সাত খুন মামলায় কি হবে মন্ত্রীর জামাতার?

প্রকাশিত: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৬:২২ পিএম

চলতি বছরের শুরুতেই নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুন মামলার রায় দিয়েছেন আদালত। রায়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা (পরে বহিষ্কৃত) কাউন্সিলর নুর হোসেন এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা সাবেক র‍্যাব অধিনায়ক তারেক সাঈদসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। পরে হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী ঠেকেছে ১৫ জনে। এখন মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তদের ফাঁসি কার্যকরের জন্যই শুধু অপেক্ষা।

ঘটনার শুরু
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন সরকার ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম। এরপর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছয়টি লাশ। পরদিন হদিস মেলে আরেকটি লাশ। পুরো দেশেই তখন ঘটনাটি আলোচিত হয়ে ওঠে।

মামলা দায়ের
ঘটনার এক দিন পর নিহত হওয়া কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে নূর হোসেনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন। আইনজীবী চন্দন সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় ১১মে ফতুল্লা থানায় আরেকটি মামলা হয়। বাদী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল। পরে দুটি মামলা একসঙ্গে তদন্ত করে পুলিশ।

র‍্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ
একসঙ্গে সাতজনকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা ও গুমের নৃশংসতায় শিউরে ওঠে মানুষ। টক অব দ্যা কান্ট্রিতে পরিণত হয়। ঘটনার রেশ না কাটতেই খবর বের হয়, হত্যায় র‍্যাব-১১-এর অধিনায়ক তারেক সাঈদসহ তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জড়িত। এ খবর সারা দেশের মানুষকে হতবাক ও উদ্বিগ্ন করে। কোটি টাকার বিনিময়ে সাতজনকে অপহরণের পর হত্যার অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। র‌্যাবের তিন কর্মকর্তাকে নিজস্ব বাহিনীতে ফেরত নিয়ে চাকরিচ্যুত করা হয়। এরপর র‌্যাবের এই তিন কর্মকর্তাকে আটক করে কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না এবং তাঁদের বিরুদ্ধে কেন মামলা নেওয়া হবে না এই বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির তৎকালীন সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন, আইনজীবী মাহবুবুর রহমান ইসমাইল ও চন্দন সরকারের মেয়ের জামাতা বিজয় কুমার পাল।

হাইকোর্টে রিটের পক্ষে শুনানি করেন বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। ২০১৪ সালের ১১মে মামলার শুনানি শেষে হাইকোর্ট চাকরিচ্যুত র‍্যাবের তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করার আদেশ দেন। ছয় দিন পর ২০১৪ সালের ১৬মে ঢাকার সেনানিবাস থেকে চাকরিচ্যুত লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ ও মেজর আরিফ হোসেন এবং পরদিন লে. কমান্ডার এম এম রানাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁরা পরে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।

তিন কর্মকর্তার জবানবন্দিতে র‌্যাব-১১-এর অন্যান্য সদস্য ও কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার বিষয় উঠে এলে পর্যায়ক্রমে তাঁদেরও গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর অন্য র‍্যাব সদস্যরাও আদালতে জবানবন্দি দেন। মোট ২১জন আসামি দায় স্বীকার করেন এবং হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সাক্ষী হিসেবে র‌্যাবের ১৪ জনসহ ২০ জন আদালতে জবানবন্দি দেন। আদালতে সাক্ষ্য দেন ১০৬ জন সাক্ষী।

নূর হোসেন অধ্যায়
ঘটনার দুই সপ্তাহ পর ভারতে পালিয়ে যান সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন। ওই বছরের ১৪ জুন ভারতের কলকাতা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন নূর হোসেন। ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর তাঁকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায় ভারত সরকার।

মামলার রায়
২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারি আলোচিত ৭ খুন মামলার রায়ে কাউন্সিলর নুর হোসেন এবং সাবেক র‍্যাব অধিনায়ক তারেক সাঈদসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের প্রায় তিন বছর পর দেয়া রায়ে ৩৫ জন আসামীর বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয় নারায়নগঞ্জের একটি আদালত।

হাইকোর্টের রায়
চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলায় ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর হাইকোর্ট রায় দেয় চলতি বছরের ২২ আগস্ট। রায়ে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন আদালত। ১১ জনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বিভিন্ন মেয়াদে সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের সাজাও বহাল রাখেন আদালত। বহাল রাখা মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামীদের মধ্যে নুর হোসেন ও তারেক সাঈদও রয়েছেন।

 

বিডি২৪লাইভ/এমআই

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: