গুলিতে নিহত ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে ‘গিনিপিগ’ বলে মন্তব্য করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক নিলুফার চৌধুরী মনি। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে দেওয়া তার ওই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে নেটিজেনদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, টকশোতে আলোচনার সময় নিলুফার চৌধুরী মনি বলেন, ‘হাদিকে আমার কাছে এই মুহূর্তে একটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ গিনিপিগ ছাড়া আর কিছুই মনে হয় নাই। আপনারা যারা ডাক্তার এখানে অনেকেই আছেন, আপনারা তেলাপোকা কাটতেন, ব্যাঙ কাটতেন, আবার সেলাই করে ছেড়ে দিতেন, চলত। কিন্তু হাদি হয়তো সেলাই করে ছেড়ে দেওয়ার পর চলতে পারে নাই।’
এ সময় উপস্থাপকের প্রশ্নের জবাবে—‘আপনার মনে হয়েছে, কেউ তাকে নিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করার চেষ্টা করেছে?’—নিলুফার মনি বলেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই। এখানে বলার কোনো অপেক্ষাই রাখে না। যদি তাই না হতো, তাহলে হাদির দলের কয়টা লোক ছিল বা আছেন?’
তিনি আরও বলেন,‘তার দলটাকে আমি বলছি, এই যে এত এত মানুষ সারাদেশ থেকে এলো, এটার মধ্যে কিন্তু অনেক বড় একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন আছে। এই চিহ্নটা নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য চেষ্টা করছে।’
বিএনপি নেত্রীর এমন বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, এটি একজন নিহত আন্দোলনকর্মীর প্রতি চরম অবমাননাকর ও তুচ্ছতাচ্ছিল্যপূর্ণ বক্তব্য। কেউ কেউ তার আচরণকে ‘ধৃষ্টতাপূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান। আবার কেউ কেউ ইনকিলাব মঞ্চকে এ বিষয়ে কর্মসূচি বা আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ অভিযোগ করেন, এর আগেও শহীদ আবরার ফাহাদকে নিয়ে নিলুফার চৌধুরী মনি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন।
ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে পরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দিয়ে ব্যাখ্যা ও দুঃখ প্রকাশ করেন নিলুফার চৌধুরী মনি।
পোস্টে তিনি লেখেন,‘শহীদ শরিফ ওসমান হাদির বিষয়ে আমার বক্তব্যটি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আমি বলতে চেয়েছি, একদল লোক বিশেষ উদ্দেশ্যে তাকে ব্যবহার করেছে। তারা তাকে পরীক্ষাগারের প্রাণীর মতোই নিহত করেছে। আমার বক্তব্যটি আক্ষরিকভাবে গ্রহণ না করে এর মূল সুরটি বোঝার জন্য সবাইকে অনুরোধ করছি। এই ভুল বোঝাবুঝির জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। মহান আল্লাহ ওসমান বিন হাদিকে বেহেশত নসিব করুন—এই দোয়া করি।’
তবে তার এই ব্যাখ্যার পরও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এমন বক্তব্য একজন দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেত্রীর কাছ থেকে অনভিপ্রেত এবং এটি রাজনৈতিক শালীনতার পরিপন্থী।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর