পুলিশ সদস্য কর্তৃক হাতুড়িপেটার শিকার হওয়া সাংবাদিক ফিরোজ মোস্তফা হাতে বিষের বোতল নিয়ে এবং শরীরে কফিনের কাপড় জড়িয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি করেছেন।
এসময় তিনি পুলিশ সদস্যদের কর্তৃক জুলুম, নির্যাতন ও ব্ল্যাকমেইলের হাত থেকে রক্ষার দাবি জানান। সেইসাথে তার ওপর হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় বরিশাল নগরের অশ্বিনী কুমার হলের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে ওই কর্মসূচি পালন করেন বরিশালের সাংবাদিক ফিরোজ মোস্তফা।
তিনি জানান, দীর্ঘ ৬ মাস ধরে কোতোয়ালি মডেল থানার এএসআই সাইদুল ইসলাম সাঈদ ও আমানতগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ক্লোজড হওয়া কনস্টেবল নাভিদ আনজুম কর্তৃক জুলুম, নির্যাতন ও ব্ল্যাকমেইলের শিকার হচ্ছেন তিনি। শুরুতে কনস্টেবল নাভিদ আনজুম কৌশলে তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনটি নিয়ে যায়, এরপর সেখান থেকে ব্যক্তিগত কিছু ছবি ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইল শুরু করে। তিনি (ফিরোজ মোস্তফা) বিষয়টি বুঝতে পেরে সতর্ক করতে গেলে নভেম্বর মাসে তার ওপর হামলা করা হয় এবং সে সময় নাভিদ ও তার সহযোগীরা তাকে মারধর করে, উলঙ্গ করে ভিডিও করে এবং তিনদিন আটকে রাখে।
ধারাবাহিকতায় সবশেষ গত ৮ তারিখে তারা আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান মালামাল নিয়ে যায়। তারা আমার নিজস্ব ও অফিসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস নিয়ে যায়। যা ফেরত পাওয়ার পাশাপাশি স্বাভাবিকভাবে কর্মে ফিরে যাওয়ার তাগিদে বিষয়গুলো নিয়ে শুরু থেকেই পুলিশ কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে গেলেও কোনো সুরাহা পাইনি।
ফিরোজ মোস্তফা বলেন, গত ১১ ডিসেম্বর মেডিক্যাল থেকে বাসায় আসলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ আমার মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ডিভাইস, পাসপোর্ট, এনআইডি কার্ড, রেডিওর লাইসেন্সসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল এখনও পাইনি।
আমার সোশ্যাল মিডিয়ার সব আইডি এএসআই সাঈদুল ইসলাম ব্যবহার করছে। এককথায় আমার সব ধরনের অধিকার তারা হরণ করেছে। আমি বিচারের জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি, তারা আশ্বাস দিয়ে বুলি আউড়িয়েছে। তারা বলেছে নাভিদ আনজুমকে ক্লোজড করেছে, কিন্তু ঘটনার পর নাভিদ আনজুম পোশাক পরে বিবির পুকুর পাড়ে এসে হুমকি দেয়- একজনকে মারতে নাকি ৫ হাজার টাকা খরচ করলেই হয়ে যায়।
তিনি বলেন, ওই পুলিশ সদস্য যদি আমার জীবনের মূল্য ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করে, তাহলে আমি তো ৯০ টাকায় বিষ কিনে এনে জীবনের মূল্য নির্ধারণ করলাম। আমি ওদের ব্ল্যাকমেইলের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছি, ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছি।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন-উল ইসলাম বলেন, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন কারণে এএসআই সাইদুল ইসলাম সাঈদ, কনস্টেবল নাভিদ আনজুমের সাথে সাংবাদিক ফিরোজ মোস্তফার আগে থেকে ভালো সম্পর্ক ছিল।
তবে পরবর্তীতে তা কোনো কারণে তিক্ততায় রূপ নেয়। সাংবাদিক ফিরোজ মোস্তফার অভিযোগ, তাদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু মালামাল ওই পুলিশ সদস্যের কাছে রয়েছে, সেগুলো তিনি ফেরত চাইছেন। আমরা চেষ্টা করছি সেগুলো তাকে ফিরিয়ে দিতে।
তিনি বলেন, আমরা ফিরোজ মোস্তফার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি, কেউ তার সাথে অন্যায় করে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের কর্মকর্তা ও সাংবাদিক নেতাদের হস্তক্ষেপে বেলা ১ টার দিকে কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন ফিরোজ মোস্তফা।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর