আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা চলছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দেশের চলমান রাজনৈতিক কর্মসূচি, নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা হতে পারে উল্লেখ করে দলটি বলেছে, নির্ধারিত তারিখেই ভোট আয়োজন নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে এমন কথা জানান দলটির মূখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী।
তিনি বলেন, সামনে একাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচি রয়েছে এবং হাদী হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়াও এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলেছি—যেহেতু ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে, সে তারিখেই যেন নির্বাচন সম্পন্ন করা হয় এবং এ বিষয়ে কমিশনের প্রস্তুতি কী, তা জানতে চেয়েছি।
পাটওয়ারী জানান, নির্বাচন কমিশন তাদের আশ্বস্ত করেছে যে তারা নির্বাচন আয়োজনের পূর্ণ সক্ষমতা রাখে। “ইসি আমাদের জানিয়েছে, তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে তারা বৈঠক করেছে এবং আগামী ১২ ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন আয়োজন করতে চায়। আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি—ঘোষিত তারিখের পর যেন কোনোভাবেই নির্বাচন পেছানো না হয়,” বলেন তিনি।
নির্বাচন বানচালের আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে এনসিপির এই নেতা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ ও ভারত বিভিন্ন উপায়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করছে। “সেই সুযোগ যেন কেউ না পায়, সে বিষয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে আমাদের উদ্বেগ জানিয়েছি,” বলেন তিনি।
প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন প্রসঙ্গে নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, কয়েকটি দেশ থেকে তারা অভিযোগ পেয়েছেন যে প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে নিবন্ধনে জটিলতা হচ্ছে। “আমরা অনুরোধ করেছি, পাঁচ থেকে ছয় দিন সময় বাড়ানো হলে আরও বেশি প্রবাসীকে নিবন্ধনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। কমিশন এ বিষয়ে ইতিবাচক আশ্বাস দিয়েছে,” জানান তিনি।
গণভোট নিয়ে পর্যাপ্ত প্রচারের ঘাটতির কথাও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, “এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে গণভোট বিষয়ে তেমন দৃশ্যমান প্রচার দেখা যায়নি। কমিশন জানিয়েছে, তথ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো এ বিষয়ে কাজ করছে।”
তিনি বলেন, “জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি সংস্কার বিষয়ক এই গণভোটও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘হ্যাঁ’ ভোটের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি টেকসই ও গণতান্ত্রিক পথে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। ইতোমধ্যে একটি দল ‘না’ ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। আমরা জনগণকে ‘হ্যাঁ’-এর পক্ষে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।”
নির্বাচনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পাটওয়ারী বলেন, “ইতোমধ্যে একজন প্রার্থী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। আমরা আমাদের প্রার্থীদের নির্বাচন কমিশনের বিধিমালা মেনে চলতে বলেছি এবং কমিশনকেও অনুরোধ করেছি যেন সব দলের প্রার্থীর জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।” তিনি জানান, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন নিরাপত্তা জোরদারের আশ্বাস দিয়েছে।
হাদী হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই ঘটনায় আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচন পেছালে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরার সুযোগ তৈরি হবে। আমরা সেই সুযোগ দিতে চাই না।”
এক প্রশ্নের জবাবে নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “আমরা শাপলা কলি প্রতীকেই নির্বাচন করবো। জাতীয় নাগরিক পার্টির কেউ অন্য কোনো প্রতীকে নির্বাচন করবে না। আমাদের রাজনৈতিক ও ইলেকটোরাল জোট থাকলেও দলীয় পরিচয় ও প্রতীক অক্ষুণ্ন থাকবে।”
তফসিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা কোনো তারিখ পরিবর্তনের দাবি করিনি। তবে মনোনয়নসহ কিছু ধাপে বাস্তবতা বিবেচনায় নমনীয়তা রাখা যায় কিনা—সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে ভাবতে বলেছি।”
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর