বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে তিনি ইন্তিকাল করেন।
২৩ নভেম্বর তাকে রাজধানীর বসুন্ধরায় অবস্থিত এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৭ নভেম্বর ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দিলে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং তাকে কেবিন থেকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি লিভার, কিডনি ও হৃদরোগসহ নানা জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছিলেন। পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, আর্থ্রাইটিস এবং বিভিন্ন সংক্রমণজনিত সমস্যাও ছিল।
বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে একাধিকবার গ্রেপ্তার ও কারাবরণ করলেও কখনো দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি। আপসহীন নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে তিনি দেশের রাজনীতিতে সুপরিচিত ছিলেন।
রাজনৈতিক জীবনে তাকে মোট পাঁচবার আটক করা হয়। এর মধ্যে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তিনবার, ২০০৭ সালে সেনাবাহিনী-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় একবার এবং আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একবার গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যেতে হয়।
১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পর এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে এবং ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর—এই তিন দফায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে এসব ক্ষেত্রে তাকে দীর্ঘদিন কারাভোগ করতে হয়নি।
২০০৭ সালে রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনী-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলে দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তাকে ক্যান্টনমেন্টের মইনুল হক রোডের বাসা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। জামিন আবেদন নাকচ হলে তাকে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ সাব জেলে রাখা হয়।
এই কারাবাসের সময় তিনি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা—উভয় উৎসবই কারাগারে পালন করেন। ঈদের দিনে পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সে সময় তার দুই পুত্র তারেক রহমান ও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোও কারাবন্দি ছিলেন।
২০০৮ সালের জানুয়ারিতে তার মায়ের মৃত্যুর পর ছয় ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়ে তিনি মায়ের মরদেহ দেখার সুযোগ পান। প্রায় ৩৭২ দিন কারাভোগের পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্তি লাভ করেন।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাকে মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। প্রথমে নাজিমুদ্দিন রোড কারাগারে এবং পরে শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে রাখা হয়। এ সময় তিনি প্রায় দুই বছরের বেশি কার্যত কারাবন্দি অবস্থায় ছিলেন।
২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার শর্তসাপেক্ষে তার সাজা স্থগিত করে বাসায় চিকিৎসার অনুমতি দেয়, যা কার্যত গৃহবন্দিত্বের সমতুল্য ছিল। ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত তিনি রাজনৈতিকভাবে বন্দি অবস্থায় ছিলেন।
পরবর্তীতে জুলাই বিপ্লবের পর রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশে তার দণ্ড মওকুফ করা হয়। একই বছরের ২৭ নভেম্বর দুর্নীতি মামলাগুলো থেকে তিনি খালাস পান।দীর্ঘ কারাজীবন ও রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক অনন্য ও গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রেখে গেলেন।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর