বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর নেই। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া।
১৯৪৫ সালে ভারতের জলপাইগুড়িতে (তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বৃহত্তর দিনাজপুর) জন্মগ্রহণ করেন বেগম খালেদা জিয়া। তার পৈতৃক নিবাস ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলায়। তার বাবা ইস্কান্দার মজুমদার ছিলেন একজন ব্যবসায়ী এবং মা তৈয়বা মজুমদার। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে দিনাজপুরের মুদিপাড়া গ্রামে।
১৯৬০ সালে দিনাজপুর সরকারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর তিনি দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে ভর্তি হন। কলেজে অধ্যয়নকালে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তার বিবাহ হয়। পরবর্তীতে পড়াশোনা আর এগিয়ে নিতে না পারায় রাষ্ট্রীয় নথিপত্রে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘স্বশিক্ষিত’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে খালেদা জিয়া ও তার দুই সন্তানকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বন্দি করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায়। ২ জুলাই থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি বন্দিজীবন কাটান। স্বাধীনতার পর সেনাপ্রধান ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী হিসেবে তিনি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সময়ের প্রত্যক্ষ সাক্ষী হন।
১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর খালেদা জিয়া সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও দলের নেতাকর্মীদের আহ্বানে তিনি বিএনপির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। আপসহীন রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে তিনি দ্রুতই ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তার নেতৃত্ব ছিল ঐতিহাসিক। ১৯৮৩ সালে সাতদলীয় জোট গঠন করে তিনি সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং খালেদা জিয়া প্রথমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
পরবর্তীতে তিনি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বার এবং ২০০১ সালে জোট সরকারের মাধ্যমে তৃতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী সরকারপ্রধান।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়া পাঁচটি সংসদ নির্বাচনে মোট ২৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবকটিতেই বিজয়ী হয়ে একটি অনন্য রেকর্ড গড়েন।
২০০৭ সালের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে বিভিন্ন মামলায় কারাবাস ও আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে তিনি মুক্তি পান। ২০১৮ সালে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে আবার কারাগারে যান। বর্তমানে তিনি নির্বাহী আদেশে জামিনে ছিলেন।
প্রায় চার দশকের বেশি সময় বিএনপির চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করা খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দেশের রাজনীতিতে এক যুগের অবসান হলো। তার মৃত্যুতে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও সাধারণ মানুষ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর