পায়ে জুতা না থাকায় শিক্ষকের বকুনি : অভিমানে স্কুল ছাত্রীর কাণ্ড

প্রকাশিত: ০৬ আগষ্ট ২০১৭, ০৭:০৫ পিএম

পায়ে জুতা না থাকায় শিক্ষকের বকুনি ও ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ায় অভিমানে আত্মহত্যা করেছে সিংড়া দমদমা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী রিয়া খাতুন (১২)।

রোববার দুপুরে পৌর শহরের চক সিংড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

রিয়া চক সিংড়া এলাকার গোলাম রাব্বানীর মেয়ে।

এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল আহসান নিহত ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে যান এবং ঘটনা তদন্তের প্রতিশ্রুতি দেন। পরে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমিনুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে তদন্তের নির্দেশ দেন।

পুলিশ ও পরিবার সুত্রে জানা যায়, রোবাবার সকাল ১০ টার সময় স্কুলে এ্যাসেম্বলী শুরু হওয়ার আগে শিক্ষকরা প্রতিদিনের মত ছাত্রীদের পোশাক, জুতা ও শরীর পরিস্কার আছে কিনা তা যাচাই করছিলেন। এসময় রিয়া সহ কয়েকজন ছাত্রীর স্কুল ড্রেসের সাথে পায়ে জুতা না থাকায় শিক্ষকরা বকাবকি করে লাইন থেকে বের করে দেন এবং তাদের ক্লাশে যেতে বারন করেন।

পরে ওই ছাত্রীদের কেউ কেউ বাড়ি গিয়ে জুতা পড়ে পুনরায় স্কুলে আসে। কিন্তু রিয়া শিক্ষকের বকুনিতে অপমান বোধ করে এবং ক্ষোভ ও অভিমান করে স্কুলে থেকে বাড়িতে যায় এবং বাবা-মাকে বিষয়টি খুলে বলে। এসময় বাবা-মাও স্কুলের নিয়ম না মানার জন্য বকাবকি করেন। এতে অভিমান করে স্কুল ছাত্রী রিয়া ঘরের দরজা বন্ধ করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলিয়ে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।

রিয়া খাতুনের সহপাঠি মাহফুজা খাতুন জানায়, প্রতিদিনের মত সে আর রিয়া এক সঙ্গে স্কুলে যায়। জুতা পড়ে না যাওয়ায় রিয়া সহ তাদের ক্লাসের চারজনকে ক্লাস থেকে বের হয়ে যেতে বলেন এবং সোমবার জুতা পড়ে স্কুলে আসতে বলেন শিক্ষক। এসময় রিয়া কান্নাকাটি করতে করতে বাড়ি চলে যায়।

রিয়ার বাবা গোলাম রাব্বানী জানান, তার মেয়ে কান্নাকাটি করতে করতে সাড়ে ১০ টার দিকে বাড়িতে আসে। কারণ জানতে চাইলে সে বলে জুতা পড়ে না যাওয়ায় আবু হানিফ নামে এক শিক্ষক তাকে ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছেন। তার মেয়ে কান্না করতে করতে স্কুলের পোশাক খোলার জন্য ঘরের মধ্যে গিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। অপমান সইতে না পেরে তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।

সিংড়া দমদমা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক বিলকিস আক্তার বানু বলেন, বারবার নিয়ম না মানায় অনেক শিক্ষার্থীকে ক্লাসে ঢুকতে বারণ করা হয়েছিলো। রিয়াকে একা এসব বলা হয়নি। এছাড়া অন্য শিক্ষার্থীরা বাড়িতে না গিয়ে ক্লাসে গিয়েছে। কিন্তু রিয়া ক্লাশে না গিয়ে বাড়িতে এ ধরনের ঘটনা ঘটাবে তা ভাবতেও পারছেন না তারা। এই ঘটনায় তারা মর্মাহত বলে জানান তিনি।

সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ছাত্রীর পরিবারের দাবী, স্কুল ড্রেসের সাথে পায়ে জুতা না থাকায় শিক্ষকরা স্কুল থেকে তাকে বের করে দেয়ায় অভিমানে আত্মহত্যা করেছে সে। খবর পেয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল আহসান জানান, ঘটনাটি খুবইি মর্মান্তিক। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বিডি২৪লাইভ/এনআর/এআইআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: