ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-১ আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থী ও দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করেছেন। হলফনামা অনুযায়ী, স্বামী-স্ত্রী যৌথভাবে তার মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা।
ঠাকুরগাঁও জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জন্ম ১ আগস্ট ১৯৪৮ সালে। মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় তার বয়স ৭৭ বছর। তিনি এমএ ডিগ্রিধারী এবং পেশায় রাজনীতিবিদ।
স্থাবর সম্পদ
হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে, তার নামে পাঁচ একর কৃষিজমি রয়েছে, যার অর্জনকালীন মূল্য ৬০ হাজার টাকা। তার স্ত্রীর নামে রয়েছে ৭০ শতাংশ ও ২.১৪ একর জমি, যার মূল্য ৫১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত দোতলা বাড়ির অংশের মূল্য ধরা হয়েছে ১০ লাখ টাকা।
অকৃষি জমির ক্ষেত্রে ঠাকুরগাঁওয়ে স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে ১২ শতাংশ জমি রয়েছে, যার মূল্য ৩৯ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এছাড়া ঢাকার পূর্বাচলে তার মালিকানাধীন পাঁচ কাঠা জমির মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে ৮৫ লাখ ৪ হাজার টাকা।
ভবন ও আবাসিক সম্পদের মধ্যে ঢাকায় অবস্থিত ১ হাজার ৯৫০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট (মূল্য ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা), চার শতাংশ জমি (৫ লাখ টাকা) এবং একটি মার্কেট শেয়ারের মূল্য ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৮১৪ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যান্য স্থাবর সম্পদ মিলিয়ে স্বামী-স্ত্রীর নামে মোট মূল্য ধরা হয়েছে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৬৫ হাজার ৮১৪ টাকা।
অস্থাবর সম্পদ
ব্যাংক হিসাবে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট জমা রয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৫২ টাকা। স্বামী-স্ত্রীর যৌথ হিসাবে বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছে ১১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৪ টাকা।
হলফনামা অনুযায়ী, তার নিজের নগদ অর্থ রয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ ৫৮ হাজার ১১৬ টাকা এবং তার স্ত্রীর রয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৯৩০ টাকা।
বিনিয়োগ ও সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে তিনি ‘দি মির্জাস প্রাইভেট লিমিটেড’-এর ১ হাজার ৪২৮টি শেয়ারের মালিক, যার মূল্য ১ লাখ ৪২ হাজার ৮০০ টাকা। তার স্ত্রীর নামে বিভিন্ন সঞ্চয়পত্র ও মেয়াদি আমানতে রয়েছে ৪৫ লাখ ১১ হাজার ৭৫০ টাকা।
এছাড়া তার মালিকানায় রয়েছে দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি, প্রায় ৩০ ভরি স্বর্ণালংকার, ইলেকট্রনিক সামগ্রী (টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার) ও আসবাবপত্র। অস্থাবর সম্পদের অর্জনকালীন মোট মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে ২ কোটি ৫৫ লাখ ৫ হাজার ৭৬৮ টাকা ৭৩ পয়সা। উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত একটি দুইনলা বন্দুকের তথ্যও হলফনামায় রয়েছে।
আয় ও আইনি তথ্য
হলফনামা অনুযায়ী, কৃষি, ব্যবসা, পেশাগত সম্মানী ও অন্যান্য উৎস মিলিয়ে তার মোট বার্ষিক আয় ১১ লাখ ৮৩ হাজার ১৩৩ টাকা।
আইনি তথ্য অংশে তিনি উল্লেখ করেন, তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মোট ৫০টি মামলা দায়ের হয়েছিল। তবে এসব মামলার অধিকাংশই স্থগিত, প্রত্যাহার বা চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে এবং বর্তমানে কোনো মামলাই তার সংসদ সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত বাধা নয়।
হলফনামার সাংবিধানিক ঘোষণায় তিনি জানান, তিনি দ্বৈত নাগরিক নন এবং সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ অনুযায়ী জাতীয় সংসদের সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে তার কোনো অযোগ্যতা নেই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রকাশিত এই হলফনামা ঠাকুরগাঁও-১ আসনের নির্বাচনী রাজনীতিতে আলোচনার নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং ভোটারদের জন্য প্রার্থীর আর্থিক অবস্থান সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা তৈরি করেছে।
সর্বশেষ খবর