জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-তে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্ভাব্য জোট বা আসন সমঝোতা নিয়ে গভীর মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের কাছে একই ইস্যুতে বিপরীতমুখী দুটি চিঠি পৌঁছেছে—একটিতে জোটের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন অন্তত ১৭০ জন কেন্দ্রীয় নেতা, অন্যটিতে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন ৩০ জন কেন্দ্রীয় সদস্য।
শনিবার জোটের পক্ষে দেওয়া চিঠিতে নেতারা আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের দূরদর্শী নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার ওপর আস্থা ব্যক্ত করেছেন। তারা উল্লেখ করেছেন, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাস্তবতার আলোকে জামায়াতের সঙ্গে জোট দলকে সময়োপযোগী, গ্রহণযোগ্য ও সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করবে। চিঠিতে বলা হয়েছে, “আপনার নেতৃত্বে এনসিপি একটি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তে উপনীত হবে, যা জনগণের আস্থা আরও দৃঢ় করবে।”
জোটপন্থি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন এনসিপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা, যাদের মধ্যে রয়েছেন আরিফুল ইসলাম আদীব, সারোয়ার তুষার, ড. আতিক মুজাহিদ, জাভেদ রাসীন, আরিফুর রহমান তুহিন, সাইফুল্লাহ হায়দার, আতাউল্লাহ, মাহমুদা মিতু, মাহিন সরকার, এহতেশাম হক, আশিকিন আলম, ডা. আবদুল আহাদ, সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া, আলী নাসের খান, আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, দিলশানা পারুল, মাহবুব আলম, হাফসা জাহান, ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, জুবায়রুল হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার নুরুল হুদা জুনায়েদ, কৈলাশ চন্দ্র রবিদাস প্রমুখ।
এর আগে একই দিনে ৩০ জন কেন্দ্রীয় সদস্য আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে একটি পৃথক চিঠি দেন, যেখানে তারা জামায়াতসহ ৮ দলীয় জোটের সঙ্গে সম্ভাব্য জোট বা আসন সমঝোতার তীব্র আপত্তি জানান। তাদের মতে, এনসিপির আদর্শ, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের দায়বদ্ধতা ও গণতান্ত্রিক নৈতিকতার সঙ্গে এই জোট সাংঘর্ষিক। চিঠিতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের ভূমিকা, বিভাজনমূলক কর্মকাণ্ড, গুপ্তচরবৃত্তি, এনসিপির নারী সদস্যদের চরিত্রহননের চেষ্টা এবং সামাজিক ফ্যাসিবাদ উত্থানের আশঙ্কার কথাও তুলে ধরা হয়।
চিঠি প্রকাশিত হওয়ার পর দলীয় ভেতরে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। জোটপক্ষে থাকা নেতারা পাল্টা স্বাক্ষর সংগ্রহ শুরু করেন, যার ফলে ১৭০ জনের বেশি নেতা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। সংখ্যাগতভাবে জোটপন্থিরা শক্ত অবস্থানে থাকলেও আদর্শিক আপত্তি ও বিতর্ক এখনও অচল নয়।
এনসিপির ভেতরের এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব এখন নাহিদ ইসলামের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। জোটপন্থির সংখ্যাগত প্রাধান্য থাকলেও আদর্শিক আপত্তি উপেক্ষা করা সহজ নয়। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটির রাজনৈতিক কৌশল ও নেতৃত্বের সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে এনসিপি জোটের পথে এগোবে কি না, নাকি আদর্শিক অবস্থানকে অগ্রাধিকার দিয়ে ভিন্ন পথ বেছে নেবে।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর