এক নজরে ‘আহসান মঞ্জিল’

প্রকাশিত: ০৩ আগষ্ট ২০১৭, ০৭:০৯ পিএম

ঢাকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নিদর্শন আহসান মঞ্জিল। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে পুরান ঢাকার ইসলামপুর এলাকায় অবস্থিত। এ নবাব বাড়িটি ব্রিটিশ আমলে ঢাকার নবাব পরিবারের বাসভবন ও কাচারি বা রংমহল ছিল। আহসান মঞ্জিলে ঢাকা মহানগরীর উন্নয়ন ও রাজনৈতিক বহু ঘটনাসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্মৃতি বিজরিত রয়েছে।

অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমদিকে ফরিদপুর-বরিশালের জমিদার শেখ ইনায়েত উল্লাহ ঢাকার সদরঘাটে আসেন সেখানে তিনি একটি বাগান বাড়ি বা রঙ্গমহল তৈরি করেন। পরবর্তীকালে তাঁর পুত্র বাগান বাড়ি বা রঙ্গমহলটি এক ফরাসি বণিকের কাছে বিক্রি করে দেন। ফরাসিরা বাণিজ্য কুটির হিসেবে এটি ব্যবহার করতেন। ১৮৩০ সালে বেগমবাজারে বসবাসকারী নওয়াব আবদুল গণির পিতা খাজা আলীমুল্লাহ এই কুঠিটি ক্রয় করেন। পরবর্তিতে সেটি সংস্কার করে বসবাস শুরু করেন। নওয়াব আবদুল গণি ১৮৬৯ সালে প্রাসাদটি নতুন করে নির্মাণ করেন। ভবনটি নতুন করে নির্মানের ফলে পুরনো সেই ভবনের কোনো অস্তিত্ব বর্তমানে নেই। নতুন ভবন নির্মাণের পর তিনি তাঁর প্রিয় পুত্র খাজা আহসান উল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করেন আহসান মঞ্জিল।

&dquote;&dquote;

অতঃপর ১৮৮৮ সালের ৭ই এপ্রিল প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে আহসান মঞ্জিলের অন্দরমহলের বেশ কিছু অংশ ভেঙ্গে যায়, এই ঘূর্ণিঝড়ে আহসান মঞ্জিলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পরবর্তীতে আহসান মঞ্জিলকে পুননির্মাণ করা হয় এবং বর্তমানে যে সু-উচ্চ গম্বুজটি দেখা যায় এই গম্বুজটি যুক্ত করা হয়। তৎকালীন সময়ে আহসান মঞ্জিলের মতো এতো সু-উচ্চ ভবন ঢাকায় ছিল না। তাই তখন বহুদূর থেকেও আহসান মঞ্জিলের জাঁকালো গম্বুজটি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতো। বড় গম্বুজসহ যে অংশটি রয়েছে তাকে বলা হয় প্রাসাদ ভবন, যেটা আগে রঙমহল ছিল আর এর পাশেই আরেকটা অন্দর মহল আছে, যা “জানানা” নামেও পরিচিত ছিল। গম্বুজওয়ালা প্রাসাদ ভবনটি দু’টি সুষম ভাগে ভাগ করা। মাঝখানে গোলাকার কক্ষের উপরে সুউচ্চ অষ্ট-কোণ গম্বুজটি উত্তোলিত। এর পূর্বাংশে দোতলায় বৈঠকখানা, প্লেয়িং কার্ড রুম, গ্রন্থাগার ও তিনটি মেহমান কক্ষ এবং পশ্চিমাংশে একটি নাচঘর, হিন্দুস্থানি কক্ষ এবং কয়েকটি আবাসিক কক্ষ রয়েছে। নিচ তলায় পূর্বাংশে আছে ডাইনিং হল এবং পশ্চিমাংশে দরবার ঘর, বিলিয়ার্ড কক্ষ এবং কোষাগার।আহসান মঞ্জিলের উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে দোতলা থেকে সরাসরি প্রসাদের আঙিনায় নামার প্রশস্ত সিঁড়ি যা বুড়িগঙ্গার দিকে অবস্থিত। নিচতলায় পূর্বাংশে আছে ডাইনিং হল, পশ্চিমাংশে বিলিয়ার্ড কক্ষ, দরবার হল ও কোষাগার। প্রাসাদ ভবনের উভয় তলায় উত্তর ও দক্ষিণে রয়েছে সুপ্রশস্ত বারান্দা। নবাবরা বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে এবং অন্যান্য কাজে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে ঢাকার নওয়াবগণ স্থানীয় মহাজন এবং ব্রিটিশ সরকারের কাছে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। যার কারণে নবাব সলিমুল্লাহ ১৯০৭ সালে জমিদারী পরিচালনার ভার কোর্ট অব ওয়ার্ডস এর হাতে তুলে দিতে বাধ্য হন।

&dquote;&dquote;

১৯১৫ সালে নওয়াব সলিমূল্লাহ মারা যাওয়ার পর তাঁর স্বীয় পুত্র হাবিবুল্লাহ তাঁর পিতার স্থলাভিষিক্ত হলে ঋণের দায়ে একের পর এক জমিদারী পরগনাসমূহ হারাতে থাকেন। তাছাড়া অন্যান্য সন্তানেরা যার যার মত সম্পত্তি নিয়ে আলাদা হয়ে যান। নিজেদের মধ্যে অন্তর্কোন্দল এর ফলে ধীরে ধীরে অবহেলায় ভবনটি পরিত্যক্ত হতে থাকে।

জমিদারি উচ্ছেদ আইনে ১৯৫২ সালে ঢাকার নবাব এস্টেট সরকার অধিগ্রহণ করে। নবাব পরিবারের সম্পত্তির মধ্যে অধিগ্রহণ বহির্ভূত ছিল আহসান মঞ্জিল ও তৎসংলগ্ন আঙিনা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর নবাব পরিবারের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা বিদেশে চলে যায়।

এ দেশে যাঁরা ছিলেন তাঁরা বিশাল এই প্রাসাদ ভবনের রক্ষণাবেক্ষণে সক্ষম ছিলেন না। ফলে এটি ক্রমাগত ধ্বংসের দিকে যেতে থাকে। ১৯৭৪ সালে নবাব পরিবারের উত্তরসূরীরা আহসান মঞ্জিল নিলামে বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভবনটির রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুধাবন করে, ১৯৭৪ সালের ২ নভেম্বর, প্রাসাদ ভবনটি নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেন। এরপর সংস্কার করে এখানে জাদুঘর ও পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনের নির্দেশ দেন। ১৯৮৫ সালের ৩ নভেম্বর আহসান মঞ্জিল প্রাসাদ ও তৎসংলগ্ন চত্বর সরকার অধিগ্রহণ করে সেখানে জাদুঘর স্থাপনের কাজ শুরু করে। ১৯৯২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বেগম খালেদা জিয়া আহসান মঞ্জিল জাদুঘরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

&dquote;&dquote;

আহসান মঞ্জিলের ৩১টি কক্ষের মধ্যে ২৩টি কক্ষ বিভিন্ন প্রর্দশনীর জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে। নয়টি কক্ষ লন্ডনের ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে প্রাপ্ত এবং ফ্রিৎজ কাপ কর্তৃক ১৯০৪ সালে তোলা ছবির সাথে মিলিয়ে সাজানো হয়েছে। আহসান মঞ্জিলের তোষাখানা ও ক্রোকারিজ কক্ষে থাকা তৈজসপত্র এবং নওয়াব এস্টেটের পুরনো অফিস এডওয়ার্ড হাউস থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষণ করে প্রদর্শন করা হয়েছে আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে।

আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য আছে নওয়াব আমলের ডাইনিং রুম, নওয়াবদের ব্যবহৃত বড় বড় আয়না, আলমারি, সিন্দুক, কাচ ও চিনামাটির থালাবাসন, নওয়াবদের অতি বিশ্বস্ত হাতির মাথার কঙ্কাল গজদন্তসহ, নওয়াব আমলের বিভিন্ন ধরনের অলংকৃত রুপা ও ক্রিস্টালের তৈরি চেয়ার-টেবিল, বিভিন্ন ধরনের তৈলচিত্র, ফুলদানি, আতরদানি, পানদান, নবাবদের ড্রয়িং রুম, নাচঘর, সোনা ও রুপার তারজালিকাজ আহসান মঞ্জিলের মডেল। আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে সংগৃহীত নিদর্শন সংখ্যা মোট চার হাজার ৭৭টি।
নবাবরা তাদের জীবনে কোথায় কি তৈরী করেছেন অনুদান দিয়েছেন তার ইতিহাস জানা যায় আহসান মঞ্জিলের যাদুঘর থেকে।

&dquote;&dquote;

এ নবাব বাড়িতে ঢুকতে টিকিট কাটতে হয় প্রাপ্ত বয়স্ক বাংলাদেশি দর্শকের জন্য প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা, বাংলাদেশি শিশু দর্শক পাঁচ টাকা আর বিদেশি দর্শকের জন্য ৭৫ টাকা। প্রতিবন্ধীদের কোনো টিকিট ক্রয় করতে হয় না। আগে থেকে আবেদন করলে ছাত্রছাত্রীদের বিনা মূল্যে জাদুঘর দেখতে দেওয়া হয়।

আহসান মঞ্জিল গ্রীষ্মকালে শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট এবং শীতকালে সকাল ৯টা ৩০মিনিট থেকে বিকেল ৪টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত খোলা থাকে, সব ঋতুতে শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। বৃহস্পতিবার জাদুঘর সাপ্তাহিক ছুটি থাকে। এ ছাড়া সব সরকারি ছুটির দিনেও জাদুঘর বন্ধ থাকে।
 

বিডি২৪লাইভ/এএইচএস/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: