫ জন নিহত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ ও লাতিন আমেরিকার একাধিক নেতা এসব ঘটনাকে “বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড” হিসেবে আখ্যা দিলেও যুক্তরাষ্ট্র বলছে, মাদক প্রবাহ ঠেকাতেই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
মনকাদা আরও বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইন ও যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব আইন- উভয়েরই লঙ্ঘন।
তিনি অভিযোগ করেন, গত সপ্তাহে ভেনেজুয়েলার তেলবাহী ট্যাংকারগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে নৌ অবরোধ আরোপ করেছে, তা কার্যত একটি “সামরিক অবরোধ” এবং একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রকে অবরুদ্ধ করার শামিল। “এটা মাদক বা নিরাপত্তার বিষয় নয়। এটা তেল, খনিজ ও ভূমি দখলের লড়াই,” বলেন মনকাদা।
ভেনেজুয়েলার পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র অন্তত দুটি ভেনেজুয়েলান তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে এবং প্রায় ৪০ লাখ ব্যারেল তেল দখল করেছে, যাকে তারা “সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে ডাকাতি” বলে বর্ণনা করে।
অন্যদিকে, জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক ওয়াল্টজ অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করে বলেন, লাতিন আমেরিকার মাদক কার্টেলগুলো যুক্তরাষ্ট্রের জন্য “সবচেয়ে বড় হুমকি” এবং ট্রাম্প প্রশাসন সেগুলো দমনে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ অব্যাহত রাখবে। তার দাবি, ভেনেজুয়েলার নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেলই প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকার ও কার্টেলগুলোর প্রধান অর্থের উৎস।
যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ভেনেজুয়েলার ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’সহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মাদক চক্রকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। তবে প্রেসিডেন্ট মাদুরো এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মাদক পাচারের অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র আসলে তার সরকার উৎখাতের চেষ্টা করছে।
নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত সতর্ক করে বলেন, ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ ভবিষ্যতে লাতিন আমেরিকার অন্য দেশগুলোর বিরুদ্ধেও শক্তি প্রয়োগের “নজির” হয়ে উঠতে পারে। চীনের রাষ্ট্রদূতও মন্তব্য করেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ ভেনেজুয়েলার সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা “গুরুতরভাবে লঙ্ঘন” করছে।
সূত্র- আলজাজিরা।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর